১
---
ওর ভালো নাম সুজিত। ডাক নাম জিৎ। পাড়ায় ওই নামেই ডাকে। ক্লাস নাইনে পড়ে - ফর্সা, ছিপছিপে গড়ন। মুখের গঠন নিঁখুত। টানা নাক, পাত্লা লাল ঠোঁট, দৃষ্টিটা গভীর, উদাস।
এতো গেল বাইরের কথা। মনে মনে সে বড় অদ্ভুত – এটা তার নিজের মনে হয়। সে ছেলে, তবু যেন ছেলে নয়। তার বন্ধুদের সাথে ও যেন কিছুতেই নিজেকে মেলাতে পারে না। তার একটা নিজের জগৎ আছে – সেখানে সে ছবি আঁকে, পুতুল বানায়, ঠাকুর-দেবতা গড়ে। তার বন্ধুরা যখন মোবাইলে হিরোইনের ছবি দেখে, মেয়েদের শরীরের প্রতি তার কোনো আগ্রহই হয় না। বরং তার মনে হয়, “ঈস্! আমি যদি এমন হতাম, এমন সাজতে পারতাম!”
সেজেওছে তো সে। কতবার রাত্তিরে লুকিয়ে লুকিয়ে দিদির সালোয়ার, কামিজ, ব্রা, প্যান্টি পরে শুয়েছে। উফ্। তখন কেমন যেন একটা উত্তেজনা, ভালো লাগা তার শরীর-মনকে সাপের মত বেড় দিয়ে ঘিরে থাকে। আয়নাতে নিজেকে দেখে নিজেই বলে, “এটাই তো আমি!”
আর যখন বন্ধুরা মোবাইলে বাজে ভিডিও দেখে, তার প্রথম প্রথম গা গোলাতো, কিন্তু এখন কেমন যেন লাগে নগ্ন পুরুষ শরীর দেখলে। তার মাথা গরম হয়, হৃৎপিন্ডটার শব্দ শুনলে মনে হয় তার পাশের বন্ধুটাও বোধহয় শুনতে পাবে। আর শরীরের নীচের অঙ্গ – ছিঃ ছিঃ! সে লজ্জায় নিজের কাছ থেকেই কোথায় লুকাবে বুঝে পায় না।
কতবার ভেবেছে সে এসব ঠিক হচ্ছে না। প্রার্থনাও করেছে তাকে ভালো করে দেওয়ার জন্য। জোর করে এক মেয়ে বন্ধুকে প্রপোস করে প্রেমও করেছে ৫/৬ মাস – কিছুতেই কোনো লাভ হয়নি। খুব কষ্ট হয় যখন, একা একা সাইকেল নিয়ে ঘুরে বেড়ায়, কি কোন বন্ধুর বাড়ী যায়। বেশীরভাগ বন্ধুই তো তার মেয়ে; ছেলেরা তো তার - বউদি, লেডিস এসব ছাড়া কোনো নাম-ই খুঁজে পায় না । যদিও এখন এসব তার গা সওয়া হয়ে গেছে। অবশ্য দু’একজন আছে যারা কিছু বলে না।
জিৎ-এর একজনকে খুব ভাল লাগে – বুম্বাদা। পাশের বাড়ী থাকে 12-এ পড়ে। পড়াশুনায় তত ভালো নয়। কিন্তু দেখতে খুব সুন্দর, লম্বা, ফর্সা – ইয়া মোটা মোটা পেশী। হবে না! সারা দিন যা ব্যায়ামের বহর! তার উপর খুব বড়লোক বাবা-মায়ের একমাত্র ছেলে। ওর বাবা প্রোমোটার। জিৎ-এর বাবার তো বাজারে সামান্য ফুলের দোকান!
সে যাক্। বুম্বা যখন তাদের বাড়ীর সামনের পুকুরে স্নান করে, সে হাঁ করে জানলা দিয়ে দেখে। এতো সুন্দরও হয় একটা মানুষ! দেখতে দেখতে তার মাথাটা গরম হয়, শরীরে ঘাম হয়! উফ্... বেশীক্ষণ দেখতে পারে না।
ঘটনাটা ঘটল পুজোর ছুটীতে। জিৎ দিদির সালোয়ার কামিজগুলো ধোপার দোকানে দিয়ে বাড়ী ফিরছে, বুম্বাদা ডাকল, “কোথায় গিয়েছিলি?”
“ধোপার ওখানে...”
“একবার আসবি? তোর সাথে কথা আছে।”
“মাকে বলে আসি?”
