একাকীত্ব
একা
একটু দাঁড়াও
তুমি হাতের রেখা গুনো না
তুমি আশেপাশের কথা শুনো না
তুমি উনুনে আঁচ ধরিয়ে একটু আড়ালে যাও
তুমি ভ্যানটা গাছের ছাওয়ায় রেখে একটু দাঁড়াও
এক সন্ধ্যা দক্ষিণেশ্বর
দক্ষিণেশ্বরের নাটমন্দির। সন্ধ্যেবেলা। কালীকীর্ত্তন চলছে। গোল হয়ে বসে ভক্তবৃন্দ। কারোর চোখ বন্ধ, কারোর আধবোজা, কারোর খোলা। সংসারের বাইরে মনটাকে এনে ফেলার আপ্রাণ চেষ্টা যেন কোথায়। কত ক্ষোভ, কত জ্বালা, কত অসহায়তা, কত অভিমান - সব ভোলো। গাও মন গাও।
এই ঢের
পথ ফিরিয়ে দিয়েছিল আমায়
তোমার চোখ পথে টানল ফের
যা না-দেখা ছিল, তারা স্বপ্ন হয়ে এল
পথ না পাই, গতি যে পেয়েছি,
এই ঢের
এমনই
দরজায় তোমায় চিনতে পারিনি
পেরেছি পাপোসে পা মুছে ভিতরে আসার পর
তুমি চলে গেলেও, তোমায় হারিয়েছি বুঝিনি
বুঝেছি, আরেকজন দরজায় আসার পর
এত রক্ত কেন?
কদিন আগে ট্রেনে ভারতের পশ্চিম প্রান্ত থেকে পূবের দিকে ফিরছিলাম। ট্রেনটা বিকালবেলা আসল টাটাতে। সশস্ত্র পুলিশবাহিনী উঠল দলে দলে। পনেরো মিনিট অন্তর অন্তর টহল চলছে আমাদের চোখের সামনে দিয়ে। কেন? শুনলাম খড়গপুর অবধি বিপদসঙ্কুল পথ।
এসো
সকাল থেকে অনেকবার হাত থেকে এটা ওটা পড়েছে,
(ফেলেছি? না না, কক্ষণো না)
এবার তো এসো!
আমার জন্য না হোক
অন্তত প্রাচীন প্রবাদটাকে সত্যি করতে এসো, থাকুক ওর মান
তবু এসো
এসো
তুমি এসো
তোমার নিজের জায়গায়
নিজের মত বসো
আমি বাইরে থেকে খানিক আসি ঘুরে
বলে আসি ওদের -
তোমায় আমি পেয়েছি অন্তঃপুরে
এই যে কালো মাটির বাসা
এই যা রক্ষে!
কত ভদ্রতা দাঁড়িয়ে আছে
দর্জির সাথে দর করে,
কত চরিত্র দাঁড়িয়ে আছে
(দরজা জানলার)
ছিটকিনিতে ভর করে
চোখে তো পড়ে কত কিছুই
ভাগ্যে অনেক কিছুই যায় এড়িয়ে
এরই মধ্যে!
এই মাত্র যে গুছিয়ে গেলাম!
কি হল সব?
এরই মধ্যে ছড়িয়ে গেল?
এমনই হয়
রোজই হয়
রোজই ভাবি, আর না
থাক যা কিছু
যেমন আছে পড়ে।
হয় না যে,
আবার আসি
অহংকারে
গুছিয়ে নিতে
সব কিছু ফের
নিজের মত করে।
একটু পরেই
হাতের কাজটা সামলে নিই
একটু পরেই আসছি
কতদিন ধরে শুনছি।
হাতের কাজটা সামলে নিই
একটু পরেই যাচ্ছি
কতদিন ধরে বলছি।
একলা আনমনে
একটানা বৃষ্টির আওয়াজ
বাইরের দরজায় খিল দিয়ে
মন মেঝেতে অ্যালবাম ছড়িয়ে বসে,
হাসে, কাঁদে, উদাস হয় আনমনে।
বৃষ্টি তার সব কথাই জানে।
ছাদের উপর
পাতার উপর
টুপ টাপ যেই পড়ে
সে যেন তার ছোটবেলার হাত, আনে
বুড়োবেলায় খেলতে যাওয়ার ডাক,
অবশ্যই মনে মনে।
এখানেই
অবশেষে ফিরে আসলাম
যাওয়ার আগে যেখানে ছিলাম
সেখানেই
সোজা পথ না
একটা বৃত্ত পাড়ি দিলাম
এখানেই
এ হৃদয়
এ হৃদয় বারোয়ারী আজ
কোথায় কখন কার খোঁজে থাকে
খেয়াল রাখি না আর
ওর কান্না হাসি আশা হতাশা খুব চেনা আমার
বিশ্বাস করে ঠকে যাওয়া
বিশ্বাস না রাখতে পারা
এগুলো জলভাত এখন আমার কাছে
এমনিই ভালোবেসে
একটা ছোট্ট ঘাস
রাস্তার ধার ঘেঁসে
চাকার, পায়ের ধূলো
তাকে ঢেকেছে একশেষে।
হঠাৎ একবিন্দু জল
আকাশ থেকে এসে
ধুইয়ে দিয়ে গেল তাকে
এমনিই ভালোবেসে।
এভাবে
এলে না
তুমি আসবে বলে সারাগায়ে রাতের অন্ধকার মেখে বসেছিলাম
একা
তুমি এলে, তুমি ছুঁলে চাঁদ উঠত অন্ধকারে
আমার সারা গা থেকে রাত্রি চুরি করে,
গোপনে
এসে আছো
আমায় তুমি খুঁজে নেবে,
এ আমার বিশ্বাস
উতলা নই
বুকের ছন্দে রক্ত দোলায়
তোমার আশ্বাস
আসার আগেই এসে আছো
সাক্ষী?
