Skip to main content

ত্রিযামা ও জগদ্ধাত্রী

"আমি এখন তোমায় অল্প অল্প বুঝতে পারছি"

            "তাই হয়, আমারও বিয়ের বেশ কয়েক বছর পর মনে হত তোর দিদাকে অল্প অল্প করে বুঝতে শুরু করলাম। এখন আরো বেশি বেশি মনে হয়। তোর দিদার সারাদিনের টুকিটাকি ঘটনা, এই যেমন ধর রান্নাঘরে রান্না করতে করতে বাসনগুলো মেজে ফেলা, উনুনে আঁচ দিয়ে সামনে বসে উদাস তাকিয়ে থাকা, অঞ্জলি দিতে গিয়ে চোখে জল আসা, আমাদের বকার ঝাঁঝে কিছু অপ্রিয় সত্যি বলে ফেলা, আবার সেগুলো ঢাকার চেষ্টা করা…. কত কি…."
...

রাতের পড়ুয়া

সব জিনিসের একটা সীমা থাকে তো। গোপাল সামন্ত রোজ কলকাতা ঠেঙিয়ে অফিস করে এসে চাট্টি ডালভাত খেয়ে রাতে শোবে, অমনি রাত একটা বাজলেই পড়ার ঘরে টুক করে টেবিল টানার শব্দ। মানে উনি এলেন। তারপর ঘস ঘস করে বইয়ের পাতা উল্টানোর শব্দ। মানে উনি পড়ছেন। আলো জ্বালতে লাগে না। এমনিই অন্ধকারে পাতার পর পাতা পড়ে যান। গোপাল সামন্তের মাথাটা গরম হয়ে যায়। মাঝে মাঝে আবার খুক খুক করে হাসে। 'বিন্দুর ছেলে' পড়ে তো ফ্যাঁচফ্যাঁচ করে কান্নার শব্দও পেয়েছে গোপাল সামন্ত বিছানায় কোলবালিশে ঠ্যাঙ তুলে শুয়ে শুয়ে।
...

সুহৃদ

গোঁসাই বলল, দরদীকে খোঁজো, নইলে সব ফাঁকি। ফাঁকিতে কি জীবন চলে?
          একজন বলল, দরদী পাই কই?
          গোঁসাই বলল, দরদ দিয়ে তাকা, দরদ দিয়ে শোন, দরদ দিয়ে ছোঁ। দেখ দরদের ঝুনঝুনি বাজছে জগতে।
          সে বলল, পেলাম তো শুধু আঘাত গোঁসাই…. দরদ কই?
...

রত্নামাসি

রত্নামাসির যা ছিল অন্তর জুড়েই ছিল। রত্নামাসির দুটো ছোটোঘর জোড়া সংসার, স্বামী, দুটো বাচ্চা ছেলে, একটা খাট, একটা আলমারি, গ্যাসওভেন, একটা ড্রেসিংটেবিল, দুটো সাইকেল, একটা লেডিস, একটা জেন্টস - সব রত্নামাসির অন্তর জুড়েই ছিল। দুটো কি তিনটে বাড়ি কাজ করত রত্নামাসি। হাসিমুখ, বারবার পরা শাড়ি, মাটি ছুঁয়ে যাওয়া ঢালু হয়ে আসা চটি, একটা কালো ছাতা, কি একটা তেলের গন্ধ - এই তো রত্না মাসি।
          শীতেরবেলা গেছি কয়েকবার। খোঁজ নিতে - কাজে এলে না কেন?
...

পরিবর্তন

    দোকানে তালা লাগিয়ে, তালাটা একবারও টেনে দেখার ইচ্ছা যখন হল না, তখন আর বাড়ি না গিয়ে বড় রাস্তার মোড়ে, উজ্জ্বল হলুদ আলোটার নীচে বসে, কুকুরগুলোকে ডাকলেন। 
          কুকুরগুলো পরিচিতের মত ঘিরে বসল যখন, উনি ব্যাগ থেকে দুটো বিস্কুটের প্যাকেট খুলে, বিস্কুটগুলো ছড়িয়ে, কারোর কারোর গায়ে হাত বুলিয়ে বললেন, খা। 
...

ভুল হয় না জোনাকিদের

মা আড়চোখে দেখছে মাঝে মাঝে। বারণ করছে না। ধীরে ধীরে বুঝে যাবে। জোনাকিরা ধরা দেয় না। তামাকের উগ্র গন্ধ সহ্য করা অভ্যাস এখন। যে নাক আগে যোজন দূরের হাসনুহানার অস্তিত্বে সাড়া দিত।
          বাচ্চাটা কোলের উপর মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়ল। তার ছেঁড়া প্যান্টের উপর বসে একটা জোনাকি এখনও দব দব করে জ্বলছে।
....

কত্তাবাবা ও ছাগল

টুপ করে ঢিলটা ডুবে গেল। ছাগলটা লাফ দিয়ে বলল, আরেব্বাস! কত্তা আপনার কি টিপ! এক টিপে ফড়িংটাকে ঘা দিলেন!
          কত্তা বলল, আগে এক টিপে বাঘ মারতাম রে। তখন তো তুই জন্মাসইনি। আমাদের পূর্বপুরুষেরা ঘোড়া, সিংহ এই সব নিয়ে হাঁটত। ছাগল কি কেউ নিত রে!
          ছাগলটা উদাস হয়ে বলল, তাও...
....

নিজের চিত্তের প্রসাদ

এমন একটা লেখা লিখুন যাতে কেউ বুঝতে না পারে। মানুষ সহজে বুঝলে সহজে ভুলে যায়। সহজে পেলে মান কম দেয়। সহজ না, জটিল কিছু লিখুন।
          এইবার? এই যে এতবড় জটিল পৃথিবী, এত এত প্যাঁচাল, এত এত ঝুটঝামেলা, এই কি শেষ? না তো। এক মেলা লোক। হাজার রকম আলো, হাজার রকম মানুষ, হাজার রকম আমোদ, সমস্যা, ব্যবসা, উদ্দেশ্য। এ সবের শেষে কি থাকে? ভাঙা মেলা। তারপর শূন্য মেলা।
          যে ট্রেন হিল্লিদিল্লি ঘুরে এত এত রাস্তা পেরিয়ে যাত্রা শেষ করল, তাকেও কারশেডে গিয়ে বিশ্রাম করতে হয়।
...

একদিন জিতে যাবে

সারারাত আকাশই পারে না সব তারা চাঁদ এক জায়গায় রাখতে, এদিকে ওদিক ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে নেয়। আর তুমিই নাকি সব গুছিয়ে এক জায়গায় রাখবে। যতসব পাগলের মত কথা।

দুজনে

বাচ্চাটা দুটো তুবড়ি, আর চারটে ফুলঝুরি জ্বালানোর পর মায়ের মুখের দিকে তাকালো। বুঝল আর নেই। মা তাকে নিয়ে ছাদে উঠল। কত কত বাড়িতে টুনি লাইট লাগানো। সামনের পুকুরটা জ্বলজ্বল

Subscribe to অনুগল্প