Skip to main content

বিদ্যাবধূ

মহাপ্রভু বললেন, কি চাই জানো? প্রেম। ভালোবাসা। অহংকারের মেঘ যদি সরে গেল, অমনি দেখো, ভালোবাসার চাঁদ উঁকি দিল। তোমায় শান্ত করবে, শীতল করে আনন্দিত করবে, পূর্ণ করবে। 
    কিন্তু কাকে ভালোবাসবো?
...

হাতের কাছেই...

বুদ্ধিমান মানুষ মিথ্যুক হয় না, কপট হয়। মিথ্যা সত্যকে অস্বীকার করে। কপটতা সত্যকে গ্রাস করে। দ্বিতীয়টা তাই বেশি ভয়ংকর। অপ্রিয় তেতো সত্যকে প্রিয় মধুর কপটতা ঢেকে রাখতে দেখেছি। সে মধুরকে বিশ্বাস করতেও ইচ্ছা করেছে। ঠকছি জেনেও ঠকেছি।
একজনকে গোলাপ আনতে বললে। সে বাগানে গেলই না, এসে বলল বাগানে গোলাপ নেই। সে একবারই আঘাত করবে, যখন জানবে সে মিথ্যা বলেছিল।
...

স্বেদ

১২৫টা সিঁড়ি ভেঙে ওঠার পর, মন্দিরে শিবের মাথায় জল দেওয়ার পর, যখন ভক্তি, শান্তি না এসে শুধু তেষ্টা আর খিদে চাগাড় দিল, সন্ধ্যা বুঝল, এই চুয়াত্তরটা বছর ভগবান তাকে শুধু ঠকিয়েইছে। সে-ও ঠকিয়েছে বিস্তর। ভগবান আর তার মধ্যে সারা জীবন শুধু লুকোচুরি খেলাই হয়েছে। স্বামীকে ঠকিয়েছে, ছেলে-মেয়েদের ঠকিয়েছে, আত্মীয়-স্বজনকে ঠকিয়েছে। আর নিজেকে তো ঠকিয়েছেই। তারাও ঠকিয়েছে তাকে। 
    বিয়ের আগে আর পরে নিজেকে যখন দেখে, নিজেকে মনে হয় হরিদ্বারের গঙ্গা, আর কলকাতার গঙ্গা। না, শুচিতা-অশুচিতার ধার ধারেনি সন্ধ্যা কোনোদিন। তার শরীরে প্রথম খাবলা বসিয়েছিল তার ঠাকুর্দার ভাই, জগন্নাথ ভট্টাচার্য। সে-ই যখন পুজো-আচ্চাকে জীবিকা করে আশি বছর জীবন কাটিয়ে সজ্ঞানে মারা গেল, সন্ধ্যার বিশ্বাস হয়েছিল যে শুচি-অশুচি মানুষের। সে শুধু মেয়েমানুষের মনে ভগবানের ভয়ের শিকল পরিয়ে পোষ্য বানাবার কল বই আর কিছু নয়।
...

আশ্রয়

তুমি আমার ভাগ্য
ভবিতব্য তো নও 

চিরকালের আশ্রয় 
    আকাশ না-ই বা হলে
ক্ষণকালের বর্ষার মেঘের 
   ছায়াটুকু তো হও

[ছবিঃ Aniket Ghosh]

নিষ্ঠুর

মেঘলা আকাশ

তবু
 "নির্ঘাত বৃষ্টি হবে" 
       শতাব্দী প্রাচীন
           বটবৃক্ষ আর বলে না

বোকা উইয়ের ঢিবি

মানিয়ে তো নিতেই হবে। চ্যালেঞ্জটা হল নিজস্বতাকে হারাতে দেওয়া যাবে না। সেকি সম্ভব? নিজেকে না বদলে বদলকে মেনে নেওয়া যায়?
    দর্জির দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে এই সব ভাবছিল জনাই। তার ছিটটা আস্ত জামা হয়ে গেল। অথচ তার জীবনটা… নাহ্, ভালো দর্জি সে হতে পারল না। এখন আশা ছেলেটাকে নিয়ে। স্বপ্ন। ছেলেটা অঙ্ক করতে এসেছে। ক্লাস নাইনে পড়ে। রাত দশটায় ছাড়বেন স্যার। অর্ধেক মাইনে নেন। 
    নিজের টোটোটার দিকে তাকালো। মানুষ কত কি বানায়! লোহা পিটে, টিন পিটে, কাপড় কেটে। সামনের বড় বড় ফ্ল্যাটগুলোর দিকে তাকালো। সিমেন্ট, ইট দিয়েই তো বানিয়েছে। মানুষের মাথায় কত কি ভাবনা! অথচ জীবনটা যেমন চায় বানাতে পারে না। কেন? 
...

রক্তমণি

মোবাইলটা অফ্ করে চার্জে বসিয়ে, এসিটা অফ্ করে ঝুল বারান্দায় এসে বসল মল্লিকা। আঁচলে মুখটা মুছে বলল, উফ্...। 
    রাত এগারোটা। সারাদিন বৃষ্টি। কেটেছে খানিক আগে। গোটা আকাশ যেন মুছে গেছে কেউ ন্যাতা দিয়ে, যত্ন করে। সবক'টা তারা বসার ঘরের শৌখিন সাজানো জিনিসের মত জ্বলজ্বল করছে। 
    তারা দেখলেই এই তিয়াত্তর বছর বয়সটা একটা বাইরের ঘটনা মনে হয়। সমস্ত ছেলেবেলা যেন বুক আঁকড়ে বসে আছে। লুকিয়ে। তারারা ওদের বাসা জানে। ঠিক বার করে আনে। স্কুলের ব্যাগ, ভাত মেখে খাওয়ানোর সময় মায়ের চুড়ির আওয়াজ, বাড়ির সামনের পুকুর, রাস্তা... সব মনে পড়ে যায়। 
...

আনন্দময়ী

তুমি কি আনন্দময়ী? আমার রেজাল্ট বেরিয়েছে। আমি ফেল করেছি। বাবা যখন পুজো দিতে আসবে মন্দিরে, বাবাকে একটু বুঝিয়ে বোলো না, আমায় যেন না মারে!
       সিক্সে পড়ে। নাম বুলবুল। বাবা মন্দিরের প্রধান পুরোহিত। তান্ত্রিক, জ্যোতিষীও বটে। গ্রামে নামডাক বেশ। 
    বুলবুল বাড়ি এসে, নাকেমুখে গুঁজে মাসির বাড়ি চলে গেল। একাই। সাইকেল নিয়ে। বলে গেল দুদিন পর ফিরবে। মা নেই। এক লতায়পাতায় পিসি আছে। সে না থাকলেই খুশি হয় বেশি। 
...

মোহনা

স্মৃতি নয়, জীবন। সময় তো শুধু বাইরেই সামনের দিকে এগোয়। অন্তরে তো নয়। সেখানে সময় উভমুখী। চাইলেই পিছনে যেতে যেতে কোন ভাঙা বাড়ির সামনে এসে দাঁড়ায়। ফেলে আসা একটা শুকনো পাতা তুলে বলে, মনে পড়ে? 
    আমি বলি, কেন অকারণ ব্যথা জাগাও?
...
Subscribe to