Skip to main content

ভুল্টু ঈশ্বরের কাছে বেগো প্রার্থনা করল, ডাকাডাকি করল, খাওয়াদাওয়া ছাড়ল, কান্নাকাটি করল, মায় চিল্লেমেল্লিও করল। তো ঘোর কলি হতেও ঈশ্বর দেখা দিলেন।

    ভুল্টু বলল, এতদিন ধরে ডাকছি, আপনার কোনো পাত্তাই নেই, এদিকে লাইফটা হেল হয়ে যাচ্ছে... ছেলেমেয়েগুলো অমানুষ, চাকরিতে শান্তি নেই, আপনি কিছু একটা করুন….

    ঈশ্বর একটু কাচুমাচু হেসে বললেন, না, মানে এসব আপনার পার্সোনাল ম্যাটার, আমার ঢোকা কি ঠিক হবে স্যার? তাই একটু হেজিটেট করছিলাম আর কি….

    ভুল্টু তিরিক্ষি মেজাজে বলল, মানে? আপনার ফুল অথোরিটি আছে আমার জীবনের মানে আমার পার্সোনাল ম্যাটারে ইন্টারফেয়ার করার…

    ঈশ্বর আবার একটু লজ্জিত হয়ে বললেন, ধুর, কি যে বলেন না স্যার... এই তো সেদিন পম্পিকে নিয়ে যখন হোটেল রুমে ঢুকলেন, আগেই আমার উইন্ডোটা শাটডাউন করে দিয়ে ইনকগনিটো মোডে চলে গেলেন। তারপর যখন ওই পাকড়াশীর কাছ থেকে মোটা টাকা নিয়ে এক্সপায়ারী ওষুধগুলো হাস্পাতালে চালিয়ে দিলেন, তখনও আমায় ব্লক করে রাখলেন কিছুক্ষণ… তাই হেজিটেট করছিলাম আর কি…

    ভুল্টু দমে যাওয়ার পাত্র না। সে একগাল হেসে, একটি বিলিতি মদের বোতল বার করে বলল, একটু চলবে নাকি? হেব্বি মাল, ইম্পোর্টেড... ঢালি?

    ঈশ্বর বললেন, না স্যার, আজকাল আমার আবার অম্বলটা বেড়েছে। তা ধন্বন্তরি এসব বারণ করে দিয়েছে। আপনি খান স্যার…

    ভুল্টু এক গ্লাস গলায় ঢেলে বলল, কি স্যারের মুডটা অফ মনে হচ্ছে.. কি বস মার্কেটটা ডাউন চলছে নাকি আজকাল….

    ঈশ্বর হেসে বললেন, কি যে বলেন স্যার…. এখন তো আপনারাই ঈশ্বর… আমি কখন কোথায় যাব, কি খাব, কি পরব, কোথায় থাকব, কার দিকে ঝুঁকব, কার দিকে বেঁকব, কার দিকে পিছন ফিরব, কি পছন্দ করি, কি না করি... সব তো আপনারাই ঠিক করে দেন স্যার... আমি তো এখন নিমিত্ত মাত্র….

    আসলে সবই বিজ্ঞান বুইলেন কিনা….

    একটু কনট্রাডিক্ট করি স্যার... উইথ ইওর কাইন্ড পারমিশান…. আসলে একটু ভুল হল... আমার টেরিটোরি হল হৃদয়ে... আই মিন ইন দ্য বেস অব ইওর মর‍্যালিটি স্যার…. আপনি যা বলছেন সেটা তো বিধাতার আণ্ডারে…. দ্যাটস আ সিস্টেম.. আ পিওর ফ্ল লেস সিস্টেম… আপনারা শুধু ওই সিস্টেমটাই জানছেন ধীরে ধীরে… আমায় না.... এই বলে ঈশ্বর একটু লজ্জিত হয়ে পড়লেন আবার।

    ভুল্টু একটু কনফিউজড হল। বলে কি? নিয়ম কানুন সব স্থির... মানে প্রিফিক্সড... ভুল্টু চালাক মানুষ... মার্কেটিং এর দিকটা দেখে.. তাকে এত সহজে ঘোল খাওয়ানো যাবে না… সে সপ্রতিভ থাকার ভান করেই বলল, তা আমার কেসটা সেটেল করতে কত নেবেন…. একটা যজ্ঞ... দুটো সোনার চেন… নগদ কত?

