নিরাবরণ
এ এক পৌরাণিক বসন্তের কথা। বিকাল থেকেই আজ বসন্তের দখিনা বাতাস বিভিন্ন ফুলের সৌরভ মদিরাপানে উন্মত্ত। প্রেমিক প্রেমিকার শরীর মনকে মদনাহত করে কামাগ্নিকে 'হু হু' করে জ্বালিয়ে পাগল করে তুলেছে। এতৎসত্ত্বেও ঋষিপুত্রের মন আজ ভীষণ অস্থির। আজও অপ্সরা আসবে। আজ তাদের মিলন শূণ্যমার্গে, ওই নীলাকাশের আঙিনায়। তবু সুদর্শন তরুণের মন কি এক চিন্তায় চঞ্চল।
নন্দিনী
কি অশান্ত হৃদয়কে বুকে করে বেড়িয়েছ এতদিন?
অবাধ্য জল ঘাটের কিনারায় মাথাকুটে মরে
পাড়ে উঠবে বলে
গঙ্গার পাড়ে দাঁড়িয়ে দেখেছি অজস্রবার
পা ভিজিয়েছি সেই অবাধ্য জলে
না হয় আমি
নিয়ন আলো
ছোট্ট শরীরটা মোড়া সোয়েটারের মোড়কে
নাবিক
বাসনাগুলোকে নাবিক করেছি। খালাসির কাজে ছিল ওরা। তাদের দিলাম নাবিকের ভার।
নিশুতিরাতের হাতছানি
না-স্পর্শ
আমি যে ঠিক প্রতিশোধ নিতে চাই
তা না
আমি যে ক্ষমা করেছি সম্পূর্ণভাবে
নয়
বাতাস ঢুকল পর্দা উড়িয়ে
এসেই প্রশ্ন, গলা জড়িয়ে
এসেছিল বুঝি, ফিরে গেল?
কি ভাবে খবর হল?
তোমার গায়ে এখনো যে তার গন্ধ
যা অসভ্য! আগল করি বন্ধ
লজ্জা হল?
বয়েই গেল
মরবি নাকি!
সে আর বাকি?
কতবার মলি? তাও গোনা হয়?
হাজার কোটি উনিশ লক্ষ নয়
নয়েই শেষে আটকে গেল, কি ভয়?
নাস্তিক অন্তর্যামী
যত ভয় ভাবনা ব্যর্থতা অক্ষমতা
মনের এ কোণ, সে কোণ থেকে
সব ঝেঁটিয়ে -
ঝেঁটিয়ে ঝেঁটিয়ে কেঁদে কঁকিয়ে
এনে ফেলি সিংহাসনে রেখে
সামনে আমার ভগবান,
ইহকাল পরকাল
আছেন বরাভয় দিয়ে
না চাইতেই
না চাইতেই কি এসে পড়িনি সবার ভীড়ে
হঠাৎ করে?
না চাইতেই কি দু'হাতে পাইনি অনেক কিছু
গভীর করে?
নির্ভয়া
শুনেছি একটা ইন্দ্রিয় বিকল হলে বাকি ইন্দ্রিয়গুলো নাকি খুব শক্তিশালী হয়ে ওঠে।
আচ্ছা মন বিকল হলে কি শরীর শক্তিশালী হয়ে ওঠে আরো বেশি? অনুভব বা বোধশক্তি কমে গেলে কি ভোগ শক্তি আরো তীব্র হয়ে ওঠে? মনে হয় তাই। তা না হলে একজন মানুষের ইচ্ছার বিরুদ্ধে, নিজের মনুষ্যত্ত্বের মৃত্যু ঘটিয়ে, এত পাশবিক হওয়ার আত্ম-অনুমতি পায় কি করে আরেকজন মানুষ?
না কল্পনা
না
বুঝত না?
বলিনি তো!
মানত না।
ডাকত না?
বলিনি তো!
চাইত না।
নীল অনন্ত সুখে
রাস্তায় খানিক বৃষ্টির জল জমে
চলতে গিয়ে থমকালাম আনমনে
নিজেকে হারালে
নিজেকে হারালে
আয়নার সামনে দাঁড়িও
নিজের দিকে তাকিও।
উঁহু, তোমার চোখে না
আমার চোখে নিজেকে দেখো
তুমি আমার প্রেমের মূর্ত ভাষ্য
এটা জেনো।
তুমি হারাবে না,
আমার যা কিছু সত্য
তা 'আমাদের' ঘিরে,
তোমারও তাই।
মানুষ সত্যে হারায় না,
হারায় মিথ্যাকে
সত্যে ফিরে।
নোঙরে কিছুটা সময়
নোঙরে কিছুটা সময় আটকে
বৈঠা সব শোধ করে দেবে
যদি পালে তোমার বাতাস পাই
না হয়
মনে কোরো না তোমায় আমি দেখতে পাচ্ছি না।
ভুলেও ভেবো না সে কথা।
ঈশ্বরও তোমায় ভুললে ভুলতে পারেন।
আমি পারি না এক দন্ডও
এমনকি তুমি লক্ষ যোজন দূরে থাকলেও।
নীল আঁচল
তখন মা অসুস্থ। তবু কয়েকদিন কিছুটা সুস্থ আছেন দেখে নিজেই একদিন আমায় বললেন, সারা দিন আমায় নিয়ে থাকিস, বাইরে কোথাও থেকে একটু ঘুরে আয়।
না থাকলে
তোমায় তো রোজ দেখি
তোমায় দেখতে দেখতে আমার
সকাল থেকে সন্ধ্যে
ফিরে রাত আবার হয় সকাল
তবু কথা ফুরালো না। চোখের তৃষ্ণা ফুরালো না।
নয়
১
---
যদি চাও তো দিতে পারি ফুল
তোমার দু'হাত ভরে
তবে জেনো,
আমি ফুল বিক্ৰী করি না
নদী
কিছু ভালোবাসা দু'হাতে ধরে না
দু'হাত ছাপিয়ে নদী হয়ে যায়
সে নদী শুধু কি একলা গোপনে?
