দিনের আলো যে সত্যকে
দিনের আলো যে সত্যকে আলোর ছলে ঢাকে
না ঘুমানো রাত বুকের ওপর তাকেই জাগিয়ে রাখে
দিদি
দিশা
কি খোঁজার কথা ছিল?
সন্ধ্যাতারা না ধ্রুবতারা?
ও দুটো চোখের দিকে তাকিয়ে
ভিতরে বাইরে ছন্নছাড়া
দিশা খুঁজতে এলাম
হলাম দিশাহারা
দিয়া
তুমি চোরাবালি না ভুলভুলাইয়া
কি সুখ বলতে পারো?
তোমার শিখায় জ্বলে পুড়ে
কাজল হয়ে
তোমার চোখের কিনারাতেই
দুই বিন্দু জল
দিক
অনেক দিন
এ দিক
ও দিক
করার পর বুঝলাম
সব দিকই
এদিক
ওদিক
এখন তাই
দিকবিদিক জ্ঞান হারিয়ে
বেশ আছি
দেখার সাথে
কোন দিকেতে তাকাই তোমার?
নাক-চোখ-ঠোঁট-হাত-পা?
না তো না
না গো না
তুমি আসলে দেখার সাথে
কি আসে আর?
আসে আসে আসে
জানি জানি জানি,
আসে জন্মান্তরের ব্যাথা!
তোমায় যেন পেয়েছি হাজারবার
তবু যেন হারিয়েছি তার বেশি
স্মৃতির আঁচড়ে চিনচিনে সে কথা।
দৃষ্টি
ঘুরে ফিরি
তোমার মুখের দিকে চাই
তুমিও চাও
বুঝি, তুমি চেয়েই থাকো -
তা জেনে
প্রাণে নিবিড় শান্তি খুঁজে পাই।
আবার ফিরি সংসারেতে
আবার কাজে জড়াই
ভয় নেই তো
পড়ি যদি, ধরবে তো গো-
তোমার দু'হাত বই
আমার, আর যে কিছু নাই।
দমকা হাওয়া
দমকা হাওয়া
ঝড়ের বেগে ভিতরে ঢুকল,
উল্টালো, লন্ডভন্ড হল
যা কিছু ছিল
সাজানো গোছানো।
অথচ, দরজাটা ভেজানোই ছিল
সে জানত না।
এখন আমরা দু'জনেই অপ্রস্তত।
দুই না
প্রথমে ভাবলাম,
শরীর থাকলে তুমি যাবে না।
শরীর ক্লান্ত হয়ে বলল, আর না।
তারপর ভাবলাম,
প্রাণ থাকলে তুমি যাবে না।
প্রাণ দৌড়ে হাঁপিয়ে বলল, আর না।
এরপর ভাবলাম,
মন থাকতে তুমি যাবে না।
মন কল্পনার ফানুস ফেটে পড়ল,
বলল, আর না।
ভাবলাম, সব হল শেষ
তুমি গেলে চলে বুঝি
আর রাখতে পারলাম না।
দমচাপা ঘর
মনের মধ্যে দমচাপা ঘর কার না থাকে? সে ঘরে যেতে ভয়। সে ঘরে জুজুবুড়ির বাস। সে ঘরে একবার সেঁদোলে বেরোবার পথ পাওয়া দায়। সেখানে অনেক অপমান, অনেক ক্ষোভ, অনেক বিষজ্বালা। সে ঘরে অনেক অপূর্ণ সাধের দীর্ঘশ্বাস, অনেক স্বপ্নের জ্যান্ত কবর, অনেক অভিমান জমা জঙ্গলের একাকীত্ব।
দেহ ও মন
১
------
অহংকার আর কোষ্ঠকাঠিন্যের কোথাও একটা মিল আছে। তা বলে এ বলতে চাইছি না যে, অহংকারী লোক মাত্রই কোষ্ঠকাঠিন্য হয় (আর যদি হয়ও বা, সে নেহাতই কাকতালীয়)।
দেখতে দেখতে সময় গেল
দিও
কিছু বাতিল হয়ে যাওয়া সময়
কিছু কেউ না শোনা কথা
কিছু না হারাতে চাওয়া ব্যথা
আমার জন্য রেখো
আমি সময় করে নিয়ে আসব
দীর্ঘ পথ চলার শেষে
দিলীপকুমার ও সায়রা বানু
দীর্ঘশ্বাসেরা তত দীর্ঘ নয়
দীর্ঘশ্বাসেরা তত দীর্ঘ নয়, যত দীর্ঘ তাদের ছায়ারা
কল্পনাদের চোখ ধাঁধিয়েছে উচ্চ আশার ধোঁয়ারা
দেবজ্যোতিকে
বয়সে অনুজ ।
হলে কি হবে ?