বুম্বাদা কী একটা ভাবল। তারপর বলল, “আচ্ছা এক কাজ কর। আজ দুপুরে খাওয়া-দাওয়ার পর আয়। এই দুটো-আড়াইটে?”
“আচ্ছা।”
বাড়ীতে ফিরে জিৎ বুঝলো তার সারা শরীরে একটা উত্তেজনা হচ্ছে। কেমন গরম লাগছে। অস্থির অস্থির লাগছে। ফ্যানটা ফুল স্পীডে দিয়ে চিৎ হয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ল। দেওয়ালে চোখ গেল, দশটা পয়ত্রিশ। উফ্... আরো কতক্ষণ? কেন যে তখনই গেলাম না! এখন যাব ? না ! কী ভাববে?
টেবিল থেকে এ বই ও বই নিয়ে নাড়াচাড়া করতে লাগল। বাব্বাঃ! ঘড়িও যেন নড়তে চায় না।
২
---
কলিংবেল চাপার তিরিশ সেকেন্ডের মধ্যে বুম্বাদা দরজা খুলে দিল। খালি গায় – শুধু একটা বারমুডা পরে আছে। জিৎ-এর বুকটা ধক্ করে উঠল - এত হট! ঠিক সেই মোবাইল-ভিডিওর ছেলেদের মত।
“আয়”, বলে বুম্বাদা উপরে উঠতে লাগল। পেছনে জিৎ। বুম্বাদা এত কাছে আসতে চাইছে কেন? পাড়ায় তো খুব একটা মেশে না! সবাই একটু নাক উঁচু বলে ওদের। তার ওপরে জিৎ-রা গরীব।
“বোস্”, বলে বুম্বাদা পাখা চালিয়ে টিভি সেট-এর দিকে এগিয়ে গিয়ে রিমোটটা নিয়ে তার পাশে এসে বসল। এক্কেবারে পাশে।
“বাড়ীতে কেউ নেই?”, জিৎ-এর নিজের গলা নিজেরই অচেনা লাগলো। সে বেশ বুঝলো তার হাতের তলা, পায়ের তলা ঠান্ডা হয়ে গেছে। তার শীত করছে।
“না রে। মা-বাবা মাসীর বাড়ীতে গেছেন। কাল ফিরবেন।”
“ও...” জিৎ যন্ত্রের মত উত্তর দিল।
“তুই ওরকম আড়ষ্ট হয়ে আছিস কেন? easy হয়ে বোস”, বলে বুম্বা ওকে পাশ থেকে জড়িয়ে ধরল।
“আঃ...” আলতো আওয়াজ করলো জীৎ।
“আমি পুকুরে স্নান করার সময় ওরকম হাঁ করে তাকিয়ে থাকিস কেন?”, বুম্বাদার মুখ তার মুখের খুব কাছে। ধড়াস্ করে উঠল জিৎ-এর বুকটা। পেটের মধ্যেটা কেমন সব ফাঁকা হয়ে গেল এক লহমায়।
“ক-কই না তো...”, কোনরকমে শব্দক’টাকে ঠেলে গলা থেকে বার করল জিৎ। এরই মধ্যে বুম্বা রিমোটের সুইচ্ অন্ করে টিভি চালিয়েছে। তাতে বড়দের সিনেমা শুরু হল।
“তুমি দেখোনা। ন্যাকামী হচ্ছে?”, বলে বুম্বা জিৎ-এর জামা-প্যান্টটা জোর করে খুলে দিতে লাগল। অবশ্য বেশী জোর করতে হল না। জিৎ কেমন অসাড় হয়ে গেছে। সে বুঝতেই পারছে না, কি হচ্ছে। তার শরীর যেন আজ তার নিজেরই উপরে চড়াও হয়েছে। সে যেন সে নয়!
বুম্বা তখন পাগলের মত দাপাচ্ছে জিৎ-এর নরম, তপ্ত শরীর জুড়ে। জিৎ দু’হাতে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বুম্বাকে। তার যেন কেমন নেশার মত লাগতে শুরু করেছে। এতো জোর হয় একটা মানুষের শরীরে? সে কি স্বপ্ন দেখছে!
