এ এক পৌরাণিক বসন্তের কথা। বিকাল থেকেই আজ বসন্তের দখিনা বাতাস বিভিন্ন ফুলের সৌরভ মদিরাপানে উন্মত্ত। প্রেমিক প্রেমিকার শরীর মনকে মদনাহত করে কামাগ্নিকে 'হু হু' করে জ্বালিয়ে পাগল করে তুলেছে। এতৎসত্ত্বেও ঋষিপুত্রের মন আজ ভীষণ অস্থির। আজও অপ্সরা আসবে। আজ তাদের মিলন শূণ্যমার্গে, ওই নীলাকাশের আঙিনায়। তবু সুদর্শন তরুণের মন কি এক চিন্তায় চঞ্চল।
সন্ধ্যার প্রথম প্রহর। অপ্সরা তার সকল নিয়ে মিলিত হলেন ঋষিপুত্রের সাথে শূণ্যমার্গে, ঋষিপুত্রের যোগবলে। তিনিও লক্ষ্য করলেন ঋষিপুত্রের অন্যমনস্কতা। নীরব রইলেন।
ঋষিপুত্রের গভীর আলিঙ্গনপাশে আবদ্ধ সুন্দরী সমর্পণ করলেন নিজেকে তাঁর প্রেমিকের কাছে। তিনি জাগছেন। কুয়াশা যেন অপসারিত হচ্ছে ধীরে ধীরে।
ঋষিপুত্র অপ্সরার রক্তিম ওষ্ঠে নিজের ওষ্ঠ স্পর্শ করালেন। শিহরণ জাগল শরীর মন বেয়ে। তাঁর শ্বাসের বেগ হল দ্রুত ঘন, রোমকূপে বিন্দু বিন্দু জমল স্বেদ। তিনি ওষ্ঠ তুললেন। আলতোভাবে স্পর্শ করলেন তাঁর আরক্তিম বিম্বাধর নিজের দীর্ঘ তর্জনী দিয়ে। অপ্সরার দু'চোখ আবেশে বন্ধ।
না, আজ তিনি ভেসে যাবেন না। আজ তাঁর উত্তর জানতেই হবে। তিনি অপ্সরার পৃষ্ঠদেশে হাত দিয়ে উন্মুক্ত করলেন নীপবন্ধ। সে আবরণ অপ্সরার বক্ষকে নগ্ন করে উড়ে চলল নীচে, ভূমির দিকে।
ঋষিপুত্র কিছুক্ষণ সেদিকে চেয়ে রইলেন। তারপর তাকালেন উন্মুক্ত যৌবনগর্ব্বে উদ্ধত দুই স্তনযুগলের দিকে। আরক্তিম দুটো স্তনবৃন্ত সদ্য ফোটা পদ্মকলির ন্যায় গোলাপি আভায় সিক্ত। তিনি তাঁর ওষ্ঠ ও জিহ্বা দিয়ে সেই স্তনবৃন্ত স্পর্শ করলেন। তাঁর হাতের অঙ্গুলিগুলি দিয়ে দুই স্তনকে ধীরে ধীরে নিষ্পেষিত করতে করতে তিনি ভাবলেন, এই কি নারীর যৌবন রহস্য!?
"না না না। আরো গভীর, গভীরে তা..", তাঁর অন্তর বলে উঠল। তিনি মুখ তুলে অপ্সরার সুগভীর নাভির দিকে দৃষ্টিনিবদ্ধ করলেন। গভীর আবেশে চুম্বন করলেন সেটি। প্রাণ হয়ে উঠল উদ্বেল। তিনি পুনরায় সংযত করলেন নিজেকে। এও না, আরো আরো গভীর। তিনি এক ঝটিকায় অপ্সরার কটিবন্ধন করলেন মুক্ত। ফাল্গুন পূর্ণিমার পূর্ণচন্দ্রমা তারকাখচিত মধ্যনীলাম্বরে রাজকীয় বেশে জ্বাজল্যমান। তার স্নিগ্ধকিরণে দিগন্তব্যাপী মায়ারাজ্য সুধামগ্ন। সেই আলোয় সম্পুর্ণ নিরাবরণ অপ্সরাকে উজ্জ্বল জ্যোতিষ্কের মত লাগল ঋষিপুত্রের। তিনি নিজেকে নিজের মধ্যে ধারণ করে নিজেকেও নিরাবরণ করে সুনিবিড়ভাবে বেষ্টন করলেন অপ্সরার ক্ষীণতনুকে। তবু স্থির হতে পারলেন না। নারীর যৌবন রহস্যের নাগাল যে তাঁকে পেতেই হবে আজ!
