অনুগল্প

নিভা তার কাঁচাপাকা চুলগুলো গামছায় মুছছিল। হাত থেমে গেল। পরেশের নাতিটা স্নান করে বাঁধানো পুকুরঘাটে ছোটো ছোটো পায়ের ছাপ ফেলে এক দৌড়ে উঠে চলে গেল। নিভ

কথাটা ঠিক মাছ ধরা না। কথাটা হল সময় কাটানো। নইলে এই পুকুরে কি এমন মাছ হয় যে সকাল আটটা থেকে বেলা দুটো অবধি বসে থাকা যায়

সে সারাদিন ধরে রাতের প্রস্তুতি নিত। প্রদীপের সলতেগুলো পাকাতো বসে বসে। রোদ উঠলে গাছের তলায়, আর মেঘলা থাকলে উঠানে বসে। হারিকেনে তেল ভরত, কাঁচগুলো ঘষেমেজে রাখত ঝকঝকে। 

একটু পর বৃষ্টি নামবে। মানে বোঝো? এই যে চারদিক অন্ধকার করে এসেছে, এর মানে বোঝো? 

গাছ থেকে নেমেই বদনের যেটা খেতে ইচ্ছা করল, সেটা হল সুজি। মা করত। গুড়ের সুজি। লাল। মাখা মাখা। 

     প্রচণ্ড গরম। গাছে উঠেছিল কেন মনে পড়ছে না। একটাও আম নেই। খানিক কাঠ পিঁপড়ের কামড় জুটেছে। খিদে পেয়েছে প্রচণ্ড। খাবে কি? 

সে বাগানের গেটেই অপেক্ষা করছিল। তার জন্য। শুধু তার জন্য। 

     অটো থেকে নামার সময় তার বুকটা ধক করে উঠল। কেউ এভাবে অপেক্ষা করেনি তার জন্য। সে যে ফুল ভালোবাসে, এ কথাই বা ক'টা মানুষ জানে? কেউ ডাকেনি বাগান দেখতে কোনোদিন। সে নিজে থেকে গেছে। অযাচিতের মত। অনাকাঙ্ক্ষিতের মত। আজ কেউ তাকে ডেকেছে। 

দু’জন মানুষ ঠিক করল, তারা ঘর বাঁধবে। যারা নিজেদের ঘরে তো জন্মেছিল, কিন্তু ঘর তাদের নিজেদের ভাবেনি। ছেলেটাকে তার বাড়ির লোক বলেছিল, দূর হ! মেয়েটাকে তার বাড়ির লোকে বলেছিল, দুচ্ছাই!

গোবিন্দের এই নিয়ে তিনটে রাত ঘুম হল না। ক্ষেতে যায়। গরুকে জাব দেয়। সন্ধ্যেবেলা তাস খেলতে বসে চণ্ডীমণ্ডপে। সব ঠিক আছে। কিন্তু মেয়েটাকে নিয়ে চিন্তা। বাঁ হাতের কব্জীর উপর এমন একটা ফুলো উঠছে। টিউমার। এই মাস গেলে বিয়ে। শাঁখা গলবে? কি যে দুশ্চিন্তা হচ্ছে। 

গোঁসাই বলল, হৃদিযন্ত্র ধুলায় রেখেছো, হাটের মাঝে। যে পারে এসে তারে দেয় টোকা, দেয় টান। ওঠে শব্দ। সুর কই? রাতদিন যে যন্ত্র নিয়ে তত্ত্ব করো, সে যন্ত্র বাজবে কবে হে? 

     বললাম, সুর শিখিয়ে দাও। বাজাই। 

প্রচণ্ড বৃষ্টি। রাস্তায় আটকে গাড়ি। জ্যাম। 

দরজায় ধাক্কা দিল। দাদা, একটু খুলবেন? প্লিজ!

কাকভেজা মধ্যবয়েসী লোক একটা। গাড়িতে এসে বসল। সারা গা চুঁইয়ে জলে ভিজছে সিট। 

সরি স্যার। আমায় হাস্পাতালে নাবিয়ে দেবেন একটু! আমার মেয়েটার অপারেশান! প্লিজ!