জিৎ যখন বাড়ী ফিরল তখন বোধহয় সাড়ে তিন্টে বেজে গেছে। তাই হবে, কারণ মায়ের সেই সিরিয়ালটা হচ্ছে। সে ক্লান্ত তবু কিরকম একটা তৃপ্তি তার সারা শরীরে, মনে। সে বাথরুমে গিয়ে স্নান করল। তারপর ঘুমোল। উঠল সন্ধ্যের পর। মা চা দিয়ে গেছে।
রাতে শোওয়ার সময় জামা খুলতে গিয়ে দেখল, তার বুকের মাঝে দুটো দাঁতের দাগ। তার বুক দুটো এখনো ব্যাথা ব্যাথা – এতো জোরে কেউ মোচড়ায়! অবশ্য ব্যাথা অনেকটা কমেছে।
এরপর থেকে মাঝে মাঝেই বুম্বার বাড়ী যাতায়াত শুরু হল জিৎ-এর। তার শরীরের একটা ক্ষত বুজতে না বুজতেই আরেকটা ক্ষত জন্ম নিল। তবু ভাল লাগে জিৎ-এর। আর একটা কথা মনে হয় তার। বুম্বাদার semen তো সে কতবার গিলে ফেলেছে। তার পেটে যদি বুম্বাদার বাচ্চা হয়? রাতে পাশবালিশ জড়িয়ে কতবার হাসি পেয়েছে তার।
তবে ভয়ও পেয়েছিল একিদন । যেদিন বুম্বা প্রথম ঐটা করেছিল। তার পায়খানা করতে কী ব্যাথাই না লেগেছিল। আঁতকে উঠেছিল প্যানে রক্ত দেখে! তার এইড্স হয়ে গেল নাকি! দু’দিন ঠিকমতো ঘুমোতে খেতেও পারেনি। এখন আর ভয় করে না। যা হবে হোক্। সে বুম্বাদাকে ভালবাসে – ব্যাস।
৩
---
২৬ শে জানুয়ারী। তার সারাজীবন মনে থাকবে দিনটা। যে দিনটার জন্য আজ সে শুধু জিৎ না – বেশ্যা জিৎ।
সেদিন বুম্বাদা নিজে এসেছিল তার বাড়ীতে, বিকেলবেলায়। জিৎ-এর বাড়ীর দরজা থেকেই ডাকলো, “জিৎ!” জিৎ ও তার মা টিভিতে যোধা-আকবর দেখছিল। দেখতে দেখতে মাঝেমাঝেই সে ঋত্ত্বিক রোশান-এর জায়গায় বুম্বাদাকে ভাবছিল, ঠিক এমন সময় বাইরে থেকে বুম্বাদার কন্ঠস্বর পেয়ে, প্রায় উড়ে গিয়ে দরজার সামনে দাঁড়ালো। একটা টাইট জিন্স আর লাল গেঞ্জী পরে কী সুন্দরই না লাগছিল বুম্বাদাকে – কেন যে বুম্বাদা বম্বে যায় না! তার প্রায়ই মনে হত কথাটা।
“আজ রাত্তিরে পিকনিক করবি?”
“কোথায়?”
“আমাদের বাড়ীতে, কেউ নেই, মা-বাবা পুরী গেছে।”
“তোমরা বড়রা থাকবে। আমি...” কথাটা শেষ হতে না হতেই জিৎ-এর মা পিছন থেকে বললেন, “ও মা! বাইরে কেন বাবা ? ভিতরে এসো।”
জিৎ এতোই মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিল যে তার মায়ের আসা সে টেরও পায়নি, আর বুম্বাদাকেও ভিতরে আসতে বলতে ভুলে গেছে। সে লজ্জা পেয়ে কী একটা বলতে যাচ্ছিল। তখনই বুম্বাদা বলল, “না না, কাকীমা। ঠিক আছে। বলছিলাম, আমরা আজ রাতে বাড়িতে পিকনিক করছি, জিৎ-কে যদি আমাদের সঙ্গে পিকনিক করতে দেন।”
“ঠিক আছে বাবা। আমি ওর বাবার সাথে কথা বলে নিই!”
