একটা খুব বড় পাতকুয়া। বেশ উঁচু পাড় বাঁধানো। চারিদিকে ধু ধু করছে মাঠ। তার একদিকে খুব লম্বা একটা লাইন। মানুষের সারি। লক্ষ লক্ষ, কোটি কোটি মানুষ। সবার হাতে একটা করে ঘটি।
আমি একটু কাছে গেলাম। দেখলাম কয়েকজনকে বেশ আলাদা করে চেনা যাচ্ছে। তাঁরা যেন কিছুটা আলাদা। একজন শ্বেতশুভ্র, বর্ষীয়ান, সৌম্যকান্তি পুরুষের দিকে দৃষ্টি আটকালো। মনে মনে বললাম, কে ইনি? ভিতর থেকে কে বলল, ইনি ব্যাসদেব। দেখলাম ওনার হাতেও একটা ঘটি। ভাল করে খেয়াল করলাম, তাতে ভর্তি দুধ। আর বাকিদের হাতে যে ঘটি, তাতে ভরা জল। তাঁরা সবাই একে একে আসছেন, ঘটির মধ্যের জল পাতকুয়োতে দিয়ে, মিলিয়ে যাচ্ছেন। ব্যাসদেব ঢাললেন দুধ।
সারিটার দিকে তাকিয়ে দেখলাম তাঁর কিছুটা দূরে আরেকজন পুরুষ - সক্রেটিস!! এভাবে কোটি মানুষের সারিতে কিছুটা অন্তর অন্তর কোনো না কোনো জ্যোতির্ময় পুরুষ অথবা নারী দাঁড়িয়ে। বুদ্ধ, যীশু, চৈতন্য, মীরা, কবীর কত কত মহাত্মা, কালের ভেদে সারিবদ্ধ দাঁড়িয়ে। তাঁদের হাতে দুধের পাত্র। অন্যান্যদের হাতে জল।
জিজ্ঞাসা করলাম, এ কি হচ্ছে? কে বলল, এদের সারা জীবনের অনুভূতি এই পাতকুয়াতে রেখে যাচ্ছেন। এই পাতকুয়া চিত্ত। মানবচিত্ত।
অবাক হয়ে ভাবছি, এর থেকে কিছু পান করা যায় না? এমন সময় কে একজন বলল, ওদিকে যাও, একজন আছেন তিনি বলবেন উপায়। গেলাম সেদিকে। দেখি খুব চেনা একজন দাঁড়িয়ে, আরে এ যে দক্ষিণেশ্বরের পাগলা বামুন, ঠাকুর!
ইশারায় কাছে ডাকলেন। বললেন, "এই কপিকলটা ধর। এবার বল তোর কেমন জিনিস চাই, যা চাইবি তাই তুলে দেব।"
ঘুম ভেঙে গেল। ভোরের আকাশ ঈষৎ অরুণাভ। আমার পড়ার টেবিলের উপর রাখা কথামৃতটার দিকে চোখ গেল - কপিকল!
(আজ শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণদেবের পূণ্য জন্মতিথি)