না গো না, না গো না
সে নদীর কুলে স্তব প্রার্থনা
আজান কলমা সে নদীর ঢেউয়ে
তুমি চাইলেও নামতে পারো
শুধু দু'চোখে আনো আলোর খিদে
নৈর্ব্যক্তিক
আমার সব কবিতাই তোমায় নিয়ে।
যে তুমি আমার চেনা-অচেনার আলপথে
নিশ্চিন্ত আপন অস্তিত্বে।
সম্পর্কের সুনিপুণ সংজ্ঞায় না -
যে আলো জাগরণের শেষ সীমানায়
ঘুমের প্রান্তে আলোর লালিমা ছড়াতে জানে -
নীলে ডোবানো
নিজেকে দিই নি
নিজেকে দিই নি
তাই পাইওনি
দেওয়ার কথায় এড়িয়ে গেছি
তাই বুকে এত কৈফিয়ৎ জমে
সময়ের স্রোত সংশয় আবর্তে আটকে
নিজেকে নিয়ে একা
যারা যারা, যা যা
খুঁজতে এসেছিল
চাইতে এসেছিল
দেখতে এসেছিল
নাম কথা
জবা টগর রজনীগন্ধা ইত্যাদি
মাত্র কয়েকটা ফুলই চিনি
দেখেছি হয় তো আরো অনেক রকম ফুল।
নাম জানি না।
তাতে কি আর এসে যায় বলো?
ফুল তো ফুলই।
যেমন তোমার কথা।
না না, কাছে এসো না
যেখানেই স্বাধীনতা সেখানেই বৈচিত্র্য। মানুষ স্বাধীন হল চিন্তায়। হল বৈচিত্র্যময়। আদবকায়দা, পোশাক-আশাক, রীতিনীতি, বিশ্বাস, ধর্ম - সব হল বৈচিত্র্যময়।
বিজ্ঞান এল এগিয়ে। সবাই এলো কাছাকাছি। কিছুটা অতিরিক্ত কাছাকাছি। যেন দরজা খুললেই ভিনদেশ। টিভিতে, উড়োপথে হাতের কাছেই সারাবিশ্ব। ইন্টারনেট চিত্রগুপ্তের খাতাকেও নস্যি করে দিয়েছে।
নির্বিষাদ
নিত্য নতুন ফুল ফোটেনা
নিত্য নতুন ফুল ফোটেনা
ফুল যা ফোটে একই
দেখার চোখে নতুন রে সে
সময় বলতে যা বুঝিস
সেও মন না থাকলে ফাঁকি
নির্দিষ্ট গন্তব্য থাকে
সব রাস্তারই একটা নিজস্ব নির্দিষ্ট গন্তব্য থাকে
তোমার সাথে তা নাও মিলতে পারে
রাস্তার সাথে ঝগড়া বাধিয়ে লাভ নেই
তুমি চাইলে নিজেকে পাল্টালেও পাল্টাতে পারো
সে চাইলেও কি আর কখনো পাশ ফিরতে পারে?
নিজের মানুষ
কাছের মানুষ আছে ক'জন
নিজের মানুষ নেই
নিজের মানুষ খুঁজতে গিয়ে
তোমায় পেলাম সেই
মনের মানুষ হয়ে এলে
নিজের মানুষ যে গো
ও মন ছাড় রে এবার দুনিয়াদারি
ভিতর ঘরটা গোছা না গো
নত হয়ে আসি
নীল
কাজের দিদি সাতসক্কালে এসে উপস্থিত। বললাম, এত সকাল সকাল? সে বলল, আজ নীলের উপোস যে। তাড়াতাড়ি কাজ সেরে গঙ্গায় যাব স্নানে।
খানিক পর রান্নার দিদি। সেও তাড়াতাড়ি। কারণ এক, নীলের উপোস। মায়ের, সন্তানের মঙ্গলের জন্য প্রার্থনা।
নিষ্কম্পমান
একটা অদৃশ্য প্রদীপ জ্বলছে
অদৃশ্য অন্ধকারের বুক চিরে
দমকা এক অদৃশ্য হাওয়া
তাকে নেভাতে এলো
অদৃশ্য আতঙ্কে হৃদয় উঠল কেঁপে
নীরব প্রার্থনা রইল ভোরের কুঁড়ির মত
পূবাকাশে চেয়ে
সারা গায়ে তার শিশির অশ্রুজল
নবজাগরণ
সন্ধ্যা আসন্ন। নদীর জলে অস্তমিত সূর্যের শেষ আলোর তরল স্পন্দিত রূপ। মন্দ বাতাস শিরীষ ফুলের গন্ধে প্রমত্ত।
নিম খাওয়ালে চিনি বলে
যে ভয়গুলোকে প্রাণপণে এড়িয়ে চলার চেষ্টা করেছি, মনে হয়েছে বারবার যে এই কাল্পনিক ভয়ংকর ঘটনাগুলোর একাংশও যদি বাস্তব জীবনে ঘটে তবে মরে যাব!