Skip to main content

বুড়ি কলে মুখ ধুয়ে বেরিয়ে যাচ্ছিল, বোঁচকাটা বগলদাবা করে। পুরোহিত আটকালো। বলল, বুড়ি এই যে তুমি মন্দিরে রোজ দুপুরে আসো, ভোগ খাও, চলে যাও...

    বুড়ি তাকে থামিয়ে বলল, কেন? আমি তো দশটাকা দিয়ে কুপোন কাটি। অবশ্য রোজ কাটতে হয় না। এক একদিন এমনি এমনিও ভোগ দেয়.... কিন্তু কেন জিজ্ঞাসা করছেন?

    পুরোহিত বলল, না, মানে তোমায় তো আরতির সময় দেখি না, সকালে পুজোর সময় দেখি না.... বছরে একদিনও তোমায় মন্দিরে অন্য সময় দেখি না... সারাদিন করো কি?

    বুড়ি বলল, কেন, ভিক্ষা? রাতে স্টেশানে শুই.... আবার সকাল থেকে ভিক্ষা..

    পুরোহিত বলল, তোমার কিছু চাওয়ার নেই মায়ের কাছে?... এই যে এত দূর দূর থেকে সব আসে মায়ের কাছে এটা-সেটা চাইতে.... তোমার কিচ্ছু চাওয়ার নেই?...

    বুড়ি বলল, নেই গো। ছেলে বার করে দিল। বলল শুতে দেওয়ার জায়গা নেই। খেতে দেওয়ার ভাত নেই। তাদের পরিবার বড় হচ্ছে। তা ছেলে যখন বার করে দিল তখন তোমার ও কালী আমার কি করবে? তাকে তো আমি পেটে ধরিনি রে বাবা... তার কি দায়?..

    তবে মন্দিরে আসো কেন?....

    মাকে বলতে যেন ছেলেটার অমঙ্গল না করে। সেও মা তো। বুঝবে। তারও তো কেউ নেই, নইলে তোমাদের মন্দিরে পড়ে থাকে? সারারাত তালা লাগিয়ে, দরজা জানলা লাগিয়ে চলে যাও... সে একগ্লাস জল চাইলে পাবে কিনা কে জানে... ও সবার ভাগ্যই এক... দেখো না এই দুর্গাপুজো আসছে.... নর্দমার উপরে, এখানে সেখানে প্যাণ্ডেল করে চার পাঁচ দিন ঠায় দাঁড় করিয়ে রাখবে.. কান মাথা খাওয়া গান চালাবে... মদ গিলে রাতে নেত্ত করবে... কুটকাচালি করবে সব সেজেগুজে বসে... মা ঠায় দাঁড়িয়ে থাকবেন... তারপর মন ভরে গেলে টান মেরে জলে ফেলে দিয়ে আসবে নাচতে নাচতে.... ওর কাছে আমি আমার জন্যে আর কি চাইব বলো... আমি আসি... টাকা দিই... কুপোন নিই.. ভোগ খাই... আর মাকে বলি তুই তো সব জানিস ছেলেটার যেন অমঙ্গল না হয় দেখিস... এই তো... আসি?

    পুরোহিত স্তব্ধবাক। সত্যিই তো মন্দিরে তালা দেওয়া এখন। পাখা লাইট নেভানো। কর্তৃপক্ষ অত টাকা লাইটের বিল দিতে পারে না। বুড়ি চলে যাচ্ছে। ময়লা শাড়ি। বগলে বোঁচকা। চলায় না আছে কোনো তাড়া, বলায় না আছে কোনো ক্ষোভ। এত শান্ত কি করে হলে বুড়ি....

    বুড়ি ফিরে তাকালো.. হাসল... সামনের উপরের পাটিতে দাঁত নেই দুটো কি তিনটে... এমন নিরুদ্বেগ, অমলিন হাসি একমাত্র মায়েরাই হাসতে পারে... তাড়িয়ে দিলেও....