খুব আলোচিত বিষয় - ধর্ষকদের ফাঁসি হওয়া উচিৎ কি না। আমি ভণিতা না করে সরাসরি আমার নিজের চিন্তা-ভাবনার নির্যাস বলি - উচিৎ।
মনুষ্যসমাজে তিন ধরণের মানুষ দেখা যায় প্রধানত রুচির দিক দিয়ে।
- নর।
- নরোত্তম।
- নরাধম।
নর - যে সাধারণ দোষ-গুণ মিলিয়ে মানুষ। তার কোনোটাই তীব্র না বা উৎকট না।
নরোত্তম - যে গুণাবলীতে নরের অনেক ঊর্দ্ধে। তাঁরা প্রাতঃস্মরণীয়।
নরাধম - যে দোষে নরের চাইতে নীচে বা অনেক নীচে।
প্রতিটা মানুষের দুটো জীবন - ব্যক্তিগত ও সমাজগত। অর্থাৎ দুটো মানুষ - ব্যক্তি আর সমষ্টি।
কথা হচ্ছে নরাধমদের নিয়ে। তাদের প্রাণহানিমূলক শাস্তির দরকার আছে কি নেই।
আছে। অপরাধ যখন এমন মাত্রায় এসে পৌঁছাচ্ছে যাকে স্মরণ করলে গা শিহরিত হয়ে উঠছে - সেক্ষেত্রে শাস্তি মৃত্যুদণ্ড হওয়া বাধ্যতামূলক।
ক্ষমা খুব বড় মাপের গুণ। তা ব্যক্তিসত্ত্বায় আসুক ক্ষতি নেই। পৃথিবীর যে কোনো মহৎগুণ ব্যক্তিগতই হয়ে থাকে, সমষ্টির না। সমষ্টির হাল ধরে আইন। যদি মৃত্যুদণ্ড না বিবেচ্য হয়, তবে যত মহাপুরুষদের নামে পূজাস্থল, মহিমাজ্ঞাপনের স্থল, শ্রদ্ধা জানাবার স্থান আছে - সব ভেঙে দেওয়া হোক।
যে সমাজে নরাধমকে চরম শাস্তি দেওয়ার অধিকার নেই, সেই সমাজে চরম শ্রদ্ধাজ্ঞাপনেরও অধিকার থাকা উচিৎ নয়। একদিকে এগোবো, আরেকদিকে চুপ করে হাত-পা গুটিয়ে থাকব, তা হতে পারে না। নির্ভয়া, দামিনী, কামুদিনীরা আমাদের বোন, সন্তান হতে কতক্ষণ? আপনি ব্যক্তিসত্ত্বায় যত মহৎ হোন হোন, নিশ্চই তা প্রশংসনীয়। কিন্তু সামাজিকভাবে তা হতে পারে না। সেখানে বিবেকের থেকে ভয়ের প্রভাব বেশি।
সমাজ মানুষের বিবেক দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হবে - এ কোনোদিন সম্ভব না। কারণ এই তিন প্রকারের মানুষ সব সমাজে সবসময় থাকবে।
পূজা যদি হয় জিন্দাবাদ, জয়ের সূচক নরোত্তমের জন্য, তবে নরাধমের জন্য মুর্দাবাদ। একটা থাকলে আরেকটাকেও থাকতেই হবে।
অনেকে বলছেন, পুরুষত্বহীণকরণ। আমার মনে হয় না। তাতে তার অপরাধপ্রবণতা আরো বাড়বে। কারণ ক্ষুধার্তের হিংসার আক্রোশ আরো তীব্র, আরো ভয়াবহ।
অতএব আর এ বিষয়ে আমার কোনো সংশয় নেই, চরম শাস্তিই হোক। কয়েকটা বিক্ষিপ্ত না, এটাই হোক একমাত্র শাস্তি।
তাতে কি মেয়েটা ফিরে আসবে?
এ প্রশ্নটা আবার ব্যক্তিগতস্তরের। আমাদের প্রধান ও প্রথম দায়বদ্ধতা সমাজের প্রতি। যদি সমাজ সুস্থ থাকে তো আমি সুস্থ, আমার ভবিষ্যৎপ্রজন্ম সুস্থ। যদি ময়লা জমছে তবে নির্মমভাবে তা উৎখাত করতে হবে। করতেই হবে। যতদিন না হয়, সব মহাপুরুষদের পূজা, জন্মদিনে ছুটি দেওয়া বন্ধ হোক।
(ছবিঃ সুমন)