Skip to main content

বুদ্ধিমান মানুষ মিথ্যুক হয় না, কপট হয়। মিথ্যা সত্যকে অস্বীকার করে। কপটতা সত্যকে গ্রাস করে। দ্বিতীয়টা তাই বেশি ভয়ংকর। অপ্রিয় তেতো সত্যকে প্রিয় মধুর কপটতা ঢেকে রাখতে দেখেছি। সে মধুরকে বিশ্বাস করতেও ইচ্ছা করেছে। ঠকছি জেনেও ঠকেছি।

  একজনকে গোলাপ আনতে বললে। সে বাগানে গেলই না, এসে বলল বাগানে গোলাপ নেই। সে একবারই আঘাত করবে, যখন জানবে সে মিথ্যা বলেছিল।

  কিন্তু যে বাগানে না গিয়ে, বাজারে গিয়ে কৃত্রিম গোলাপ নিয়ে আসে? তুমি দিনের পর দিন, মাসের পর মাস, বছরের পর বছর বিশ্বাস করে যাও সেটা আসল গোলাপ ছিল? তারপর একদিন ভুল ভাঙে। ভ্রম ভাঙে। সে আঘাত একবার না, মর্মে গিয়ে তিলে তিলে বাজে। এতবড় ভুল হল? এমনভাবে ঠকলাম?

  মিথ্যা আলো নেভায়। কপটতা কুয়াশায় ঘিরে দেয়। মিথ্যা শুধুমাত্র একটা তথ্যকে অস্বীকার করা। কপটতা বিশ্বাসের ভিত্তিকে তছনছ করে দেওয়া। ভিত্তি মানে সত্য।

  সংসারে ছলনা, কপটতা তবু থাকবে। নইলে খাঁটি জিনিস চিনব কি করে? খাঁটি যে, তার চোখ ধাঁধানো ঔজ্বল্য থাকে না, বরং আপাতভাবে চোখে না পড়া ধৈর্য থাকে। তার স্থায়িত্ব থাকে। তাই কপটতার বিষে জর্জরিত হয়ে মানুষ শেষে আড়ম্বরহীন, সরল, সহজ সত্যকে খোঁজে। প্রাণের সমস্ত শক্তি দিয়ে তাকে আঁকড়ে ধরে। বেঁচে যায়। আর যে কপটের উপর অভিমান করে বসে থাকতে চায়, সে শুধু সময়ের আর নিজের আয়ুর অপচয়ই করে যায়।

  ছলনা, কপটতা থেকে বাঁচার কোনো উপায় নেই। কিন্তু বেরোবার উপায় আছে। সজাগতা ও স্বজাগতা। আমায় বাইরে থেকে এসে তো কেউ জাগিয়ে যেতে পারে না! আমাকে নিজেকে নিজেই জাগিয়ে রাখতে হয়। সেই জেগে থাকার মধ্যে দিয়েই বেরোবার রাস্তা পাওয়া যায়।

  কপটকে কপট হিসাবে জানলে তখনই বেরিয়ে এসো। অভিমান আর প্রতিশোধের ইচ্ছা দুই-ই সময়ের অপচয় হবে জেনে নিজেকে সামলাও। রাস্তা বদলে নিলে দিক নাও বদলাতে পারে। কিন্তু দিক বদলে নিলে একই রাস্তায় থেকেও গন্তব্য বদলে নেওয়া যায়। খাঁটি বস্তুর সন্ধান পাওয়া দুর্লভ নয়, সাধনার। সাধনা মানে শুধু এককেই চাওয়া। বহুকে না। খাঁটি তো একই। যা শুধুই খাঁটি। হাতের কাছেই থাকে, লোভের আড়ালে। এই যা।