শ্মশানের বাইরে ছাওয়ায় বসে আছেন। মাটিতে নয়। চাকা লাগানো চেয়ারে। হাতে প্লাস্টিকের বাটি থেকে ভাত ডাল চামচে করে খাচ্ছেন। চাকা লাগানো চেয়ারে ঝোলানো বড়ি, ধূপধুনো, জিরে ধনের প্যাকেট।
খাওয়া হয়ে গেল। পাশে ব্যাগে ঝোলানো জলের বোতল বার করে বার দুয়েক কুলকুচি করে রাস্তায় ফেললেন, দু ঢোক জল খেয়ে বললেন, বলুন, কি চাই?
কিছু না তো। এই ছাওয়ায় দাঁড়িয়ে আছি।
ও আচ্ছা...
এই ছবিটা কার?
একটা ল্যামিনেশন করা ছবি, চেয়ারের হাতলের সঙ্গে ঝোলানো। সিঁদুর লেপা, ময়লা হয়ে যাওয়া অস্পষ্ট ছবি।
বললেন, আমার স্ত্রী। নেই। ব্রেস্ট ক্যান্সার হয়েছিল।
মাথার উপর বড়গাছটার পাতাগুলো ঝিরিঝিরি করে কেঁপে উঠল।
জিজ্ঞাসা করলাম, বাড়ি?
রথতলা। সারাদিন ঘুরি। ক'টা বিক্রি হয়। দুপুরটা এখানে এসে খাই। বড় শান্তি লাগে।
কেউ নেই আর?
মেয়ে আছে। বিয়ে হয়ে গেছে। শ্যামনগরে।
কোনো কথা নেই আর। একটা লরি করে আরেক দল এলো। সঙ্গে কীর্তনের দল।
উনি বললেন, যে যায়... যায়... আর ফেরে না.....
হুম। এর কোনো উত্তর তো হয় না।
আমিও অপেক্ষায়...
এই প্রথম হাসলেন। চোখদুটো দেখে মনে হল, মৃত্যুর কাছে আবদার করছেন... আমায় নাও... এই তো আমার ভাত খাওয়া শেষ... এই তো জল খেয়ে নিলাম কুলকুচি করে... এবার নাও.... ও অপেক্ষা করছে তো.... এবার নাও... ডাকো....
গাছের পাতায় হাওয়া খেলে গেল আবার। ওনার দুটো চোখে ঘুম জড়িয়ে আসছে। মাথাটা কাত হয়ে ডানদিকে এলিয়ে। মাছি বসছে ঠোঁটে, গালে। ছবিটা সামনে হাওয়ায় দুলছে। দেখছেন উনি। অপলক।
হাওয়ায় দুলে দুলে গাছ বলল, সব আছে, সব থেকে যায়, অন্যরকমভাবে, অন্যদিকে।