যত্ন করে মাদুরটা পেতে বলল, বসো। মাদুরটা পাততে পাততে লতার নিজেরই মনে হল শেষ কবে এত যত্ন করে কিছু করেছে? যত্ন করতে ভুলে যাওয়া মানুষ হারিয়ে যায় হঠাৎ। লতা যেমন যাচ্ছিল।
লতার শ্বশুরবাড়ির বাজির ব্যবসা। বাড়ির সামনেই দোকান। লতা বসে, অভিজিৎ বসে, শাশুড়ী বসে। লতা কিছু সেলাইয়ের কাজ করে। সে তেমন বড়সড় কিছু নয়।
সুজন মাদুরে বসে বলল, পড়াশোনাটা যে কেন ছেড়ে দিলি রে মা... অন্তত মাধ্যমিকটা যদি….
থাক না জেঠু। আমি চা আনি। তুমি বসো। আসছি।
সুজন মাস্টারের থেকেও বেশি কিছু ছিল লতাদের পরিবারের। লতার বাবা খুব শ্রদ্ধা করত। প্রাইমারি স্কুলের হেডস্যার ছিল সুজন। অকৃতদার। গ্রামে একটা লাইব্রেরি করেছেন। ওই সুজনের সন্তান। যা শ্রম আর অর্থ দিয়েছেন! ও পরিবার থাকলে সম্ভব ছিল না।
অভিজিৎ এসে পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করে গেছে। শাশুড়ি নেই, ননদের বাড়ি গেছে। ওদের ওখানে মানসিক কালীপুজো। লতা চা নিয়ে ঢুকল।
সুজন চায়ের কাপটা হাতে নিয়ে সস্নেহে লতার দিকে তাকিয়ে বলল, অনেক আশা ছিল রে মা তোকে নিয়ে... তোর বাবাকেও বলেছিলাম….
লতার কাছে এ কথাগুলো নিরর্থক। মা মারা গেল। বাবা আবার বিয়ে করল। তখন বাবা যে করে হোক তাকে আর দিদিকে বিদেয় করতে পারলে বাঁচে। সুজন জেঠু সংসার বোঝে না। সারাটা সংসার যেন ওঁর স্কুল। সবই যেন দুই-দুগুনে চার হয়। মানুষটাকে দেখলে মায়া লাগে লতার। এত ভালোবাসে তাকে। অথচ মানুষটা যা চায় তা সে দিতে পারে না। সে ছাত্রী ভালো ছিল। কিন্তু শুধু ছাত্রী হলেই কি হয়? টাকা ভাগ্য লাগে না?
সুজন অনেকক্ষণ চুপ করে বসে রইল। লতা জেঠুর এ স্বভাব জানে। ভাবছে কিছু একটা। এখন প্রশ্ন করলে কাটা কাটা উত্তর দেবে। সুজন চায়ের কাপটা রাখতে লতা বলল, একটা জায়গায় যাবে?
সুজন কেন, কোথায়, কি করতে কিচ্ছু প্রশ্ন না করেই উঠে দাঁড়িয়ে সোজা বলল, চ….
লতা হাসল। মানুষটা বাচ্চাই রয়ে গেল। যেন ছোটো হলে এখনই কোলে উঠে যেত নির্দ্বিধায়।
লতা আর সুজন এসে একটা বাঁধানো পুকুরের ধারে দাঁড়ালো। লতা বলল, এটা হল চৈতন্যডোবা। হালিশহরে এটা দেখতে সবাই আসে। আগেরবার তোমায় রামপ্রসাদের ভিটে, নিগমানন্দের আশ্রমে নিয়ে গিয়েছিলাম মনে আছে? সেবার এটা দেখা হয়নি। এসো। এটা নাকি মহাপ্রভু শ্রীচৈতন্যদেবের গুরুদেব ঈশ্বরপুরীর ভিটে। চৈতন্যদেব এখানে এসে এই পুকুরে নাকি স্নান করেছিলেন।
সুজন বলল, শুনেছি জায়গাটার নাম। সুজন নমস্কার করে না প্রকাশ্যে। মুগ্ধ হয়। লতা সুজনের মুগ্ধ চোখ, বিরক্ত কপাল, বিভ্রান্ত মণির চলন জানে, বুঝতে পারে।
সুজন বলল, বোস।
লতা আর সুজন পাশাপাশি বসল। শীত পড়েনি এখনও, তবে বাতাস বলছে দেরি নেই আর বেশি। দুপুরের রোদও তেমন চড়া নয়।
লতা বলল, জেঠু, নাম করলে ঈশ্বরকে পাওয়া যায়? এইখানে অনেকে দেখি জপ করে। আমার কেমন সন্দেহ হয়। আমার শাশুড়িও মালা জপে। এতে হয় কিছু?
