অতি-সাবধানী
সেগুলো তোর জীবনে যাতে না হয়
আমি পাহারা দেব, সাবধান করে দেব তোকে প্রতিপদে।
...
অমুক-তমুক
আমার-
অমুকের মত চশমা
তমুকের মত জুতো
অমুকের মত জামা
...
অবেলায়
আজ কি এমন হল, মাঝ রাস্তায় সব ছেড়ে দাঁড়িয়ে?
তোমায় সেদিনও বুঝিনি
...
অপচয়
একহাত পাতলে মা-ঠাকুমা বলতেন,
"এক হাত না, দু হাত পাততে হয়"
...
অ্যালার্ম
-কি কথা?
-জানি না
-তবে?
-তবু কথা বলব
-বেশ।
...
অভিনয়
মহড়ার সাথেই ঘটে যাচ্ছে মূল অভিনয়।
কোনোটার জন্য বাহবা
তো কোনোটার জন্য অনুশোচনা।
...
অধিকার
পূজোর দিন কয়েক বাকি।
মা ডাকলেন শোয়ার ঘরে
বললেন, তোমার যে ঘনিষ্ঠ বন্ধু
তার বাবার অসুখ,
তার জামা হয়েছে একটা, এবার পূজোয়।
তোমার হয়েছে চারটে।
...
অধরা
নিজের সাথে লড়াই করেছি
সময়ের সাথে লড়াই করেছি
অন্তঃবাসী
হৃদয় ঈশ্বরের চেয়েও রহস্যময়
তবু সেই হৃদয়েই ফিরে আসি
সেই একমাত্র যে ঈশ্বরের মতই শুদ্ধ
অনাদি অনন্ত অন্তঃবাসী
অহংকার
খানিকটা বিধাতার সৃষ্টি
অপেক্ষা
আমি ফিরতে পারলাম না
অন্তর্লীন
এত ব্যাখ্যা করছ কেন?
শুতে যাও। আমি জেগে আছি।
ভয় অন্তর্দৃষ্টির অন্তরে জাগা বিশ্বাসকে কাড়তে পারে না
তুমি সে বিশ্বাসে আছো।
মিথ্যার সাধ্য কি সে বেদীতলে দাঁড়ায়!
মিথ্যার কল্পনাও ভস্ম হয়ে যায় সে শুদ্ধাগ্নিতে
তোমায় আমি ব্যাখ্যায় পাইনি
পেয়েছি বিশ্বাসের অন্তরে জাগা অতন্দ্র আলোতে
তুমি এসো। আমি হাত পেতে আছি -
আর কিছু না, শুধু তোমার হাতেরই জন্য।
অনুকম্পা
অপেক্ষায়
অরণ্য
অবসেসান
নতুন বাথরুম। নতুন টাইলস। নতুন ফ্ল্যাশ, কমোড। গরম জল, ঠাণ্ডা জল আলাদা আলাদা কল। নতুন দামী শাওয়ার।
রোজ দেখতে ভাল লাগে। চাকরীর পর খুব ইচ্ছা ছিল এরকম একটা বাথরুম হবে রণিতের। হলও। নিম্ন মধ্যবিত্তের এই বড় সাধ, তার এটাই বারবার মনে হয়।
অনাসক্ত
ফুলের সুগন্ধ বাতাসে ভর করে এলো
দুহাত বাড়ালো
বলল, আমায় নাও
অজগর
অন্ধকারের রাজা
অনুরোধ
পথে নেমেছি
হাতের মুঠোয় নিয়েছি কয়েকটা বীজ
ছড়াতে ছড়াতে যাচ্ছি রাস্তার দু'ধারে
ওরা গাছ হবে - আশা রাখি
যে তুমি আসছ আমার পরে
তোমার জন্য রাখলাম ক'টা গাছ
ওরা ছায়া দেবে তোমায়
অসত্য
যে আগুন জ্বালিনি
সে আগুনে পুড়ল ঘরদোর
যে ঝড়কে ডাকিনি
সে ঝড় উড়িয়ে নিল এক উঠান শিউলি
যে কথা বলিনি
সে কথা পাঁচকান হেঁটে এসে বসল বিছানায়
যে স্বপ্ন দেখিনি
সেই স্বপ্ন ঘুমের আকাশে আনল ধূমকেতু
এ সবের পরেও
আমি নিষ্ঠুরের মত পিঁপড়ের গর্তে জল ঢেলেছি
ওদের গোপন দংশনকে উপেক্ষা করে
যে আমি ওদের ডাকিনি
তাদেরই ভাসিয়ে ছেড়েছি
অজন্তা
অভিমান
অনেক ধূলোবালি এক জায়গায় জড়ো করলে,
নিষ্ঠা নিয়ে।
ভাবলে তার মাথায় হবে
একটা কৃষ্ণচূড়া গাছ
হল না
ধূলোবালি মাখা সারা গায়ে
নিজের হাতের আঁকিবুঁকি কাটা আস্তরণ
ভেবেছিলে ওগুলো হবে আলপনা,
কল্কা কাটা নকসা
হল না
অভিসার
সমুদ্রস্নান সেরে সে তীরে বসেছিল। ভেজা কাপড় শুকিয়ে নিচ্ছিল ভাগাভাগি করে, কিছুটা রোদ, কিছুটা হাওয়া। তার চোখের মণিতে যে সাগরের ঢেউ আছাড় খাচ্ছিল, সে সাগরের সাথে তার বুকের সাগরের কোনো মিল নেই, আবার আছেও। তার মনের মধ্যের সমুদ্র বাইরের সমুদ্রের সাথে কথা বলছিল। ভিতরের সমুদ্র কথা করল শুরু।
-তোর এত ঢেউ? কে যোগায়?
