শুনেছি একটা ইন্দ্রিয় বিকল হলে বাকি ইন্দ্রিয়গুলো নাকি খুব শক্তিশালী হয়ে ওঠে।
আচ্ছা মন বিকল হলে কি শরীর শক্তিশালী হয়ে ওঠে আরো বেশি? অনুভব বা বোধশক্তি কমে গেলে কি ভোগ শক্তি আরো তীব্র হয়ে ওঠে? মনে হয় তাই। তা না হলে একজন মানুষের ইচ্ছার বিরুদ্ধে, নিজের মনুষ্যত্ত্বের মৃত্যু ঘটিয়ে, এত পাশবিক হওয়ার আত্ম-অনুমতি পায় কি করে আরেকজন মানুষ?
আমি যাই করি না কেন, আগে নিজের অনুমতি তো নিতে হয়? কে দেয় ভিতর থেকে সে অনুমতি? কেউ হয়তো বলবেন তারা অতশত ভাবে না। ঝোঁকের মাথায় এগুলো হয়ে যায়। তাই কি? ঝোঁকের মাথার এত শক্তি, এত পরিকল্পনা করার ক্ষমতা থাকে বুঝি? থাকে না। হতে পারে না। সমাজ তথা মনের গভীরে কোনো একটা রোগ বাসা বাঁধছে। সেটার খোঁজ হচ্চে কই? ঘটনা ঘটছে। সাংবাদিক 'গল্প' পাচ্ছেন, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বেরা হাতিয়ার পাচ্ছেন, লেখক-কবি বিষয় পাচ্ছেন। কিন্তু প্রতিকার কি? মানসিক শিক্ষার কোন অপূর্ণতা এর জন্য দায়ী, কি ভাবে তা পূরণ করা সম্ভব - এ নিয়ে আর কত ঘটনা ঘটার পর, তা নিয়ে ভাবার সময় হবে? যারা এ কাজে লিপ্ত হয়েছিল, তাদের মানসিক গঠনের ওপর পরীক্ষা হোক, অনুসন্ধান হোক। মনোবিদরা বসুন কারাগার বন্দী সেই অসামাজিক মনগুলোকে নিয়ে। আলোচনা হোক, খোঁজ শুরু হোক। তথ্যচিত্র নিষিদ্ধ করে না, আরো তথ্যচিত্র বানাবার উৎসাহ দিয়ে। যাতে আরো গভীরে যাওয়া যায়, মোমবাতি মিছিলে সামিল হওয়ার চেয়েও যার ফল আরো বহুলাংশে সুদূরপ্রসারী বলে আমার অন্তত বিশ্বাস।
না তো এটাই কি ঠিক যে, আমরা নিজেরা যতটা না সংযত থাকার জন্য তৃপ্তি অনুভব করি, অবচেতন মনে তার চেয়ে ঢের অতৃপ্তি অনুভব করি নিজের ভীরু সত্তার জন্য, যে সংযমী মুখোশের আড়ালে থাকে। ভীরু কামনা কি একে মনের পিছনের দিকের দরজা খুলে দেয়? তা না হলে সমাজের এক বিরাট অংশ এত নীরব কেন? এত গা সওয়া কেন? সেটা কি শুধুই ভয়ে, না চিত্ত জড়ত্ত্বে? নাকি আমরা সবাই সেই দিনটার মত ধৃতরাষ্ট্রের রাজ সভায় বসে আছি, যেদিন কেউ 'আকাশ পানে হাত' বাড়িয়েছিল, 'কিসের তরে' - না? মান রক্ষার প্রার্থনায়। ব্যাসদেব তো না হয় কাপড় জুগিয়েছিলেন কলমের আঁচড়ে। এখন?
আমার বিশ্বাস, মনোবিজ্ঞানই পথ দেখাবে, মনের শুভবুদ্ধির আলো জ্বেলে, আদিম গুহায় ঢুকে এ রোগের জীবাণু আবিস্কার করে। রুগীর মনেই আছে রোগের কারণ। শুরু হোক অন্বেষণ। সুস্থ সমাজ গড়তে এ অত্যাবশ্যক। তারপর না হয় মঙ্গলাভিযান তথা আরো অন্যান্য বিষয় নিয়ে ভাবা যাবে।
(আজ বিদ্যাসাগর মহাশয়ের জন্মদিন। তিনি বর্ণপরিচয় শিখিয়েছিলেন, এ আমার কাছে খুব বড় কথা একটা নয়। তিনি সমাজের একটা খুব জটিল, নৃশংস, অমানবিক দিকের দিকে আলোকপাত করেছিলেন, বিদ্রোহ করে উঠেছিলেন, আমূল পরিবর্তনের চেষ্টা করেছিলেন - প্রথম বোধহয় মেয়েদের মানুষ বলে অনুভব করেছিলেন। এটাই আমায় সব চাইতে বেশি ভাবায়। আজ এ লেখাটা তাঁর অসীম প্রবল ব্যক্তিত্বের পায়ে আমার অযোগ্য প্রণামীস্বরূপ রাখলাম)