Skip to main content

পূর্ব গগন ভাগে

আমিও খড়কুটো জড়ো করেছিলাম। আমিও বাসা বেঁধেছিলাম বিশাল অশ্বত্থ গাছটার একটা ডালের কোণায়। আমি জানতাম অশ্বত্থ গাছের চেয়ে বড় গাছ আর কি বা হতে পারে?
        ঝড় উঠল। আমি নিশ্চিত, যতই ঝড় হোক, ভাঙবে কি অশ্বত্থ? কক্ষনো না, কক্ষনো না।
        ঝড় বাড়ল। চারদিক ধুলায় ধুলায় ঢেকে অন্ধকার করে তুলল। গাছটা মাতাল না পাগল হল? সে উদ্দাম ঝড়ের সাথে যেন তাল রাখতে পারছে না আর। আমি বুঝতে পারছি তার শিকড় থেকে আর্তনাদ ভেসে আসছে। গাছের আরো আরো পাখিগুলো ভয়ে, আতঙ্কে দিশাহারা হয়ে উড়ে বেড়াতে লাগল। ঝড়ের হাওয়ার সাথে তাদের ডানা পেরে উঠবে কেন? ঝড়ের শাসনে তারা মুখ থুবড়ে মাটিতে পড়তে লাগল। গাছের ডালে ছিটকে এসে লাগল তাদের কোমল শরীর।
...

মোহনা

আমি মোহনার সামনে দাঁড়িয়ে। মোহনা দিগন্তলীন হয়ে আমার সামনে শুয়ে। সুদূর অতীতের গুহা থেকে হামাগুড়ি দিয়ে দিয়ে বেরিয়ে আসছে লক্ষ লক্ষ খণ্ড খণ্ড আমি। আমার উপর দিয়ে উড়ে চলে গেল তারা গোধূলির আলোছায়া মাখা আলোয় বাদুড়ের মত। কেউ কেউ মোহনার জলে ডুবে গেল। কেউ কেউ দিগন্তে গেল মিলিয়ে। যেন একটা শুকনো পাতা ভরা গাছ, এক দমকা হাওয়ায় সব পাতা হারিয়ে, শূন্য ডালগুলো আকাশের দিকে মেলে স্থির উদাস হয়ে দাঁড়িয়ে। আমার কোথাও যাবার নেই।
...

মানবিক

হাওয়াটা সুন্দর, মানবিকও 
হাওয়া কখনো মানবিক হয় ?
হয়। তুমি চুল আঁচড়াওনি কেন? তোমায় খোলা চুলের চাইতে খোঁপা চুলে সুন্দর দেখায়।
...

আধা এবং আধা

মানুষটা একটা ডোবার ধরে থাকত। ডোবার জলে নাইত। তার মাথায় ছিল দিগন্তলীন অসীম এক সমুদ্র স্বপ্ন।
মানুষটা কুঁড়ে ঘরে থাকত। কুঁড়ে ঘরেই ঘুমাতো। বর্ষা-বসন্ত-গ্রীষ্মের সাথে কুঁড়ে ঘরে একা একাই কাটত। তার মাথায় ছিল জন-অরণ্যের একটি প্রান্তে মানুষে ঘেরা ঘর বাঁধার স্বপ্ন।
মানুষটা সিদ্ধভাত একা একাই দুপুরে-রাতে খেত। ডোবার জলেই আঁচাতো। তার মাথায় ছিল এক বিরাট দাওয়তের স্বপ্ন। অযুত নিযুত মানুষ বসেছে খেতে, কোলাহলে সে ছুটে ফিরছে এদিক ওদিক সেদিক - চৌদিকে তার আনন্দ আনন্দ আনন্দ।

মানুষেই ঘুরে এলাম

এইমাত্র আমি বাজার থেকে এলাম। জীবন্ত মানুষের ভিড়, প্রতিদিন যেমন হয়। তবে আজ বিশেষভাবে দেখলাম। চোখ দিয়ে, মনের সবকটা হাত দিয়ে স্পর্শ করে এলাম। এইমাত্র আমি বাজার ঘুরে এলাম। শ্মশান নয়, কবরস্থানও নয়, বাজার ঘুরে এলাম। মানুষ মানে বাচ্চাও। রঙীন কাপড়ে ঢাকা সুপ্ত শরীরের কুঁড়িতে আলতো পাপড়ি মন। এইমাত্র আমি বাজার ঘুরে এলাম। শ্মশানে না, না তো কবরস্থান দেখে এলাম। রঙীন চকোলেটের খোসা বাজারের রাস্তায় ধুলোর সাথে মি

যেন একটা রেসের মাঠ

যেন একটা রেসের মাঠ। সব ধর্মপ্রণেতা পুরুষেরা ঘোড়াগুলোর জায়গায় দাঁড়িয়ে। গ্যালারীতে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের লোক। কত রঙের পোশাক। সাদা, গেরুয়া, কালো, নীল, লাল। সব্বাই চীৎকার করছে - আরো জোরে...আরো জোরে...আমরা এগিয়ে...আসল ঈশ্বর আমাদের...ওদের নকল...জোরে... জোরে...জোরে....

শুধু যেন শেষ অবধি পৌঁছানোর অপেক্ষা...

জাগরণ


অভিমানী মানুষটা গাছটাকে জড়িয়ে ধরে বলল, আমি কই?
গাছ বলল, এই তো তুমি।
মানুষটা বলল, এই আমি না, এত বড় সংসারে এত কিছু ঘটে চলেছে, সেখানেই আমি কই?
গাছ বলল, তুমি কি চাও?
মানুষটা বলল, সবাই আমাকে চিনুক, নইলে আমি গলায় দড়ি দেব তোমার ডালে, নইলে তোমার বিষফল খাব।
একটা সাপ গাছের গুঁড়ি বেয়ে উপরের দিকে উঠছিল, সে থেমে গিয়ে লোকটার মুখের দিকে তাকিয়ে বলল, বিষ চাই? মরবে?

নির্বাসিত প্রেম

নির্বাসিত প্রেম। সংসারের বাইরে সংসার। রাধার যেন আসতেই হত। সে যদি বলত, কৃষ্ণ, তুমি তোমার গৌর-নিতাই নিয়ে এগোও। বিশ্বে ধর্মপ্রচার করো, জগৎ উদ্ধার করো। আমার সেখানে কি কাজ বলো?

কুলটা

ফুলগাছটা কেনার সময় খেয়াল করেনি, ফুলটার রঙ, পাপড়ির বাহার শুধু চোখে পড়েছিল, কাঁটাগুলো খেয়াল করল বাড়িতে আনার পর।

অনুকম্পা

আমার সারা গায়ে চন্দনের গন্ধ।
গলায় তুলসীমালা। ঈশ্বরের জন্য সেজেছি।
গোপালের জন্য পাত্রভরা মাখন - নৈবেদ্য।

Subscribe to গদ্য কবিতা