Skip to main content

আংটিটা

অঞ্জু চায়ের কাপদুটো টেবিলে রাখতে রাখতে ঘরের পরিবেশটা বুঝে নিল। প্লাবনের চোখের কোল ফোলা। জুঁই যে সারারাত ঘুমায়নি অঞ্জু জানে। চোখ এতটা না ফুললে এত সকালে কেউ আসে? অঞ্জু কারোর মুখের দিকে না তাকিয়েই বলল, প্লাবন আজ দুপুরে খেয়ে যেও এখানেই….

    জুঁই বলে উঠল, না মা, তুমি ওকে নিয়ে ভেবো না, ও একটু পরেই বেরিয়ে যাবে…

মল্লিকা আর মল্লিকারা

চারটে দেওয়ালের মধ্যে যারা বেঁচে ছিল, তাদের মধ্যে সামাজিক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ দুজন, বিপিন আর মল্লিকা। আর কিছু টিকটিকি, আরশোলা, মাকড়সা, পিঁপড়ে, এরা এসেছে গেছে, নিজের আয়ু সবাই পূর্ণ করে যেতে পেরেছে তা ঠিক নয়, তবে কেউ কেউ পেরেছে। বিপিন ছাদ, বাথরুম, শোয়ার ঘর, বসার ঘর, পুজোর ঘর ছেড়েছে অনেক দিন হল। এখন একটা ফ্রেমে শীতগ্রীষ্মবর্ষা এক মুখভঙ্গি নিয়ে তাকিয়ে থাকে। সে মুখটা দেখে

আমার ভ্যাক্সিনটা?

সদানন্দ আর সন্ধ্যা লাইনে দাঁড়িয়ে। সন্ধ্যা সদানন্দের পিছনে দাঁড়িয়ে। ছিয়াত্তর বয়সের মানুষটার শরীর টাল খেয়ে যায় যখন তখন। লাঠিটাও শক্ত করে ধরে রাখতে পারে না। শিরা বেরোনো হাতটা থরথর করে কাঁপে। সন্ধ্যা অতটা অশক্ত নয়। এখনও চারটে বাড়ি কাজ করে সংসার চালায়। তার বয়েস তার মনে হয় আটান্ন হবে। কিন্তু আধার কার্ডে লেখা তেষট্টি। কি করে হয় কে জানে!

এই কি ঈশ্বর

নিজেকে ডিঙিয়ে বাইরে এসে লোকটা ভয় পেল? যে বাইরে এসে দাঁড়ালো আর যে ভিতরে ছিল - এরা কি দুটো আলাদা মানুষ? পাঁচিলটা কই? যেটা ডিঙিয়ে সে বাইরে এলো।

কর্তব্য

"কর্তব্যটুকু করে যাই, তারপর যা হবার ঈশ্বরই জানবেন।"


    নার্সকে কথাটা শেষ বলেছিল। এই বাক্যটা বলে আসছে একত্রিশ বছর বয়েস থেকে। আজ এই চুয়াত্তর বছর দশমাস তিনদিনের দিন শেষবার উচ্চারণ করল। কথাটা বলে শুলো। আর জাগল না।

জয়দেব ও বর্ষা

জয়দেব ভিজছেন। আষাঢ়ের প্রথম বর্ষা। চারদিক ঝাপসা হয়ে আছে। জয়দেব স্থির দাঁড়িয়ে। হাতদুটো বুকের কাছে জড়ো করা। জয়দেব তাকিয়ে শ্রীমন্দিরের দিকে। পতাকাটা আষাঢ়ের সজল বাতাসের দাপটে যেন সব ছিন্ন করে উড়ে যেতে চাইছে। জয়দেবের বুকের মধ্যেও যেন এক অবস্থা। জয়দেবের চোখের জল বর্ষার জলের সঙ্গে মিশে একাকার। যেমন নীলাচলে গলছে আষাঢ়ের আকাশ।

ডাক্তার আঙ্কেল

কিছু থাকে আলগা মানুষ। সারাক্ষণ তাদের আলগা কথা, আলগা ভাব, আলগা ভালোবাসা, আলগা হাসি-মজা। 

    আবার কিছু মানুষ থাকে নোঙর ফেলা। তাদের কথা গভীর, ভাব গভীর। কথা শুনলে বুকে ঠং করে লাগে। ভালোবাসা হাঁটুজলেই শেষ হয়ে যায় না। 

প্যাণ্ডেল

পুজোর প্যাণ্ডেলে বাঁধা বাঁশগুলো বিয়েবাড়ি হয়ে যখন গৃহপ্রবেশের অনুষ্ঠানে বাঁধা হচ্ছে, বাচ্চাটা চীৎকার করে বলে উঠল, বাবা এই সেই বাঁশটা দেখে যাও, যেটায় আমি আমার নাম লিখেছিলাম অষ্টমীর দিন, বুম্বা, এক রকম আছে। 

    তার ডাক কেউ শুনল না। ছেলেটা আবার নাম লিখল তিনবার, বুম্বা বুম্বা বুম্বা। কেউ দেখল না।

সাড়ে তিন মিনিট

আমার বগল ঘামছে। এসি অন। হাতের মুঠোটা শক্ত করে আছি। এটা রিফ্লেক্স অ্যাক্সন। টেনশান হলেই আমার হয়। ট্রেনটা মিস হবে। যশোবন্তপুর এক্সপ্রেস। ছাড়তে আর আধঘন্টা বাকি। কিন্তু যা জ্যাম, অসম্ভব। ফোন সুইচ অফ্ করে দিয়েছি। রেড্ডী অনেকক্ষণ ঢুকে গেছে স্টেশানে, আমি তখন বেলঘরিয়া ছাড়ছি। হাওড়া স্টেশানের পাশেই একটা হোটেলে ছিল। মনে হচ্ছে না পাবো। এমন জ্যাম যে আমি দরজাটাও খুলতে পারব না কোনোদ

পেটটা যেন না কামড়ায়

সমস্যা হল মোমবাতিটা কোথায় রাখবে। কারেন্ট চলে গেছে। বাথরুমটা ঘুটঘুটে অন্ধকার। এই সময়টা রোজ গা ধোয়া অভ্যাস। নইলে কে ঢোকে এই সময় এই অন্ধকারে।

Subscribe to অনুগল্প