Skip to main content

গন্তব্য, বারাণসী

এত ম্লান হাওড়া স্টেশান দেখব ভাবিনি কোনোদিন। হুইলারের স্টলে ঝুলছে ঝুল। একটা খবরের কাগজ পেলাম না। সব বইয়ের দোকান বন্ধ। শনিবার ছ'টা। আমাদের ট্রেন সাতটা পনেরোয়। অমৃতসর মেল। গন্তব্য, বারাণসী। কারণ, কিছুটা ব্যক্তিগত কাজ, আর কিছুটা প্রিয় শহরটার খোঁজ নিতে। ...

এইবার?

বার কয়েকবার উঠে আবার বসে পড়লেন সুধীরবাবু। পাঁশকুড়া লোকাল এই নিয়ে তিনটে ছেড়ে দিলেন। পেটটায় অস্বস্তি হচ্ছে। সাহস পাচ্ছেন না। এদিকে ঠাণ্ডাও যা পড়েছে, ইচ্ছাও করছে না। তবে? চা, কফি কিছুর দিকে তাকাচ্ছেনও না। জীবনে অনেক সময় সিদ্ধান্ত নেওয়া কেন যে এত কঠিন হয়ে পড়ে? আগে এই সময়ে অনেকবার ঈশ্বরকে ডেকেছেন। লাভ হয় না খুব একটা। যার যখন ভূমিষ্ঠ হবার, সে হবেই।

প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে ভাবা

রবীন্দ্রনাথ কোন পিতার কথা বলেছিলেন? রবীন্দ্রনাথ সারা জীবন কটা মন্দির সংস্কার করেছিলেন? রবীন্দ্রনাথ কি কোথাও বলেছিলেন, প্রাচীন মন্দিরকে অত্যাধুনিক করলেই ভারতের উন্নতি? রবীন্দ্রনাথ কি আদৌ কোনো প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মে নিজেকে রেখেছিলেন? তবে "মানুষের ধর্ম" কার লেখা? তবে "দীনদান" কার লেখা?

ভুলেই গেল

অমলেশ বলেছিল, যেখানে সকালে পাখির ডাক শোনা যায় না, সেখানে সে কোনোদিন থাকবে না। থাকেওনি অমলেশ। বৈঁচি থেকে আরো ভিতরে একটা গ্রামে অমলেশ সারাটা জীবন কাটিয়ে দিল।

রাতের দোকান

এত রাতে দোকান খোলা রাখেন?

রাখতেই হয়। ওই যে মোড়টা দেখছেন, বড় লাইটটা জ্বলছে, ওর থেকে কয়েক মিটার গেলেই শ্মশান। রাতে কোনো দোকান খোলা থাকে না। শ্মশানযাত্রীরা চা'টা খেতে সব এখানে। সবাই জানে বলাইদার দোকান সারারাত খোলা। বাইকে বসেই চা খাবেন? ভিতরে আসুন।

কবীর কবীর

সন্ত কবীর অন্তিমকালে কাশী ত্যাগ করে মঘরে গিয়ে দেহত্যাগ করলেন। কাশীতে দেহত্যাগ করলেই মুক্তি - এ ভ্রম। কবীর বললেন। নিজের ধর্ম, নিজের নীতি, নিজের সত্যনিষ্ঠা নিজের দায়িত্বে। কবীর আমাদের ধর্মে সাবালক হতে বললেন। আমরা নাবালাক থেকে যেতে চাইলাম। আমরা অনন্ত, নিরাকার ঈশ্বরকে হৃদয়ে অনুভব করতে চাইলাম না। আমরা অবতার বানালাম। আমরা একজনকে দেখিয়ে বললাম, এই সে। একে ধরে থাকলেই সব হবে। কবীর বললেন, অনুপ্রেরণা ভালো। সে তুমি নিতেই পারো কারোর কাছ থেকে। কিন্তু তাকেই সব ধরে বসে থাকলে হবে কি করে?

পাঁজর

ঠিক কোথায় খেইটা হারিয়ে গেল। রমেশ বুঝলই না। পুরো জীবনটাই যেন হুস করে এক ভাঁড় চায়ের মত ফুরিয়ে গেল। মানুষ কতবার খোলস ত্যাগ করে। নতুন মানুষ হয়। বারবার নতুন হয়। কিন্তু ভালো লাগে কি? আগের বারের খাঁচার জন্য মন খারাপ করে না?

স্বপ্ন

বাবা তুমি কোনোদিন সমুদ্দুরের ওদিকে গেছো?

বাবা ছেলের মুখের দিকে একবার তাকিয়ে, জালটা গোটাতে গোটাতে বলল, না বাবা।

ছেলে বলল, তবে রোজ রোজ সমুদ্দুরে নৌকা নিয়ে কেন যাও?

বাবা বলল, মাছ ধরতে। মাছ বিক্রি না করলে আমাদের যে না খেয়ে থাকতে হবে।

ছেলে বলল, আমি একদিন তোমার নৌকাটা নিয়ে ওপার থেকে ঘুরে আসব। বড় হই। তুমি দেবে তো তোমার নৌকাটা আমায়?

মায়ের ইচ্ছে

​​​​​​​অর্জুন বাড়ুজ্জে আচমন করে সবে কোশাকুশিতে গঙ্গাজল ঢেলেছে, অমনি মা কাটা মুণ্ডুটা বেদীতে নামিয়ে এক চড় কষালেন অর্জুনের গালে।

অর্জুন গালে হাত বোলাতে বোলাতে বলল, কি অন্যায় হল মা? আমি কি মন্ত্র কিছু ভুল পড়লাম....

মা বললেন, না বুঝে তো সেই ছোটোবেলা থেকেই মন্ত্র পড়ে আসছিস... সে দোষ আমি ধরিও না.. তাছাড়া আজকাল স্বর্গের কচি দেবতারাও ধাতুরূপ, শব্দরূপ মনে রাখতে পারে না, সব সারাদিন নয় হিন্দী, নয় ইংরাজিতে কথা বলে যাচ্ছে। মায় বাংলাটাও বলে না। সে জন্যে মারিনি..

ক্যাডবেরি

ধুম করে আলোটা নিভিয়ে চলে এলে যে?

দিলীপ কম্বলের ভিতর থেকে বলল।

রত্না শুতে গিয়েও বসে পড়ে বলল, মানে, আলো জ্বালিয়ে শোবে নাকি। যত বুড়ো হচ্ছ, তত ভীমরতি ধরছে...

দিলীপ উঠে বসে বলল, বাহাত্তুরেও বলতে পারো, তিয়াত্তর তো হল না?

রত্না বলল, শোনো এই মাঝরাতে আমার খেজুরে আলাপ করার কোনো ইচ্ছা নেই, শোও...
Subscribe to