বিশ্বাস
শিখা
প্রদীপের সলতে এগিয়েছি সারারাত
শিখাটাকে জ্বালিয়ে রাখব বলে
যেন প্রদীপের বুক না জ্বলে
শিখা এগোতে এগোতে
কখন আমার আঙুলে ধরেছে আগুন
আঙুল থেকে শিখা এসেছে সারা শরীরে
পুড়ুক পুড়ুক। আগুনের ভুল ভাঙিয়ো না।
তবু প্রদীপের বুকটা বাঁচুক
হে সত্য
সে কথা থাক, যে কথা শুধুই তর্কের ঝড় তোলে
নিজের তোলা ঝড়ের ধূলোয় নিজেই পথ ভোলে
সে আলো জ্বালো, যে আলো মৃত্যুর পারে জাগে
আজ সব পরাভব তোমার চরণে পুনর্জন্ম মাগে
দ্রোহাত্মা ও মহাত্মা
বোবা কথারা
বোবা মুখের বোবা কথারা
এখানে ওখানে হাঁটুগেড়ে বসে
মিথ্যাগুলোকে পথ ছেড়ে দেয়
সাজানো কথা বোঝে না সে
যদি
অপারক আমি
তবে
দুটো নিম্নাঙ্গের মিলনে
একটা শরীর তৈরী হলেও হতে পারে
প্রেম নয়
অন্তর্লীন
এত ব্যাখ্যা করছ কেন?
শুতে যাও। আমি জেগে আছি।
ভয় অন্তর্দৃষ্টির অন্তরে জাগা বিশ্বাসকে কাড়তে পারে না
তুমি সে বিশ্বাসে আছো।
মিথ্যার সাধ্য কি সে বেদীতলে দাঁড়ায়!
মিথ্যার কল্পনাও ভস্ম হয়ে যায় সে শুদ্ধাগ্নিতে
তোমায় আমি ব্যাখ্যায় পাইনি
পেয়েছি বিশ্বাসের অন্তরে জাগা অতন্দ্র আলোতে
তুমি এসো। আমি হাত পেতে আছি -
আর কিছু না, শুধু তোমার হাতেরই জন্য।
আগুন
আছেই আছে
২৬শে জানুয়ারী
এসো
ছন্দ
আরশিনগর
স্পর্ধা
২৩ শে জানুয়ারী
কার যেন নিহত স্বপ্নগুলো হেঁটে বেড়ায়
ক্ষ্যাপার হাঁক
কুম্ভীরাশ্রু
বৃষ্টি
দরবারি কানাড়া
গভীর রাত। বাঁশিতে বাজল সুর - দরবারি কানাড়া। সুর উঠল কেঁপে কেঁপে চার দেওয়ালের মধ্যে মাথাকুটে। কে দেবে ওকে আগল খুলে? ও কাকে চায়? কার কান্না ওর বুকে এমন জমাট বেঁধে?
বৃষ্টি
না হয় আমি
সত্য উত্তর
নিয়ন আলো
ছোট্ট শরীরটা মোড়া সোয়েটারের মোড়কে
সরাসরি
আমি কারোর মাধ্যমে কিছু চাইনি কোনোদিন
ভালোবাসাকে চেয়েছি ভালোবাসার জন্যই
ঈশ্বরকে চেয়েছি ঈশ্বরের জন্যই
তাই আমার দরজায় সেজে আসতে হয়নি
কাউকে কখনো কোনোদিন
যে এসেছে, সে সহজ বেশেই এসেছে সহজেই
ধরা-অধরা
থেকো না হাতের নাগাল
তাহলে আমার মন বলবে,
অনুকম্পা
ধ্যানের গভীরে
আছে
চৌকাঠ পেরোও
রাস্তা আছে
হাত বাড়াও
হাত আছে
শ্বাস নাও
বাতাস আছে
কণ্ঠ ছাড়ো
শ্রবণ আছে
দু'হাত মেলো
আকাশ আছে
স্বপ্ন বোনো
লড়াই আছে
সামনে তাকাও
আশা আছে
স্বপ্নাতীত
কে ডেকেছিল?