এরপর দু’একটা সামান্য কথার পর বুম্বাদা বাড়ীর দিকে গেল।
বাবা যে ‘না’ বলবে না জিৎ সেটা আগে থেকেই জানতো। কারণ বুম্বাদার বাবা বিড়াট মস্তান। বাজারের তোলা আদায়কারীদের সাথেও বিড়াট দহরম-মহরম। তাই জিৎ-এর সাথে বুম্বার মেলামেশা বেড়ে ওঠায় বাবা-মা দু’জনেই খুব খুশী, জিৎ সেটা টের পায়।
সাড়ে সাতটা থেকেই পিকনিকের গানের আওয়াজ জিৎ তার বাড়ী থেকে শুনতে পাচ্ছিল, তবু তার কেন জানি যেতে ইচ্ছে করছিল না – কেমন একটা অস্বস্তি হচ্ছিল মনের মধ্যে। একবার ‘মাথা ধরেছে, যাব না’ বলে শুয়েও পড়েছিল। কিন্তু বাবার জোরে যেতেই হল। বাবা যখন নেশা করে রাত্তিরে বাড়ী ফেরে, জিৎ তখন খুব ভয় পায়। কেমন যেন মনে হয় এটা অন্য লোক। কখনো কখনো তো মা-কে কী মারই না মারে, আর কী ভাষা! ছোটোবেলায় সে খাটের তলায় ঢুকে কাঁপত আর হাউ-মাউ করে কাঁদত। এখন অবশ্য ব্যাপারটা গা-সওয়া হয়ে গিয়েছে। বোধহয় মায়েরও হয়ে গিয়েছে। বড়দের সবসময় কেমন যেন বুঝতেই পারে না জিৎ।
পিকনিকে যখন সে পৌছল তখন দশটা বেজে গেছে। ও বাবা! এ যে বেশীরভাগই পাড়ার রকবাজগুলো! ঘরের ভিতর মদের বোতল ছড়ানো-ছেটানো, ঘরময় সিগারেটের গন্ধে কেমন যেন দমবন্ধ হয়ে আসছিল জিৎ-এর। সে চুপ করে খাটের কোণে বসে একটা ম্যাগাজিন উল্টাতে লাগল।
কেউ কেউ দিদি, বৌদি, লেডিস ইত্যাদি যেমন করে, তেমন করছিল। যাক্ গে, এসব তো গা সওয়া!
খাওয়া-দাওয়া হতে রাত একটা হল। এর মাঝে বিশেষ কিছু ঘটেনি, শুধু একবার রাকেশ তার গালে একটা চুমু খেয়ে বুম্বার দিকে ফিরে বলল, “তোর বউয়ের গালে একটা চুমু দিলাম।”
বুম্বা সঙ্গে সঙ্গে একটা গালাগালি দিল। জিৎ-এর কান গরম হয়ে গেল। ‘ও জানল কী করে?’
ঘটনাটা শুরু হল খাওয়ার সময়। জিৎ তেমন কিছু খেতে পারছিল না, শুধু মনে হচ্ছিল কিছু একটা গোলমাল হচ্ছে। খাওয়ার সময় বিনোদ চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে বলে উঠল, “আজ শালা জিৎ-কেই বেশী বেশী করে খাওয়া। ওকেই তো সমস্ত ধকল নিতে হবে।”
সাথে সাথে সবার কী হাসি! এমন কী বুম্বাদারও। এখন এক-একসময় জিৎ-এর মনে হয়, কেন সে পালাল না । অবশ্য পরক্ষণেই ভাবে পালিয়েই বা সে যাবে কোথায়? সারা পৃথিবীতে কত বুম্বাদা আছে!
খাওয়ার পর শুরু হল মদের পালা। টিভিতে শুরু হল BF। বারোজন অধনগ্ন, মাতাল পুরুষ আর জিৎ। তার শরীরে প্রথম হাত দিল রাকেশ। জিৎ-কে জড়িয়ে তার ঠোঁটে নিজের ঠোঁট চেপে ধরল।
দু’একবার বৃথা ছাড়াবার চেষ্টা করে সে বুঝল, তা হওয়ার নয়। রাকেশের মুখের মদের গন্ধে, সিগারেটের গন্ধে তার পেটের ভিতরটা মোচড়াতে লাগল। সে কিছু বলার চেষ্টা করেও পারল না, অসহায়ের মত নিজেকে সমর্পণ করে দিল। শরীরটাকে সঁপে দিতে দিতে তার মায়ের মুখটা মনে পড়ল। সেই যখন বাবার মারে মা ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদত! আহা, আজ প্রথম মায়ের জন্য কেমন একটা সহানুভুতি জাগল তার মনে।
এরমধ্যে ওরা তাকে নগ্ন করে ফেলেছে। বোধহয় নিজেরাও তাই। জিৎ-এর তাকাতে ইচ্ছে করছে না। কে যেন বলল, “বুম্বা, তোমার মাল। তুমিই first...” এরপর সেই পুরোনো অনুভুতি। কিন্তু আজ সারা শরীরে তীব্র ঘেন্না। নিজের চোখের কোল বেয়ে দু’ফোঁটা জলও পড়ল। কে যেন বলল, “লাগছে? কিন্তু এ সাইজ তো তোমার চেনা বৌদি! এ যে দাদারটা গো!”