সুজন বলল, জপ করে ঈশ্বরকে পাওয়া যায় না... কিছু করেই ঈশ্বরকে পাওয়া যায় না…. ঈশ্বরকে পাওয়ার ইচ্ছাতেই ঈশ্বরকে পাওয়া যায়। কিন্তু সেই ইচ্ছাটা যদি আন্তরিক হয় তবে সেকি এমনি এমনি নিশ্চল হয়ে থাকবে? তাই কেউ জপে, কেউ ধ্যান করে... আসলে ইচ্ছাটাই আসল রে মা….
লতা হঠাৎ উঠে বলল, চলো, আরেকটা জায়গায় যাবে?
সুজন তার স্বভাবসুলভ ভঙ্গীতে উঠে দাঁড়িয়ে বলল, চ….
টোটো ডাকল। সুজন আর লতা পাশাপাশি বসল। লতা টোটো চালককে বলল, দাদা শিবমন্দির ঘাটে চলুন….
চালক বলল, রাসমণি ঘাট বলছেন?
লতা বলল, হ্যাঁ হ্যাঁ….
সুজন ভুরু কুঁচকে সকৌতুক তাকিয়ে... লতা বলল, দুটোই বলে। আসলে কাছাকাছিই এখানে রাসমণির ভিটে ছিল। একটু পরেই দেখবে বাগমোড় বলে একটা জায়গা আসবে, একটা রাসমণির মূর্তিও বসেছে।
সুজন হাসল। টোটো চলছে। লতা কথা বলছে,
জানো জেঠু আমার শাশুড়ি ভালো মানুষ, কিন্তু ঠিক মানুষ নয়….
সুজন হাসল। বলল, বাব্বা, তুই এই দুটোর পার্থক্য করতে শিখে গেছিস? তুই তো অনেক বড় হয়ে গেলি রে মা….
লতা বলল, হ্যাঁ গো... মানুষটা ঠিক হলে ও আরো পড়াশোনা করতে পারত... ওর অঙ্কে কি পরিষ্কার মাথা জানো…. এক এক সময় দুঃখ করে….
সুজন বলল, ভালো তো….
লতা বলল, মানে?
সুজন বলল, দুঃখ নেই, ক্ষোভ নেই, এমন মানুষ কেউ কি আছে রে... কিন্তু সে দুঃখ, কি ক্ষোভ জানাবার একটা জায়গা তো তার আছে... সেইটা খুব বড় কথা রে…
লতা বলল, হুম, তুমি যে কেন একা রয়ে গেলে…
টোটো বাগমোড় এসে গেল... সুজন বলল, এই তো রাসমণির স্ট্যাচুটা... এইটাই তো বলছিলি…
লতা বুঝল সুজন এ প্রসঙ্গে কথা বলবে না। লতা বলল, হ্যাঁ, এই যে সামনে রাস্তাটা এটা কল্যাণী গেছে... ডানদিকে সোজা গেলে কাঁচরাপাড়া রেল স্টেশান...
টোটো বাঁদিকে ঘুরে কিছুটা এগিয়ে একটা গলিতে ঢুকল। কোনো বাড়ির অবস্থাই তেমন খুব সচ্ছল নয়। অনেক বাড়ির সামনেই ফুচকার দোকান। বাড়ির বউরাই অনেকে দোকানে বসে। পুরুষেরাও আছে। সুজন অবাক হয়ে বলল, হ্যাঁ রে, এতো পুরো ফুচকাপাড়া…
লতা হেসে বলল, হ্যাঁ গো জেঠু। সবাই তাই বলে। এখানে কতরকমের যে ফুচকা পাওয়া যায় কি বলব। দই, আচার, মিষ্টি…. তুমি ভাবতে পারো যে এখনও এখানে দশটাকায় বারোটা ফুচকা পাওয়া যায়!
সুজন চোখ বড় বড় করে বলল, বলিস কি রে…. দশ টাকায় বারোটা?
লতা বলল, খাবে?
সুজন দীর্ঘশ্বাস ফেলে কপট দুঃখের অভিনয় করে বলল, দু'বার জণ্ডিস হয়ে গেল যে রে….