কার ডাকে সাড়া দিতে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম?
আমার সাথে কার যেন দেখা হয়েছিল। ঠিক কদিন আগে?
আমার হঠাৎ ভাঙা ঘুম পায়ের তলায় মাটি না পেয়ে
অভ্যাসের ডাঙা খোঁজে। হাতড়িয়ে বেড়ায় এর ওর মুখ।
পরিচয় ছিল তো একটা আমার -
বুকে, মাথায় করে টাঙিয়ে নিয়ে ফিরেছি সে অহং
দীনতার ছদ্মবেশের আড়ালে
করবী
একটা করবী বৃন্তচ্যুত হয়েছিল সেই মুহুর্তে
শখ
প্রান্তিক
মৃত্যুঞ্জয়
বিশ্বাস
গল্প না তো!
অপেক্ষায়
স্বামীজী
বেলুড়মঠ, শান্তিনিকেতন - এগুলো পার্কসদৃশ, কিছুটা উচ্চমার্গের বিনোদনস্থল আজ। কোনো রসালো মিষ্টি বানানোতে বিফল হলে, মা-কাকিমাদের মুখে একটা কথা শোনা যায় - ইস্, রসটা ভিতরে যায় নি রে!
স্বামীজি
বললে
তোমার ভিতরের সুপ্ত দেবত্বকে জাগাও
তাকালাম অন্তরে, বললাম
ঘন অন্ধকার। আলো কই?
ভেলভেট পোকা
হলুদ ঘাসগুলো সারাগায়ে ধুলো মেখে
একা
অন্যজনের কথা কেন বলবে?
এসো। একা বসে কটা কথা একা একা বলো।
ওরা পাগল বলবে? বলুক।
ওরাও একা একাই বলবে তুমি না শুনলে।
কৌশল
যবনিকা
আজ না হয় কাল
মাটিতে পা রাখা, আলোতে চোখ মেলা
পুষ্পপুরাণ
ঝরণার জল
ঝরণার জল। জলতরঙ্গ অবিরাম। নির্বিকার পাথর।
বছরের পর পর বছর। শুধু পিচ্ছিল। আরো পিচ্ছিল।
দেবদাসী
ফাঁকা মন্দির। বেশ বড় মন্দির। বিগ্রহ - শ্রীকৃষ্ণ ও রাধার। সন্ধ্যা হয়েছে ঘন্টাখানেক হল। শীতের সন্ধ্যা তাড়াতাড়ি হয়।
প্রণাম করে উঠতেই খেয়াল করলাম একজন বৃদ্ধা পূজার আয়োজন করছেন মন্দিরের এক কোণের দিকে বসে। সাদা শাড়ি। মাফলার জড়ানো মাথা। দেহটা একটু সামনের দিকে ঝোঁকা।
বললাম, দরজাটা একটু খুলবেন, একটা ছবি তুলব। আমার আর আমার আরো দু'জন বন্ধুরই মুর্তিটা খুব ভাল লেগেছিল।
একাকীত্ব
থমথমে চারদিক
থমথমে চারদিক। ঝড়ের পূর্বাভাস?
নাকি ঝড়ের মৃত্যুশোক, মৌন দীর্ঘশ্বাস।
মিলনাপেক্ষা
অনেকটা রাস্তা সমতলে হাঁটার পর পাহাড় এলো। পথকে বললাম, এবার?
