গুরু ধ্যানে বসে আছেন। একজন একজন করে শিষ্যরা এসে বসছে সামনে। আজ বিজয়া। ঘটে পুজো হয়। ঘট বিসর্জন দেওয়া হয়ে গেছে। সন্ধ্যে হব হব।
গুরু চোখ খুললেন। বললেন, কল্যাণ হোক সকলের।
শিষ্যরা একে একে প্রণাম করে এসে আবার বসল। গুরু জিজ্ঞাসা করলেন, বিসর্জন করে এলে? কিছু অর্জন কি করলে?
শিষ্যেরা স্তব্ধ। কি অর্জন করার আছে? আজ তো মন খারাপের দিন। অর্জনে তো সুখ। সুখ কই?
গুরু বললেন, অশুভ শক্তির দমন হল আজ, তাই তো বিজয়া? সে অশুভ শক্তি কি?
শিষ্যরা বলল, আসুরী প্রবৃত্তি।
গুরু বললেন, আসুরী প্রবৃত্তিগুলো কি কি? গীতায় বলা আছে - যে অহংকার, বল, দর্প, কাম, ক্রোধের বশীভূত হয়ে নিজেকে ও অন্যকে কষ্ট দেয়, সে-ই অসুর। তো নিজেকে কষ্ট দিলেও সে অসুর হয়, তাই তো?
শিষ্যেরা চুপ। নিজেকে কষ্ট মানুষ কখন দেয়? নিজেকে কষ্ট দেওয়া আর নিজে কষ্ট পাওয়া কি এক কথা?
গুরু বললেন, না। নিজেকে কষ্ট দেয় মানুষ নিজের অহংকারে নিজেকে পিষে। এক কণা সরষে থেকে এক বিন্দু তেল না চেয়ে কেউ যদি একপাত্র তেল চেয়ে বসে তবে তো তা সরষের উপর অবিচার।
এক শিষ্য বলল, সব সময় যে সরষেই হবে তা তো নয় গুরুদেব, সে তো এমন কোনো কিছুও হতে পারে যা পিষলে তেল হয় না। তখন?
গুরু হাসলেন। ঠিক বলেছ বৎস। নিজেকে চেনা মানেই নিজের ক্ষমতাকে চেনা। সে চেনাটুকু না হলে সত্যিই অমঙ্গল।
অসুর কি নিজের ক্ষমতাকে চেনে না? একজন শিষ্য জিজ্ঞাসা করল।
গুরু বললেন, শক্তিকে জানা আর ক্ষমতাকে জানার মধ্যে পার্থক্য আছে। ক্ষমতার মর্যাদাবোধ আছে। শক্তি অন্ধ। আগুনের শক্তি আছে সমস্ত আশ্রমকে মুহূর্তে ছারখার করে দেওয়ার, সে শক্তিকে তার মর্যাদার মধ্যে রাখার কৌশলকেই বলে বিদ্যা। আজ পৃথিবীতে এ এক মহাদ্বন্দ্বের দিন। অমার্জিত শক্তি বনাম ক্ষমতার। বিজ্ঞান নানাবিধ শক্তির সন্ধান দিয়েছে, সে শক্তিকে মর্যাদায় এনে তাকে মানুষের শ্রী-মঙ্গল বৃদ্ধির কাজে যদি না আনা যায় তবে অসুরের তাণ্ডব চলবে জগৎ জুড়ে। আজ সেই অমার্জিত শক্তির উপর ক্ষমতার বিজয়প্রাপ্তির দিন। কিন্তু সে তো প্রতীকী।
শিষ্য বলল, আমাদের মধ্যে যে আত্মমর্যাদা বোধ, তাকে জাগিয়ে তোলা যায় কি করে?
গুরু বললেন, সে সদা জাগ্রত। সেদিকে ফিরলেই তাকে অনুভব করা যায়। যার মর্যাদাবোধ নেই, সে অসুরের হাতে যন্ত্রবৎ। ক্রমে ক্রমে নিজেকে আর নিজের চারপাশকে ধ্বংস করাই তার ধর্ম। আর বিপরীতে এসে দাঁড়াও। নিজের যোগ্যতা অনুযায়ী নিজের শক্তিতে মর্যাদাসম্পন্ন করো। তবে সত্যি অর্থে বিজয় হবে শুভ। শুভ বিজয়া।