তারপর সে কী হাসি, কী গালাগালি... আর কী...
৪
---
জিৎ যখন বাড়ী ফিরল তখন শেষরাত। সোজা বাথরুমে ঢুকল। দরজা বন্ধ করে বেশ কিছুক্ষণ কাঁদার চেষ্টা করল। পেল, কিন্তু হল না। শুধু বমি হল। বালতিতে রাখা জল জামা-কাপড় না খুলেই মাথায় ঢালতে শুরু করল। দু’চার মগ ঢালার পর খেয়াল হল, তাই তো! তার গা ভিজছে না! শরীরটার কথা সে ভুলেই গিয়েছিল, যেন সেটা বুম্বার বাড়িতেই ফেলে এসেছে। সারা শরীরে তীব্র যন্ত্রণা টের পেল। জামা-প্যান্ট খুলে উবু হয়ে বাথরুমেই বসল। শুনতে পেল দূরের মন্দির থেকে ভজনের সুর ভেসে আসছে। ওরা রোজ চালায় সাড়ে চারটে থেকে। কেমন যেন তার কান্না পেতে লাগল । শুধু গোঙাতে লাগল, পাছে মা আর তার মদ্যপ বাবা জেগে যায়!
তারপর কখন সে বিছানায় শুয়েছে, সে নিজেও জানেনা। যখন ঘুম ভাঙল তখন বেলা প্রায় বারোটা। ঘুম থেকে উঠে চুপচাপ খাটের ওপর বসে সামনের জানলা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে রইল। পুকুর, রেললাইন, খোকাদাদুর মুদির দোকান - সব সব তেমনই আছে, অথচ সবকিছু কেমন অচেনা লাগছে তার! সবচেয়ে বেশী অচেনা লাগছে নিজেকে! সে কে ? ধর্ষিত পুরুষ? না ধর্ষিতা নারী?
ওঃ, বলাই তো হয়নি! বেরোবার সময় বুম্বাদা তাকে পাঁচশো টাকার একটা নোট দিয়েছে, বলেছে লাগলে আরোও দেবে যদি তাদের কথামত সে চলে। আরোও বলেছে, যদি সে না শোনে বা বুম্বাদার ভাষায় কোনো ‘ক্যাঁচাল’ করে, তাহলে বাবার দোকানও থাকবে না, বাবার লাশও নাকি খুঁজে পাওয়া যাবে না।
এরপর থেকে প্রায়ই ডাক আসতে লাগল বিভিন্ন দাদাদের কাছ থেকে। এমনকি বিয়ে করা লোকেদের কাছ থেকেও! ‘শালা...!’ আজকাল জিৎ কথায় কথায় খিস্তি করে। লোকেদের চাহনি দেখলে যেন শালাদের নুনু অবধি দেখতে পায়। জিৎ-এর এ পরিবর্তনে মা কাঁদেন, বাবা হেসে বলেন, “শালা বংশের রক্ত যাবে কোথায়! মাগী ভদ্দরলোক্ বানাচ্ছিল ছেলেকে!”
৫
---
এভাবে তিনবছর পার হল। জিৎ আজ পুরোপুরি পেশাদার। শুধু বুম্বা ডাকলে যায় না। শালাটাকে ভালবাসে যে এখনও! নিজের মনকেই গালাগালি দেয়, ‘শালা …! কত ন্যাকামীই না জানিস!’
আজকাল প্রায়ই রাতে তার ঘুম আসে না। মাথার মধ্যে সারারাত ধরে কি সব হিজিবিজি চিন্তা ঘুরে বেড়ায়। মাঝরাতে উঠে স্নান করে। দু’বার তো আত্মহত্যাও করতে গিয়েছিল। পারেনি। কেমন যেন ভয় করল। মাঝে মাঝে ভীষণ কান্না পায়! রাতে রেললাইনের ধারে বসে কাঁদে, বাথরুমে কাঁদে, বিছানায় শুয়ে শুয়ে কাঁদে। নিজের চোখের জল যখন গাল গড়িয়ে বালিশে এসে পড়ে, নিজেই অবাক হয়ে যায়। কেন কাঁদে সে? কে সে? পুরুষ, না নারী? ভাবে, একদিন না একদিন এর উত্তর সে পাবেই।
(ছবিঃ সুমন দাস)