পথ বলল, ওই তো। সে পাহাড়ের দিকে ইশারা করল।
বললাম, পথ কোথায়? এ যে চড়াই শুধু। ঘন জঙ্গল।
খানিক এগোলাম। পথ হারালো জঙ্গলে। ঢুকলাম জঙ্গলে। মানুষ সব হারিয়েও নিজেকে আর হারাতে পারে না, সেই ভয়, সেই ভরসা।
ঘন জঙ্গলের মধ্যখানে দাঁড়িয়ে বললাম, কোনদিকে যাব কেউ জানো?
আমার কণ্ঠস্বর আমারই কাছে এলো ফিরে - প্রতিধ্বনি হয়ে।
শোনার সময় হয় না
যে হাতটা কেটে গেলে- শুধু বঁটি, হাত মোছার ন্যাকড়া, খুন্তির ডান্টি, বড়জোর ডেটল জানে.... সেই হাত দুটো ছাড়া নাকি সংসার অচল!
ওরাই বলে। বড্ড বলে। এত বলে যে শোনার সময় হয় না।
আসবে
আমার পা ছুঁচ্ছে নুড়ি- পাথরের সোহাগ
বীরেনকাকু
ফাঁকি
প্রান্তিক
ধর্ষণ
খুব আলোচিত বিষয় - ধর্ষকদের ফাঁসি হওয়া উচিৎ কি না। আমি ভণিতা না করে সরাসরি আমার নিজের চিন্তা-ভাবনার নির্যাস বলি - উচিৎ।
মনুষ্যসমাজে তিন ধরণের মানুষ দেখা যায় প্রধানত রুচির দিক দিয়ে।
মাটি
হতে পারে তোমার ঘুম আসছে না
হতে পারে তুমি কাজের ফাঁকে ফাঁকে
হচ্ছ অন্যমনস্ক
কোথায় যেন ঘটেছে কিছু ভুল
কার কাছে যেন বাকি আছে ক্ষমা চাওয়া
একবার বাইরে এসো
খোলা আকাশের নীচে দাঁড়াও
একবার নত হও
স্পর্শ করো মাটি দু'হাত বিছিয়ে
ঢল
দেখতে দেখতে
সব বাড়িতে জ্বলে উঠল আলো
ঠোঁটের আবদার লাগল গালে যেই
বিষন্ন কুয়াশা কাটল
আড়ামোড়া ভাঙা শরীরে এল আদরের ঢল
সন্ধ্যে এখন
চায়ের কাপে চুমুক দেওয়া ঠোঁট
চোখ নির্জন অরণ্যে একা সর্দার
তুমি অরণ্যের গুপ্ত জিয়ন ডাল
আঙুলগুলো পরীদের যাদুকাঠি
কথা
না তো। আসেনি তো কেউ?
শাড়িটাকেই ঘিরে ভাঙা বারান্দার উত্তর দিক আটকানো
পৌষের শীত গো মা, মানবে কেন?
আরে আরে ডেকো নি গো!
ও রাত আটটাতেই ঘুমুতে যায়।
কি খায়?
থাকলে খায় ভাত
না হলে খায় মুড়ি
হে হে...মাঝে মাঝে বাতাসও খায়
কোথায় শোয়?
ওই মাদুর পেতে। নিকানো বারান্দা।
ঠাণ্ডা লাগে?
না তো, সারা শরীরে কড়া পড়ে
গোসাঁই
নতুন ইংরাজী বছরের প্রথম দিন। সকাল ১১টা হবে। কাজের গতি শিথিল। ছুটির আমেজ। গোসাঁই এল। সেই সাদা ধুতি, সাদা পাঞ্জাবী, হাতে একতারা, পায়ে ক্যাম্বিসের জুতো। বয়েস পঁচাত্তরের আশেপাশে হবে। শীর্ণ, কালো দেহ। চোখ দুটোর একটা আকর্ষণ আছে। কি একটা যেন ঘোর। সামনে দাঁড়ালে মনে হয় যেন গ্রীষ্মের দুপুরে বড় দীঘির পাড়ে এসে দাঁড়ালাম। মনটা শান্ত হয়ে যায়।