টোটো এসে গঙ্গার ধারে দাঁড়ালো। সুজনের মনের উপর থেকে যেন কে কাপড় সরিয়ে দিল। সব অন্ধকার আলো আলো হয়ে গেল। সংসারে চলতে চলতে চোখেমুখে কাপড় জড়িয়ে যায় কখন মানুষ টের পায় না। ব্যথা হয়। কিন্তু মানুষ ব্যথিত হয় না।
লতার কি উচ্ছ্বাস। সে যেন পারলে হাততালি দিয়ে নেচে ওঠে। চোখ বড় করে বলল, জানো এখানে বিশ্বকর্মা পুজোর সময় বাইচ প্রতিযোগীতা হয়…. কি স্পিডে নৌকাগুলো চালায় তোমায় কি বলব জেঠু…. এই যে শিবমন্দিরটা দেখছ... এ খুব পুরোনো জানো... এই মন্দিরের মধ্যে এসে দাঁড়ালে আমার কেমন মনে হয় আমি কাশীর শিবের মন্দিরে এসেছি। এসো।
সুজন আর লতা শিবমন্দিরের সিঁড়ি দিয়ে উঠল। মন্দিরের ভিতরটা সত্যিই বড় অন্যরকম। সাদা শিবলিঙ্গ। এরকম খুব কম দেখা যায়। মন্দিরের ভিতরটা কি ঠাণ্ডা! সুজন বসল হাঁটু মুড়ে। প্রার্থনা করবে। কিন্তু কি চাইবে? চাওয়া মানে কি প্রার্থনা? সব চাওয়ার বাইরে না গেলে প্রার্থনা জন্মায় নাকি? মন শান্ত না হলে আর তেত্রিশ কোটি দেবতা কেন, কয়েকশো কোটি দেবতাতেও কিচ্ছু হবে না। অন্তর্যামীকে খোঁজ মন, অন্তর্যামীকে খোঁজ। সেই এক। তাঁর সামনে একা দাঁড়াতে হয়। একা হ মন। একা হ।
সুজন চোখ খুলে দেখে লতা নেই পাশে। বাইরে এসে চটি পায়ে দিতে গিয়ে দেখল লতার চটিটা নেই। কোথায় গেল? ওই তো গঙ্গার ধারে বসে।
কিরে? সুজন বসতে বসতে বলল।
আমি দেখলাম তুমি ডুবে গেছ। আমি জানি তো ইনিই আমার কাশীর শিব। দারুণ না?
সুজন মাথা নেড়ে বলল, ওটা কি মন্দির রে?
লতা বলল, ওটা রামকৃষ্ণ আশ্রম, অনেকে বলে জগদম্বা আশ্রম। প্রাইভেট। বেলুড়ের সঙ্গে যোগাযোগ নেই। ওই দেখো এদিকে কালী মন্দির আর পাশে ওটা দোতলায় বেলুড়ের আদলে একটা রামকৃষ্ণ মন্দির হচ্ছে। যাবে?
সুজন বলল, নাহ্ রে, এখানেই বসি। চা খাবি?
দুটো কাগজের কাপে চা দিয়ে গেল একটা ছেলে পাশের দোকান থেকে।
গঙ্গার উপর পশ্চিমের সূর্যের আলো এসে পড়েছে। জলের উপর যেন গলা সোনা। নৌকা যাচ্ছে মাঝে মাঝে। জেলেদের নৌকা। একটু দূরে ঈশ্বরগুপ্ত ব্রীজটা দেখা যাচ্ছে। লতা চুপ করে আছে। সুজন বলল, অভিজিৎ তোকে বোঝে?
লতা বলল, বোঝে। যতটা বুঝলে চলে যায়। কেউ কি আমরা কাউকে পুরো বুঝি বলো? তবে ও ওর বাবাকে খুব মিস করে।
ভালো ছেলেটা। ও পড়তে বলে না তোকে?
লতা বলল, না। আমি ওসব কথা তুলতে দিই না। কি জানো জেঠু, জানি তুমি শুনলে রাগ করবে, তবে জানো বই পড়ে যা না জানা যায়, তার চাইতে অনেক বেশি জানা যায় মানুষকে পড়লে… তাই না?
সুজন বলল, মানুষ বড় জটিল তত্ত্ব রে, নাগাল পেতে কিছু তো পড়তে হয়?
লতা তাকালো সুজনের চোখের দিকে। এত মিষ্টি চাহনি মেয়েটার! লতা বলল, মানুষের বুকের ভিতরটা পড়লে বাইরেটা সোজা হয় যায় জেঠু... তুমি বলেছিলে না…. গরুর গাড়ির চাকার মত মানুষের মনের মধ্যে একটা কেন্দ্র আছে.. সেইখানে গেলে মানুষটা সোজা... যত গোল পরিধি জুড়ে…. আমি তাই মানুষের পরিধি জুড়ে পরিক্রমা করি না.. কেন্দ্রে ডুব দিই….
সুজন বলল, পারিস?
লতা বলল, আমার বাবা চাইলে পারি... তুমি যার সামনে বসেছিলে এতক্ষণ… উপনিষদে আছে না গো... শান্তং শিবম অদ্বৈতম.. শান্ত মনেই মঙ্গল.. সেখানেই সব এক…. তাই তো…
সুজনের চোখে জল এলো... মেয়েটা স্কুল ছেড়েছে…. বিশ্বপিতার স্কুল থেকে ছুটি নেয়নি তবে….