এই তো জীবন
এই তো জীবন
নিবিড় অন্ধকারে
এক টুকরো আলোকিত কোন
এই তো জীবন
(ছবিঃ সমীরণ নন্দী)
এক আমি গড়ছে ভাঙছে
এক আমি গড়ছে ভাঙছে
আরেক আমি দেখছে
দুই আমিকেই বিশ্ব আমি
নীরব চোখে দেখছে
একটা ছোট প্রাণ
একটা ছোট প্রাণ
চেতনার আদি জয়তোরণ
মাটির সব জড়ত্ব ভেঙে
প্রাণের স্বপন উন্মোচন
(ছবিঃ দেবাশীষ বোস)
একটা সকাল তোমার জন্য হবে
একটা সকাল তোমার জন্য হবে
শুধু তোমার জন্য
তাই যন্ত্রণাটাকে ভালো রেখো
যন্ত্রণাই চিনতে পারে নতুনকে
বরণ করে নতুনকে
তাই জেগে থেকো
কারণ জেগে থাকা মনে
যন্ত্রণাকে ভালো রাখা
একাকিত্ব
একা ঘরে একাকিত্বের এক্কা দোক্কা
পর্দা উড়ছে
আলোতে ছায়াতে সোহাগ চলছে খাটে
পরিপাটি করা বিছানার চাদর
হাত বুলিয়েছে কে কবে?
দেওয়ালের আছে কান
চোখ তো নেই,
তার স্পর্শটুকু ইঁটেতে রেখেছে ঢেকে
একমুঠো সুখ জন্মালো বুকে
একা দাঁড়ানোরও
একা দাঁড়ানোরও ছন্দ আছে
কালের স্রোতে ভাসতে ভাসতে
নিজের বুকেই দোসর যাচে
(ছবিঃ সমীরণ নন্দী)
এত অহংকার আমার
জল ভরতে গিয়েছিলাম একা
কাজের জল, স্নানের জল, পানের জল
তুমি আলাদা করোনি
আমি করেছি
যেমন সপ্তর্ষিমণ্ডল নাম দিয়ে
ওদের অন্য তারাদের থেকে আলাদা করেছি
এত অহংকার আমার
একক সুর
অন্দরমহলে কটা চেয়ার পাতা
এদিক ওদিক ছড়ানো ছেটানো
(হয়তো বা সাজানো)
কয়েকটা সোফা
মাটিতে মাদুর পাতা
ধুলো পড়েছে স্তরে স্তরে
সোফাতে, চেয়ারে, মাদুরে
কেউ বসেনা আজকাল
এখনই না
এখনই যাবে কি?
বাতাসে না আছে ফুলের গন্ধ
না বারুদের
একাকীত্ব
তোমার ব্যস্ততা আর আমার একাকীত্ব
দু'জনেই দুজনকে এড়িয়ে চলে
চেনা রাস্তায় দুজনেই অচেনার ভান করে
আড়চোখে বিনা ছকে এক্কাদোক্কা খেলে
একলা না
মশারির চারদিকটা ভাল করে গোঁজা হল কিনা দেখতে দেখতে ওনার বেশ কিছুটা সময় কেটে যায়। মাথার কাছে টর্চ, জলের বোতল নিয়ে যখন বিছানায় ঢোকেন, মনে হয় এ যেন তার রাতের সংসার। একা মানুষটা কাটাল দোকা ভাবে সাঁইত্রিশ বছর। তারপর হঠাৎ এখন একা। নিঃসন্তান বলে না, দুর সন্তান বলে। বাইরের দূরত্ব না, ভিতরে।
এসো
তুমি ডুবসাঁতার জানো?
পানকৌড়ির মত ডুব দাও
যেন গাছের ছায়াগুলোও জানতে না পারে
জলের বুকে ঢেউ না ওঠে দেখো
এ পাড়া ও পাড়া খবর যাবে
এ পারে এসো আমার বুকে মিশে
আমি গাছের ছায়ায় লুকিয়ে আছি
কালোর সাথে মিশে
আলোতে চোখ রেখে
একটা রাতের স্টেশান
গভীর রাত। দূরপাল্লার ট্রেন। স্লিপার কোচের নীচের বার্থে সিট। ঘুম ভেঙে গেল। জানি না কত রাত। ঘড়ি দেখতে ইচ্ছা করল না। থাক। রাত তো রাত। কত রাত জেনে তো দরকার নেই।
এ মানুষে সেই মানুষ আছে
অস্তমিত সূর্যের দিকে তাকিয়ে অনেকক্ষণ বসে। রাস্তাটা বেঁকে গিয়ে যে গ্রামটাতে গেছে, সে গ্রামের অনেককেই চিনি। তারাও চেনে আমায়। তবু এখন যেন সেই চেনাচিনি থেকে সরে আমি। সামনে অনেক দূর অবধি বিস্তৃত ধানক্ষেত। সবুজে সবুজ চারদিক। গরম তেমন নেই, আবার ঠান্ডার দাপটটাও নেই, বসে থাকতে ভালই লাগছে।