কদিন আগে ট্রেনে ভারতের পশ্চিম প্রান্ত থেকে পূবের দিকে ফিরছিলাম। ট্রেনটা বিকালবেলা আসল টাটাতে। সশস্ত্র পুলিশবাহিনী উঠল দলে দলে। পনেরো মিনিট অন্তর অন্তর টহল চলছে আমাদের চোখের সামনে দিয়ে। কেন? শুনলাম খড়গপুর অবধি বিপদসঙ্কুল পথ।
বিপদ! সে বিপদ বাঘ ভাল্লুক, বা প্রাকৃতিক না। মানুষের নিজের হাতে তৈরী করা বিপদ। কিছু মানুষ ওই ঘন জঙ্গল থেকে বেরিয়ে আসতে পারে। আমাদের প্রাণের বিনিময়ে নিজেদের অস্তিত্ব প্রমাণ করার জন্য (দাবী বা উদ্দেশ্য কথাটা অনুচ্চারিত রাখলাম। কারণ সেগুলো আজও আমার কাছে স্পষ্ট না।)।
তখন সন্ধ্যে হব হব। বাইরে ক্ষীণ নদী ঘেরা পাহাড়ের কোল ঘেঁষে সূর্য অস্তমিত - শান্ত স্নিগ্ধ চারিধার। ট্রেনের মধ্যে অসংখ্য নিরস্ত্র মানুষ, শিশু থেকে বৃদ্ধ - জীবনের অতি সাধারণ দাবীগুলো মিটিয়ে মিটিয়ে চলেছে, বেঁচে আছে। গল্প গুজব, গানে, ঘুমে, নিরুদ্বেগে চলেছে।
আমার মন না তো বাইরের নৈসর্গিক আনন্দে মুগ্ধ হতে চাইছিল, না তো কামরার ভিতরের নিশ্চিন্ততায়। ভাবছিলাম হয় তো কিছু হবে না। কিন্তু হচ্ছে তো! কেন? এই 'কেন'র উত্তর খুব সহজ না। সে কারণ সমাজব্যবস্থার জটিল আবর্তে পাকে পাকে বাঁধা। নানা তর্ক, নানা যুক্তিতে (?) জট পাকানো।
দাবী যাই হোক না কেন, কিন্তু এ পথ কেন? কোনো প্রবল ক্ষমতাসম্পন্ন মানুষকে গোপনে ষড়যন্ত্রের কৌশলে হত্যা করা হয়েছে - এ ইতিহাসের পাতায় পাতায়। কিন্তু সাধারণ নিরীহ মানুষের ওপর অতর্কিতে, গোপনে হত্যালীলা চালিয়ে আদৌ কিছু সিদ্ধ হচ্ছে কি! শুধু ত্রাসের সঞ্চার ঘটানো ছাড়া যাদের আর কোনো পথ জানা নেই, তারা কি এত বিপন্নবোধ করে এই সমাজে, এই সময়ে।
আরেকটা দিক ভাবলে বড্ড অসহায় লাগে। যে বিশেষ ধর্মের নামে জগৎজোড়া এ ধ্বংসলীলা শুরু হয়েছে সেই ধর্মের লক্ষ লক্ষ সাধারণ, শান্তিপ্রিয় মানুষগুলোর জীবন কি ভাবে বিপন্ন হচ্ছে এরা বোঝে না! এতে কার লাভ!
এ উত্তরাধুনিক যুগের ভয় থেকে কি ভাবে, কবে মুক্তি আমরা কেউ জানি না। ৯/১১.. ২৬/১১.... ১৩/১১.... কোন ঈশ্বরের মাথায় জয়ের পালক লাগে তাও জানি না।
বহুর মধ্যে একত্ব কোনো ism প্রতিষ্ঠা করতে পারে না। পারে একটা বিশেষ উপলব্ধি - যাকে ধর্ম বলে। সেই সূত্রটার নামই মানুষ যুগে যুগে ঈশ্বর, আল্লাহ্, গড দিয়ে এসেছে। সেই সূত্রটা যাঁরা যুগে যুগে নতুন নতুন পথে খুঁজে মানুষের হাতে দিয়েছেন, তাঁদেরই মানুষ অবতার, মশীহা, ফকির, সেন্ট বলেছে। হৃদি আসনে পূজা করে এসেছে। সেই পথই শান্তির পথ। চিরকালের পথ। ঝড় মানুষকে চিরকাল বিভ্রান্তই করেছে, করবেও তার দিশাহীন শক্তির প্রাবল্যে। কিন্তু সে ক্ষণস্থায়ী।
'যিনি সর্বভূতে নিজেকে দর্শন করেন, নিজের মধ্যে সর্বভূতকে দর্শন করেন, তিনি নিজেকে আর হিংসায় লিপ্ত করেন না, তিনি পরম শান্তির পথে যাত্রা করেন' ~ গীতা।