Skip to main content
 
 
        শিল্পী বসলেন। তানপুরা বাঁধা হল। তিনি গান শুরুর আগে বললেন, আমি কিছু বলতে চাই শুরুতেই। সবাই উৎসুক, গানের আগে শিল্পী কথা বলবেন? এতো দারুন, জনসংযোগ, এরকম বিদেশেই দেখা যায়, কি বলেন? আশেপাশের সব লোক বলল, বটেই তো, বটেই তো।
        শিল্পী বলতে শুরু করলেন, রস কাকে বলে, বিশেষ করে গানের সুরে রস কি করে সৃষ্টি করতে হয় তা আগে জানতে হয়, নইলে তো সবাই শিল্পী হয়ে যেত, তাই না? 
        সবাই সমস্বরে বলল, বটেই তো, বটেই তো।
        তারপর শুরু হল গান। সবাই বুঝল দারুন দরদ। সব্বার মনে হল, এই তো একটা যেন কান্না কান্না পাচ্ছে, কি নিদারুণ দরদ, তবু কেন যেন চোখ ফেটে জল বেরোতে চাইছে না। সবাই এর ওর দিকে আড়চোখে তাকাচ্ছে, ভিজে চোখ খুঁজছে, পাচ্ছে না, হীনমন্যতায় ভুগছে শ্রোতার দল, এতই কি রসবোধহীন আমরা! এদিকে গান এগিয়েই চলেছে, দ্রুত শেষ হব হব প্রায়। পর্দা টানার লোক হাই তুলছে, টর্চ দেখানোর লোক ঝিমোচ্ছে। গান শেষ হল। সবাই এত জোরে হাততালি দিল যে হলের ঘুলঘুলিগুলোতে থাকা পায়রার ছ'টা পরিবার সেই যে উড়ে গেল, আর এলো না।
 
 
        সারারাত গান শুনে বাইরে আসছে সব, রসক্লান্ত। হলের এক কোনায় বাইরে গান গাইছে গোঁসাই। ভিক্ষা করছে। একে একে লোক তাকে ঘিরে দাঁড়ালো। কেউ কারোর দিকে তাকাচ্ছে না, চোখ ভিজে আসছে, মনটা তুলোর মত হাল্কা হয়ে যাচ্ছে। ভোরের আকাশের রঙ যেন গোঁসাইয়ের ভৈরবীতে গলে গলে মিশে যাচ্ছে।
        গোঁসাইয়ের গান শেষ হল। সে কারোর দিকে না তাকিয়ে ভিক্ষা জমা গামছাটার থেকে আধুলিগুলো কুড়িয়ে বাঁ কাধের পোটলায় রাখা একটা কৌটোয় ভরে, হাঁটা দিল। কে যেন একটা দশটাকাও দিয়েছে। দেখতে দেখতে সকালের আলোয় মিলিয়ে গেল গোঁসাই।
        সবাই অন্যমনস্ক। কেউ হাততালি দিল না।
        গোঁসাই ফিরেছে আশ্রমে। মাটির রাস্তায় ধুলো প্রচুর। গোঁসাইয়ের সাদা আলখাল্লা রাঙা মাটির ধুলোয় লাল। পশ্চিমাকাশের সূর্যের রঙ লেগেছে গোঁসাইয়ের চোখে, মুখে। গোঁসাই গাইছে গুনগুন করে গান। তার একতারা রাখা মাটির উপর, যার পাশ দিয়ে যাচ্ছে পিঁপড়ের সারি ডিম মুখে করে, বর্ষা আসছে।