-বাতাস, তোর জল এত স্থির কেন?
অত সহজ কি
মানুষটার মৃত্যু/অন্তর্ধান রহস্য যতটা এঁদের ভাবিয়ে তুলেছে, উৎসাহিত করেছে, তার সিকির সিকি ভাগ যদি মানুষটার জীবনের ওপর থাকত! তাঁর আদর্শের প্রতি থাকত!
সমস্যাটা বুঝি। কাদা হাতে কাদা ঘাঁটা যত সহজ, সাদা হাত ধরা অত সহজ কি?
অচল স্রোত
অমিল
তোমার সাথে আমার
না মেলে পূবে, না পশ্চিমে
না মেলে ডাঁয়ে, না বাঁয়ে
তবু কিসের এত টান ?
যে এক চাহনিতেই, কলিজায়
চোরাস্রোতে আসে বান?!
অবসর
সেদিন সকালে ঝুল বারান্দায় বসে আছি। মনটা পদের না। কেন পদের না, বুঝছি না, বোঝার চেষ্টাও করছি না। পাত্তা দিলে পেয়ে বসে। খুব আদুরে বেড়ালের মত মন এক্কেবারে পছন্দ না আমার। সে যা হোক সামনের বাড়ির বাঁধানো উঠানে কটা ঝরা পাতা এলোমেলো বাতাসে উড়ছে, দেখছি, বেশ লাগছে।
অপেক্ষা
ছেলেটা অঙ্কের খাতার শেষ পাতা খুঁজে চলেছে
সকাল থেকে
অসময়ে
বাতাস আগুন জ্বালে না
দু'হাত আলোর মধ্যে ডুবিয়ে রাখলে
আলো হাতে ধরা দেয় না
চোখদুটোতে কালো কাজল
চোখের জলে ধুয়েও ধুলে না
ভিজে পায়ে ধুলো পথে হেঁটে
পথের ধুলো আনলে ঘরে
সারাটা দিন আগলটাকে
আঁচলে বেঁধে বেড়ালে
সরালেও না, রাখলেও না
ভোরের আকাশে শুকতারা,
সন্ধ্যাতারাকে চিনবে বলে
সারাটা দিন সূর্য্যকে গায়ে মাখলে না
অবিশ্বাসী
মড়া হাড়ে মালা পরাতে গেলে
মালার ফুলগুলো আর্তনাদ করে ওঠে-
আমরা মরিনি...মরিনি..মরিনি..
তবু পরাতেই হয় মালা
জোর করে মড়ার হাড়ে
সতেজ ফুলের মালা
এটাই তো কৃষ্টি
সতেজকে মারো
মৃতকে করো হিমালয়
যাতে কেউ চড়তে না পারে
উঠতে গেলে, নামাও পা-ধরে
"যত্তসব অবিশ্বাসীর দল"!
অপরিচিত
কিছু অনুভবের নাম দিও না
ঠিকানা চেয়ো না
জানতে চেয়ো না কি রঙ তার গালে
পড়তে চেয়ো না তার চোখের অবুঝ ভাষা
শুধু বুক পেতে দাও নরম ঘাসের মত
সে ফিরুক হেঁটে চলে
বসুক নির্জনে,
একটা বকুলগাছ লাগিও না হয়
মাঠের একটা কোণে, ওর জন্য।
অবসাদ
অবসাদ আছে
যায়, আবার ফিরে আসে।
কারণেই যে আসে - তা না,
অকারণেও আসে।
ওর উদাস দুটো চোখে চোখ রাখি।
জীবনকে দেখার এও তো দৃষ্টিকোণ -
অবসন্নতা।
অবশেষে
অবশেষে রোদ উঠল
সূর্যকিরণ ভরা মাঠের জলে
সাঁতরে এসে ঘাসকে ছুঁলো
অসঙ্গ
হৃদয়ে নিঃসঙ্গ হও
কিছুক্ষণের জন্য অন্তত।
তার সঙ্গ পাবে
যে অনেক গভীরে থাকে,
অসঙ্গ।
অবিশ্বাসী
খানিক তাকাও অবিশ্বাসী।
সন্ধ্যের পর রাস্তার ধূলো পথে
কে যায়?
গভীর রাতে
ঝিঁঝিঁর ডাকে
পাতার অঙ্গুলিহেলনে
জোনাকির আলোয়
নদীর বাঁধানো ঘাটে জল আছড়ানো শব্দে
কোনো বাচ্চার আর্তনাদে
চমকে উঠেছো কখনো?