ধান্দাবাজ হলে অনেক কিছু হয়, খাঁটি কিছু হয় না। এই সহজ সরল সত্যিটা পল কিছুতেই বুঝছিল না। বারবার বলছিল, আমার খুব লাগছে, আমার কষ্ট হচ্ছে, এইসব। খ্রীষ্ট বলল, করুণায় থাকো। বাকি সব সইতে হবে। এই বলে খ্রীষ্ট মিলিয়ে গেল। ব্যস, আর কিছু বলল না।
পল রাতদিন ভাবে, এত এত যন্ত্রণায় দিন কাটবে, আবার নাকি করুণাতেও থাকতে হবে? এর মানে কি?
পল রাস্তা দিয়ে আসছে। রাস্তার পাশে নীল নীল ছোটো ছোটো ঘাসফুল ফুটে আছে। পল হাত দিয়ে ছুঁলো। একটা কুকুরের বাচ্চা কাদায় পা আটকে কেঁউ কেঁউ করছিল, তাকে তুলে সবুজ ঘাসে ছেড়ে দিল। একজনের গাড়ির চাকা খুলে সব মাল রাস্তায় পড়ে গিয়েছিল, পল তাকে সাহায্য করল।
পল তৃষ্ণার্ত, জল চাইল। দিল না কেউ। ক্ষুধার্ত, খাবার চাইল। দিল না কেউ। উলটে দুজন ধাক্কা দিয়ে রাস্তায় ফেলে দিল, বলল, যাও ভণ্ড কোথাকার!
সন্ধ্যে হল। পল একটা বড় মাঠে এসে বসল। নির্জন এদিকটা। চোখ ফেটে জল আসছে। এত এত অত্যাচার! করুণায় আছে সে তবু?
শ্রান্ত শরীর। ঘুম এসে যাচ্ছে। পল মাটিতে শুলো। মাথার মধ্যেটা নীলফুলের মত শান্ত হয়ে গেল। বুকের উপর ছোটো ছোটো পায়ে কুকুরছানার মত কি এক অনির্বচনীয় আনন্দ খেলে বেড়াতে লাগল। ছড়িয়ে পড়া সব ছোটো ছোটো আশাগুলো প্রভু যেন তুলে এনে বুকের মধ্যে জড়ো করে দিল। পলের মনেই পড়ল না কে তাকে ধাক্কা দিয়েছিল। কে তাকে জল দেয়নি। কে তাকে খেতে দেয়নি। কে তাকে গালাগাল দিয়েছিল। ঘুম থেকে উঠে তার মনে হল সে যেন বুঝতে পেরেছে করুণায় থাকা মানে কি।
তখন মেঘ ছেঁড়া এক ফালি আলো পলের মাথায় এসে পড়েছিল। পল ঘাসের উপর চুমু খেয়ে বলল, ভালোবাসি।