সৌরভ ভট্টাচার্য
9 May 2018
আমিও খড়কুটো জড়ো করেছিলাম। আমিও বাসা বেঁধেছিলাম বিশাল অশ্বত্থ গাছটার একটা ডালের কোণায়। আমি জানতাম অশ্বত্থ গাছের চেয়ে বড় গাছ আর কি বা হতে পারে?
ঝড় উঠল। আমি নিশ্চিত, যতই ঝড় হোক, ভাঙবে কি অশ্বত্থ? কক্ষনো না, কক্ষনো না।
ঝড় বাড়ল। চারদিক ধুলায় ধুলায় ঢেকে অন্ধকার করে তুলল। গাছটা মাতাল না পাগল হল? সে উদ্দাম ঝড়ের সাথে যেন তাল রাখতে পারছে না আর। আমি বুঝতে পারছি তার শিকড় থেকে আর্তনাদ ভেসে আসছে। গাছের আরো আরো পাখিগুলো ভয়ে, আতঙ্কে দিশাহারা হয়ে উড়ে বেড়াতে লাগল। ঝড়ের হাওয়ার সাথে তাদের ডানা পেরে উঠবে কেন? ঝড়ের শাসনে তারা মুখ থুবড়ে মাটিতে পড়তে লাগল। গাছের ডালে ছিটকে এসে লাগল তাদের কোমল শরীর।
গাছটা উপড়ে পড়ল অবশেষে। সে মহীরুহ'র এত বড় পতনের শব্দ হল আকাশ মাটি পাতাল কাঁপিয়ে। নদীর জল লাফ দিয়ে ডাঙায় এসে পড়ল। আকাশে তখন কালো মেঘের ঘূর্ণি। বাতাসের আঘাতে চরকির মত ঘুরছে। হুঙ্কার দিচ্ছে বাজ। চোখ রাঙাচ্ছে বিদ্যুৎ।
এত এত নিনাদের মধ্যে আমার ছোট্টো খুড়কুটো ভেঙে পড়ার আওয়াজ আর কার কানে যাবে! আমি ঝড়ের কাছেই করলাম আত্মসমর্পণ। যা হয় হোক।
সকাল হল। ঝড় থেমেছে। চারদিক দেখে মনে হচ্ছে যেন একদল উন্মত্ত হাতির তাণ্ডব চলেছে সারারাত। আমার ঘরের ছিঁটেফোঁটা অস্তিত্ব নেই কোথাও কোনোখানে। ভাবলাম সব হল শেষ।
এমন সময় চোখ পড়ল আকাশে। কে বলবে কাল এই মঞ্চে ছিল এমন বিধ্বংসী মেঘের ঘনঘটা? আজ বিন্দুমাত্র চিহ্ন নেই তার? কি আশ্চর্য! নীল আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে ভেসে এলো একজোড়া চোখ। সে চোখে গভীর বিশ্বাস। সে করুণ দৃষ্টিতে দেখল নীচের তাণ্ডবোত্তর পরিস্থিতি। তার চোখজোড়া হল আর্দ্র। এক বিন্দু জল এসে পড়ল আকাশ থেকে মাটিতে, আমার মুখে-চোখে। বলল, ভয় পেয়ো না। সংসারে নিরাশ্রয় কেউ নয়। সে মিথ্যা কথা। নীলের মত ভালোবাসো। সবুজের মত আশা রাখো। পাথরের মত দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হও। অসীমের মাঝে আবাস খোঁজো। নির্ভীক হও।
বললাম, কে তুমি?
সে বলল, রবীন্দ্রনাথ। মন বলল, জীবনস্বামী।