মাথার মধ্যে লাইব্রেরী ।
নানান কাব্য এখানে ওখানে ,
মনের মধ্যে ছড়াছড়ি ।
কিছু কাব্য অনুবাদ কর ,
বললাম খুব আশায় ভাই ;
দেশ বিদেশের নানান লেখা ,
তোমার ভাষায় পড়তে চাই ।
দু'পা
দু'পা পাশেই তো চলতে চেয়েছিলাম
পা দাপিয়ে ধূলো উড়ালে কেন?
তোমার না হয় অনেক দূরের পথ
রাস্তা বাঁকা অনেক চড়াই উতরাই
তবু মাঝপথেতে বসে পড়লে কেন?
রাস্তা আমার খানিক দূর যাক
তোমার সাথে তোমার পাশে থেকে
তারপরেতে যেখানে নেবে বাঁক
আপনি গতি ফিরিয়ে নেব বেঁকে
দৃষ্টি মণিতে বাধা হয়ে আসে জল
দহন
দেশলাই
রাস্তাটা পেরোলেই দোকান। পরিতোষ তাও যেতে পারছে না। ওর পা যেন কিসে আটকে ধরেছে। কোমর থেকে পায়ের পাতা অবধি ছিঁড়ে যাচ্ছে ব্যাথায়। তবু এক প্যাকেট সিগারেট না হলে চলছেই না।
দুই
ভাব যেখানে রাজী
শরীর সেখানে নয়
শরীর যে পথে রাজী
ভাব সেখানে নয়
এ দ্বন্দ্ব সব দ্বন্দ্বের মূল রে মন
হাওয়া যেখানে ভাসে
পাথর সেখানে নয়
পাথরের বুকে বাতাস কোথায়?
তবু দুই অস্তিত্বই কালের স্রোতে বয়
দ্বন্দ্ব
রাস্তাটা নিজের হাতে দু'টুকরো করে কাটলে
এখন নিজেকে দু'টুকরো করবে কিনা ভাবছ
চেনা রাস্তার একঘেয়েমিতে ঘরের ভিত নাড়লে
একই গুটি সাজিয়ে বসে
নিজেকে নিজেরই প্রতিপক্ষ করছ
দোহাই
আমার দুর্বলতা
আমার ভয়
আমার ব্যাকুলতা
আমার নিরাপত্তাহীনতা
এ সব নিয়ে
আমি তোমার দরজায় আসব
যে তুমি ভগবান নও,
যে তুমি মানুষের মধ্যে মনুষ্যত্ব
তার কাছে
দুটো ধর্ম আছে
দুটো ধর্ম আছে
ক্ষমতার ধর্ম আর ভালোবাসার ধর্ম
মাঝে মাঝে অদল বদল হয়ে যায়
মুখ পোশাক চিহ্ন
গুলিয়ে ফেলা কোনো ধর্ম না
গুলিয়ে ফেলাই অধর্ম
দহন দানে
অবশেষে কিছু কাদা গা থেকে ঝরে পড়ল
কাদাগুলো গায়ে লেপটে
আমার শরীরের আকার নিয়েছিল
আমার হাঁটতে চলতে পায়ের ছাপে লাগছিল কাদা
ক'দিন তাই পরিস্কার মেঝে এড়িয়ে চলছিলাম
কে বলল কানে কানে –
বাইরে গিয়ে দাঁড়া
সূর্যের তাপ কাদার প্রাণরস নেয় শুষে
দ্বিধা
মুহুর্তরা সামনে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে
লাভ ক্ষতির হিসাব নিল ঝরাপাতা
দু'হাত ঝেড়ে, সামনে তাকিয়ে আছি
কিছুটা দ্বৈধ। যাওয়ার ছিল?
না ছিল কারোর আসার কথা?
(ছবিঃ জয়দীপ ঘোষ)
দ্বন্দ্ব
দুপক্ষ
রাস্তাটার মাঝ বরাবর চিড় ধরল। সবাই ভাবল দুটো পথ হবে বুঝি এবার। ফাটল ধরে ধরে এগোতে লাগল সবাই। কোথায় গেছে তবে দুটো রাস্তা দুদিকে?
দ্বিধা
ফেরার কথা ছিল দু'জনেরই
ফেরা হল না
অনায়াসেই ফেরা যেত যদিও
অসঙ্কোচে কাটানো সময়
ফিরতে চাইল না দ্বিধার হাত ধরে
দুই রূপেই
জেগে ছিলাম
নদীটাও জেগেছিল
সারারাত জেগে আমরা দুজনে
পাড় ভাঙার আওয়াজ শুনছিলাম
ভোরে উঠে দেখি
মুখ থুবড়ে পড়া নীড়ের পাশে
মাটিতে লুটিয়ে চোখ না ফোটা পাখি
দরজাটা খুলবে জানতাম
তাই টোকা দিইনি
...