Skip to main content
এই যে কালো মাটির বাসা


গাছটা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে নিজের শিকড় খুঁজছে। তার চারদিকে অনেক গাছ। তাদের শিকড়-বাকড়ও মেলা। মাটির উপর তাদের গতিপথের রেখা। কিছু ঢেউ খেলানো, কিছু ঢিবির মত, কয়েকটা আবার তীরের মত সোজা।
      গাছটা বুঝছেই না কোনটা তার নিজের। সেদিন একটা কেঁচো যাচ্ছিল শিকড়গুলো ছুঁয়ে, সে ভাবল নিশ্চই তার লাগবে শিহরণ। লাগল, তবে কোন শিকড়ে যে লাগল? সারারাত ভেবেও কূলকিনারা করতে পারল না।
      কয়েকদিন পর, একটা লোক এসে মাটি খুঁড়ে কয়েকটা শিকড় নিয়ে গেল তুলে। সে ভয় পাচ্ছিল খুব, কিন্তু তার লাগল না, পাশের কিছু গাছ করছিল - উফ্!
      এল কালবৈশাখী। তুমুল ঝড় হল এক সন্ধ্যেতে। ভোরে দেখল সে কাত হয়ে হেলে আছে একদিকে। এ পাশ, ও পাশ আরো অনেক গাছ উপড়ে, আধা উপড়ে পড়ে। শিকড়গুলো বেরিয়ে এসেছে বাইরে। তাতে মাটির দলা লেগে। কেঁচো, পোকা, পিঁপড়ের বাচ্চাগুলো পরিত্রাহি চীৎকার করছে ভয়ে। তাদের মায়েরা তাদের বুকে করে, মুখে করে ছুটে বেড়াচ্ছে দিশাহীনভাবে।
      হঠাৎ শুনল ফুঁপিয়ে কান্না। একটা পাখি তার শিকড়ে মাথা ঠুকে কাঁদছে। তার পাশে পড়ে তার ভাঙা নীড়। হায় রে! কয়েকটা ডিম ফেটে পড়ে আছে মাটির উপরে।
      গাছটার চোখে জল এল। সে দেখল সবার শিকড় দেখতে এক রকম। কাটলে, টানলে, ছিঁড়লে সবারই একই রকম লাগে। মাটিটাও এক রকম। মাটি শিকড়ের জাত বিচার করে না। বুকে টেনে রাখে সবাইকে।

      তার ঘুম ভেঙে গেল। তাকিয়ে দেখল, কিচ্ছু হয়নি তো! সব সেখানেই আছে, আগে ছিল যেখানেই। সে তাড়াতাড়ি তার পূবদিক ঘেঁষা বড় ডালটার কাছে গেল। ছোট্ট পাখির নীড়। তার মধ্যে ছোট্ট ছোট্ট সাতটা ডিম। সে সজল চোখে বলল, আমরা সব এক শিকড়ে বাঁধা রে। আলোতে চোখ ফুটলেই বুঝবি। আমি তোকে কোলে করে দেখাব সূর্যোদয়, দেখবি?