    ঈশ্বর আবার লজ্জিত হাসি হাসলেন। বললেন, কি যে বলেন স্যার। ওসব আমার জুরিসডিকাশন নয় তো। ওটা বিধাতার, মানে আপনারা যাকে ল-মেকার, পলিসি মেকার বলেন আরকি… বললাম না... সে তো শোনে না কিছু, সে শুধু করে। আপনি যা ইনপুট দেবেন সে সেই মত আউটপুট দিয়ে যাবে। নো চেঞ্জ স্যার। ফিক্সড প্রোগ্রামিং করা। 

    ভুল্টুর মেজাজ এবার তিরিক্ষি হল। সে চেঁচিয়ে বলল, তবে আপনি…. আপনি কি কত্তে আছেন?

    ঈশ্বর আবার লজ্জিত হয়ে পড়লেন। বললেন, আরে ওই যে বললাম, মরাল্যাটির দিকটা দেখা ছাড়া আমার তেমন কোনো কাজ নেই। তা আপনি চাইলে আমি সেটার ব্যবস্থা নিতে পারি। 

    ভুল্টু বিরক্তির সঙ্গে জিজ্ঞাসা করল, কি ভাবে?

    ঈশ্বর বললেন, এই ধরুন আপনাকে কজ এণ্ড এফেক্টে পুরো ছবিটা দেখিয়ে দিলাম। মানে আপনি এই অবস্থায় কি করে এলেন তার একটা ছোটো প্রজেক্ট আর কি। কার্য-কারণ সূত্র ছাড়া কি হয় বলুন। তো আপনি তখন নিজের ফ্ল-গুলো ধরে ফেলবেন। স্কোপ অব ইমপ্রোভাইজেশান। তারপর অল্প অল্প অনুশোচনা সিক্রেট করতে শুরু করবে আপনার সিস্টেমে। সে না হয় আমি মুছিয়ে দিলাম। আপনি একটু রিলিফ ফিল করলেন। এই আর কি।

    ভুল্টু বলল, মন্দ লাগছে না... কিন্তু এর জন্য সার্ভিস চার্জ নেবেন তো….

    ঈশ্বর বললেন, নিয়ে নেব। কাজ পুরো করে তারপর। 

    ভুল্টু বলল, আমায় কি করতে হবে?

    ঈশ্বর বললেন, কিচ্ছু না। সবুজ ঘাসের উপর পায়রার পালক পড়ে থাকতে দেখেছেন? কিম্বা ধরুন দুধের উপর সর ভেসে থাকতে?

    ভুল্টু বলল, দ্বিতীয়টা দেখেছি….

    ঈশ্বর বললেন, জাস্ট আপনাকে ওইভাবে ভেসে থাকতে হবে। আসুন আমার সঙ্গে। 

    এই বলে ভুল্টুকে ঈশ্বর ভুল্টুর শোয়ার ঘরের দিকে নিয়ে গেলেন। ভুল্টু শোয়ার ঘরে ঢুকে হাঁ... একি? দেওয়াল বেয়ে নামছে একটা ঝরণা…. তার খাটটা দিয়ে বয়ে যাচ্ছে নদী…

    ঈশ্বর বলল, শুয়ে পড়ুন স্যার…..

    ভুল্টু শুয়ে পড়ল। বুকটা হাল্কা হয়ে যাচ্ছে। শরীরটা গলে গলে মিশে যাচ্ছে। বুকের ভিতর হামাগুড়ি দিয়ে হেঁটে বেড়াচ্ছে ছোট্টো ভুল্টু। একি! একি! 

    

    কি গো! মড়ার ঘুমাচ্ছ যে এই ভর সন্ধ্যেতে... আবার গিলেছ দেখলাম ড্রয়িং রুমে….

    ভুল্টু ধড়মড় করে উঠে পড়েই বলল, আমার টাওয়েলটা দাও না….

    রত্না ঘাবড়ে গিয়ে বলল, মানে? নেশা কি ফুলটুস নাকি গো….

    ভুল্টুর ঘোর কাটল। খেয়াল করল তার নিজের চোখের কোল বেয়ে জলের ধারা। ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা লাগছে গালটা। লাস্ট চোখে জল এসেছে কবে মনে পড়ছে না...হয় তো বিষম খেয়ে হবে... কিন্তু এ আলাদা জল.. পিউরিফায়েড..

    রত্না বলল, আ মোলো, কাঁদো কেন?

    ভুল্টু বলার আগেই গলা ঠেলে বুকের তলা থেকে কে যেন বলল, সার্ভিস চার্জ...