Skip to main content


তখন মা অসুস্থ। তবু কয়েকদিন কিছুটা সুস্থ আছেন দেখে নিজেই একদিন আমায় বললেন, সারা দিন আমায় নিয়ে থাকিস, বাইরে কোথাও থেকে একটু ঘুরে আয়। 


   আমার সেই প্রথম মাকে ছেড়ে, শুধু বন্ধুদের সাথে বেড়াতে যাওয়া। পুরী। Weekend tour. ফেরার আগের দিন হঠাৎ মনে হল মায়ের জন্য কিছু একটা কিনি। একটা শাড়ীর দোকানে ঢুকলাম, স্বর্গদ্বারের মোড়েই। বেশ বড়। কোনোদিন শাড়ি কিনিনি নিজে থেকে, বেশ একটা উত্তেজনা লাগছে। দোকানী বিভিন্ন শাড়ি দেখাচ্ছেন, আমি তাতে মাকে কল্পনা করছি, কেমন লাগবে। হঠাৎ একটা নীল রঙের শাড়ি, তাতেসাদা কাজ করা খুব পছন্দ হল। মনে হল যেন নীল সমুদ্র পাড়ে এসে ভাঙছে, তাতে সাদা ফেনা শাড়ির পাড়ে স্থির হয়ে ধরা পড়েছে। মনে মনে মায়ের উদ্ভাসিত মুখটা মনে পড়ে বেশ উৎফুল্ল হয়ে উঠলাম।

    বাড়ি ফিরে, হাত মুখ ধোওয়ার আগেই মায়ের হাতে শাড়িটা দিলাম। মা ঠাকুর ঘরে ছিলেন। দু'হাত বাড়িয়ে নিলেন। কি যে প্রসন্ন মুখ, কি বলব! 

    দু'দিন পর থেকেই অসুস্থতাটা বাড়তে শুরু করল। দিন যত যেতে লাগল, তত খারাপের দিকে গেল। শাড়িটা আলমারিতে প্যাকেট শুদ্ধ আবদ্ধ, ভুলেই গেলাম ওটার কথা।

   অবশেষে মনে পড়ল। মাকে বাইরের উঠানে শোয়ানো। অন্তিম যাত্রার প্রস্তুতি চলছে। এমন সময় আমার হঠাৎ মনে পড়ল শাড়িটার কথা। মনে হল, আর তো দেখতে পাবো না, কেমন লাগে মাকে নীল শাড়িটায়। ছুটে গিয়ে কাউকে একটা বললাম (খুব সম্ভবত দিদিকে), দে না মাকে শাড়িটা পরিয়ে।

   পরানো হল। খুব সুন্দরভাবে। যে অসীমের পথে তাঁর যাত্রা যেন সেই অসীম নীল রঙে তাঁর সর্বাঙ্গ বরণ করে নিল। শরীরের সাথে, শাড়িও ছাই হল।

   তিন বছর হল, আজও আমি কারোর জন্য শাড়ি কিনতে পারি না। জানি না, কেমন একটা ভয় করে। যদি...

এ কথাগুলো খুবই ব্যক্তিগত জানি। তবু নিজের ভিতরটায় কোথায় যেন ব্যক্তিগত আর সমষ্টিগতর রেখাটা গুলিয়ে যায়। একই তো হৃদয়, তার অনুভূতিগুলোকে আর 'আমার' করে আলাদা করি কি করে!