তাঁর হাত জিহ্বা ওষ্ঠ পাগলের মত বিচরণ পর্যবেক্ষণ আস্বাদন করে চলল অপ্সরার সিক্ত উত্তপ্ত যোনি, দীর্ঘ ঊরু, উন্নত কোমল নিতম্ব ও সুবিন্যস্ত পদপল্লব। ঋষিপুত্র উঠছেন অধৈর্য হয়ে, তাঁর শ্বাস হয়েছে দ্রুততর, তাঁর স্বেদসিক্ত কলেবর, অপ্সরার জঙ্ঘোপরি তাঁর প্রবল গর্জনরত উপস্থ... অপ্সরা সবই অনুভব করছিলেন গভীর মাদকতার মধ্যেও। কি যেন খুঁজছেন ঋষিপুত্র। তিনি নির্বাক রইলেন, না হলে রসভঙ্গ হবে যে!
হঠাৎই ঋষিপুত্রের ধৈর্য বাঁধ ভাঙল। অপ্সরার নাভি, যোনি, ঊরু স্নাত হল ঋষিপুত্রের উত্তপ্ত বীর্যে। অপ্সরা চমকে উঠেও ক্ষণিকের মধ্যে নিজেকে স্থির করে নিজের ওষ্ঠদ্বয় ঋষিপুত্রের ওষ্ঠে চেপে ধরলেন, গভীরভাবে আলিঙ্গন করে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলেন তাঁকে। ইঙ্গিত করলেন নীচে ঝর্ণাধারার দিকে।
ঋষিপুত্র তাঁকে নিয়ে শুয়ে রইলেন ঝরণার বারিধারার নীচে, তিনি শুলেন অপ্সরার দেহের উপরে অপ্সরার কাঁধে মাথা গুঁজে। ঝর্ণাধারা তাঁদের ধৌত করে চলল নিজের স্বাভাবিক ছন্দে।
বোধহয় রাত্রির শেষ প্রহর। কতক্ষণ এভাবে শুয়ে রইলেন ঋষিপুত্র জানেন না। জানতে চানও না। তিনি তাঁর উত্তর পেয়েছেন। নারীর যৌবন মাদকতার বীজ নারীর নিজের শরীরে নেই, তা আছে পুরুষের কামনার মধ্যে লুক্কায়িত। তার প্রতিফলন সে পায় নারীশরীরে। যেমন পুষ্পের অন্তঃস্থল মকরন্দ হয়ে ওঠে পতঙ্গের কামনায়! ঠিক তেমন।
ঋষিপুত্রের মনে হল কি অপূর্ব জ্ঞান তিনি লাভ করলেন, কি এক আদিম অন্ধকারের পারে এলেন। তিনি মুখ তুলে অপ্সরার দিকে চাইলেন, কি অপূর্ব চোখ দু'খানি তাঁর। ঋষিপুত্রের চোখে জল এল। তিনি উপলব্ধি করলেন যে কমলখানি তাঁদের উভয়ের হৃদয়ে প্রস্ফুটিত, তা চিরকালের। তা বাইরের বসন্তের অপেক্ষা রাখে না। সে চিরবসন্তের। তাদের এ ক্ষণিকের কামনা চিরকালের গভীর কামনারই ছায়ামাত্র। অনন্তকালের চাওয়া ক্ষণিকের দেহতে ক্ষণকালের চাওয়া হয়ে দেখা দেয়। তারা চিরকালের।
তিনি অপ্সরাকে শান্ত গভীর চুম্বন করলেন, বললেন, তুমি আমার! চিরকালের আমার!
অপ্সরার কাছে এই কথাটি বহুকালের বিস্মৃত সুরের মত কানে বাজল। তাঁর চোখের কোল বেয়ে ঝর্ণাধারার সাথে অশ্রুধারা বইল।
তখন পূর্বকাশে অরুণাভা দেখা দিয়েছে। দূরে মন্দিরে শুরু হয়েছে স্তবগান। পাখির কলরবের সাথে তা মিশে ধ্বনিত হচ্ছে চিরপ্রেমের জয়ধ্বনি।
(ছবি - Suman)