লতা বলল, চলো... আরেক জায়গায় যাই.. হাঁটবে?
লতা আর সুজন হাঁটতে শুরু করল। কোন কোন দোকানে বাজি সাপ্লাই করে তারা দেখালো। এখানে নাকি কলকাতা থেকেও লোক আসে বাজি কিনতে। সত্যিই এত এত বাজির দোকান! লতা বলল ভীষণ সস্তায় নাকি বাজি পাওয়া যায় এখানে। কালীপুজোর আগে দোকানের এত ভিড় লেগে যায় যেন সেলের মার্কেট।
একটা খুব পুরোনো কৃষ্ণমন্দিরের সামনে এসে দাঁড়ালো তারা। সামনে মহাপ্রভু শ্রীচৈতন্যের স্ট্যাচু। খুব সুন্দর। সামনেটা দেখলে মনে হবে যেন কোনো পুরোনো রাজবাড়ী কি জমিদার বাড়িতে এসেছে। সামনে বড় মাঠ। পাঁচিল দিয়ে ঘেরা আবার একটা উদ্যান তার ভিতর। তার কেন্দ্রে সেই কৃষ্ণমন্দির।
লতা বলল, সাবর্ণ রায়চৌধুরীরদের বাড়ি নাকি এখনও আছে হালিশহরে। তবে এটা এদিকে না, সেটা রামপ্রসাদের ভিটের দিকে। তাদের বংশধরদের কেউ কেউ থাকেন সেখানে এখনও।
জুতো খুলে মন্দিরের চাতালে উঠল সুজন আর লতা। সন্ধ্যে হয়ে গেছে। মন্দিরের গায়ে বিষ্ণুপুরের মন্দিরের মত টেরাকোটার কাজ। মন্দিরটাই বিষ্ণুপুরের মন্দিরের আদলে বানানো। মন্দিরের গর্ভগৃহে রাধামাধব। কি উজ্জ্বল, কি স্নিগ্ধ মুখ! সুজনের মনটা আনন্দে ভরে উঠল। শিব মানে শান্ত। কৃষ্ণ মানে আনন্দ। মা মানে শক্তি। এ সুজনের তত্ত্ব। কৃষ্ণ আনন্দ। সুখ দুঃখের বৈঠা বাওয়া আনন্দ। হাল ধরে থাকেন গোবিন্দ। নইলে ঝড়ের মুখে পড়ে নৌকা ডোবে। সুজন মনে মনে চন্দন মাখল। সারা মন জুড়ে চন্দনের গন্ধ। সন্ধ্যারতি শুরু হল। অনাড়ম্বর অতি সাদাসিধা আরতি। মহামন্ত্র গাইছেন এক বৃদ্ধা। কি তৃপ্তিতে ভরা মুখ। সব হারালে এমন তৃপ্তি জন্মায়। যখন ভয় থাকে না হারানোর। ক্ষোভ থাকে না কোন কিছু না পাওয়ার। লোভ থাকে না দখল করার সংসারে এক চিলতে সুখও। সে আনন্দ দেন গোবিন্দ। বৃদ্ধার মুখে কৃষ্ণনাম... হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে... হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে….. চৈতন্যদেব লিখছেন এই নামে চেতনার দর্পণে জমা ধুলো সরে যায়, মঙ্গল চিন্তা বুদ্ধির উপর পড়ে স্নিগ্ধ চাঁদের আলো, আনন্দ সমুদ্রে জাগে ঢেউয়ের পরে ঢেউ, সংসারের জ্বালা মেটে…. সব শুদ্ধ হয়….
লতা আর সুজন বাগমোড়ে দাঁড়িয়ে। লতার চোখ ছলছল করছে। সুজন এখান থেকে ৮৫ নাম্বার কি ২৭ নাম্বার বাস ধরে চলে যাবে কাঁচরাপাড়া স্টেশান। অটো বা টোটো নিলেও হয়। কিন্তু সুজন বাসে উঠবে। বাসে অনেক মানুষ। সুজন মানুষ দেখে। লতাও মানুষ দেখে। একজন পড়ে। একজন ডোবে। লতা পা ছুঁয়ে প্রণাম করল। বারণ শুনবে না। ধরা গলায় বলল, আবার এসো, আমার দিব্যি রইল। সুজনের নাকটা টাটিয়ে উঠল। যে ক'জন মানুষের জন্য পৃথিবী ছাড়তে ইচ্ছা করে না লতা তাদের মধ্যে প্রথম। সে লতার মাথায় হাত রেখে বলল, আসি মা। এমনই থাকিস, জগদীশকে সঙ্গে নিয়ে। তবেই জগতে থেকে জগতের মর্ম জানা যায়।