হাসিতে রঙ করা মুখগুলোর পিছনে ঘন জঙ্গলের অন্ধকার।
অন্ধকারগুলোর গন্ধ খুব চেনা। ফিসফিস শব্দ আসে। স্পষ্ট না। মাঝে মাঝে দীর্ঘশ্বাস। কোনো রাতজাগা পাখির ডানা ঝাপটানোর শব্দ। ফোঁপানো কান্না। চাপা আর্তনাদ। এদিক ওদিক থেকে উঁকি দেয় তীক্ষ্ম রক্তচক্ষু, তাতে খোদাই করা প্রতিহিংসার নেশা।
এই ঘন জঙ্গল দাপিয়ে বেড়ায় এক রাজা। অন্ধকারের রাজা। সে নিয়ম মানে না, শাসন মানে না। সভ্যতার উপর তার তীব্র ঘৃণা। সংযম তার কাছে ভণ্ডামী।
তার সাথে দেখা হয় চলতে ফিরতে। আক্রোশের সাথে সে রাজপথে নাবার তোরণ খুলে দিতে বলে। তার কি প্রচণ্ড অস্থিরতা! কি পাগলামী তার দুটো বিস্ফারিত চোখে!
উপেক্ষা করে, চাপা দিয়ে, শিকল পরিয়ে তাকে আড়াল করে 'সাদা আমি'কে আবার বাইরে টাঙিয়ে রাখতে হয়। হাসতে হয়। কখনো অট্টহাসি, কখনো মৃদু।
তবে মাঝেমাঝেই সে জঙ্গলের থেকে কোনো বন্যপশু আচমকা ঢুকে পড়ে সভ্য ব্যবহারের সীমানা ডিঙিয়ে। মাংসাশী পাখির আঁচড় লাগে সুন্দর করে কাটা নখে। শেখানো বিদ্যা উড়ে যায় বর্বরতার ধূলোঝড়ে।
সে আদিমকে শিকল পরানো যায়, ঝিমিয়ে রাখা যায়। মেরে ফেলা যায় না। তার অস্তিত্বের ভিতেই এ প্রকান্ড অর্ধসত্যের সাজ চারদিকে। অভ্যাস যে দূর্গ বানাতে পারে অভিনয় তা পারে কি? পারে না। তাই প্রকাশ্যে সে অন্ধকারের রাজার নামে ফতোয়া জারি করে, গোপনে তাকেই যদি 'আত্মরক্ষা' ইত্যাদির দোহাই দিয়ে লালন করি, সাজানো প্রাসাদে ভূমিকম্প তো আসবেই। মাটির তলায় পশুর বাস যে!
আর যার ভাঙার নেশা, সে শুধুই ভাঙে। অন্যের প্রাসাদ ভাঙা শেষ হলে আমার প্রাসাদে চড়ে বসবে। দোহাই তাকে নীতি বুঝিও না। সে বোঝে না। ইতিহাস সাক্ষী।
(ছবিঃ সুমন)