শূন্য হাতে
কাদের দোষে?
কাদের দোষে? কারা দায়ী? কার গাফিলতি? কোন দল?
ভাঙাপুলের নীচে এ আওয়াজ যায় না
অর্ধমৃত শরীর আগলে, গলা বাড়িয়ে
চাইছে জল, শুধুই জল
আর ওঠার বল
উদাস
এখনো সেদিকে তাকিয়ে থাকার অভ্যেস
এখনো শিরদাঁড়ায় যন্ত্রণা দেয় ঠাণ্ডা বাতাস
এখনো চোখের কোণে জমা জল, দ্বিধায়
এখনো গল্পগুলো শেষ লাইনে এসে উদাস
আমার কবিতা
আমার কবিতার পায়ে কাদা লাগে
পুরোনো ঘরে মাথা নীচু করে ঢুকতে গিয়ে
আমার কবিতার মাথায় ঝুলও লাগে
আমার কবিতার জ্বর হয়
মন খারাপ হয়
আমার কবিতা শুধু ভাসে না, হাঁটেও
হাঁটতে না পেলে হামাগুড়িও দেয়
তোমায় একটু ছুঁয়ে দেখে আসে
তোমার কি জ্বর? না মন খারাপ?
ভাল আছো কি?
দোহাই
আমার দুর্বলতা
আমার ভয়
আমার ব্যাকুলতা
আমার নিরাপত্তাহীনতা
এ সব নিয়ে
আমি তোমার দরজায় আসব
যে তুমি ভগবান নও,
যে তুমি মানুষের মধ্যে মনুষ্যত্ব
তার কাছে
ভুলে যাও
কেউ দেওয়াল নোংরা করে যেতেই পারে
অপেক্ষায় থেকো না যে -
সে-ই আবার জল ন্যাতা নিয়ে আসবে
দাগ মুছতে
অপেক্ষায় দাগটাই পাকা হয় শুধু
নিজেই মুছে ফেলো
অন্তত দেওয়ালটার কথা ভেবে
তুঁহুঁ মম মাধব
ক্ষ্যাপা তুই কি রাস্তা গুলিয়েছিস?
এদিক ওদিক ঝোপঝাড়ের মধ্যে
কি মাতাল করা ফুল ফুটিয়েছিস?
জানিস না, আমার বাঁধানো পথ?
জানিস না, আমার পাকা দেওয়াল?
জানিস না, আমি কাজের মানুষ?
বদভ্যেস
কারোর কারোর মিথ্যা বলতে
তেমন কোনো কারণ লাগে না
সন্তর্পণে খোঁজে চোরাগোপ্তা গলি
সোজা রাস্তায় হাঁটার অসুবিধা না থাকলেও
কারোর কারোর দু'দিক সামলানো গোঁজামিলে
পুলটিস দিতে দিতে চুল পেকে যায়
কোন্ নৌকায় যে বেশি সুখ অথবা ফুটো
না বুঝে দু'নৌকায় দেয় বেসামাল লোভী পা
যে জানে
যে জানে
সে শুধুই খুঁজে ফেরে জানাকে
যে বিশ্বাস করে
সে-ই আবিষ্কার করে নতুনকে
কখনো যেমন
ছেলেটা হোয়াটস অ্যাপ থেকে চোখ তুলে স্টেশানে তাকালো। অফিস থেকে ফেরার সময় রোজ এই সময়টা তার ওর সাথে কথা হয় ঘন্টাখানেক। মানে শিয়ালদহ থেকে পৌঁছাতে যতটা সময় লাগে আর কি।
স্টেশানের অন্ধকারে আলোতে তার নিজেকে দাঁড়ানো মনে হয়। আর কিছুটা দূরে ওকে। ওকে মানে, যে এখন ন'বছর হল তার স্ত্রী। প্রেমিকা ছিল চার বছর।
এসো
তুমি ডুবসাঁতার জানো?
পানকৌড়ির মত ডুব দাও
যেন গাছের ছায়াগুলোও জানতে না পারে
জলের বুকে ঢেউ না ওঠে দেখো
এ পাড়া ও পাড়া খবর যাবে
এ পারে এসো আমার বুকে মিশে
আমি গাছের ছায়ায় লুকিয়ে আছি
কালোর সাথে মিশে
আলোতে চোখ রেখে
বন্ধ দরজা
বন্ধ দরজা। স্বপ্নগুলো পায়চারি করছে। দরজার ওপাশে আলো। দরজার এপাশে জায়গা কম। স্বপ্নগুলোর ধাক্কাধাক্কিতে মাথায় ফেট্টি।
লোকটা পানশালায় বসে, ফাটা মাথায় হাত বুলোতে বুলোতে, স্বপ্নগুলোকে স্বপ্ন দেখিয়ে ভুলিয়ে রাখার চেষ্টা করে।
সময় সারাটা দেওয়াল জুড়ে টিকটিকিগুলোর সাথে ছোঁয়াছুঁয়ি খেলে।
কবে?
কানায় কানায় পাত্রটা উঠেছে ভরে
উপুড় করে নেবে কবে?
বৃষ্টি শেষে বাড়ি ফিরে গেছে ছেঁড়া মেঘ
নীলাকাশে ডুবিয়ে নেবে কবে?
সব খেলাঘর ছেড়ে এসেছি
কোণের প্রদীপ নিভিয়ে নেবে কবে?
প্রার্থনার মন্ত্র তাঁর
অফিস থেকে ফিরে লোকটা তার বাচ্চাকে কোলে নিয়ে আদর করতে লাগল। মুখে নানা অর্থহীন শব্দমালা। বাচ্চাটা কোলে খিলখিল করে হেসে উঠতে লাগল।
পাশের ঘর থেকে লোকটার বাবা শব্দগুলো শুনছিলেন। চশমাটা খুলে বিছানায় রেখে, খবরের কাগজটা পাশে মুড়ে, বালিশে হেলান দিয়ে আধা শুলেন। চোখ বোজা।
সব পোড়ে না
কালের আগুনে পুড়ছি সবাই
আমি তুমি সে
পুড়তে পুড়তে হচ্ছি ক্ষয়
প্রতিদিন একটু করে রোজ
ভাষারা সঙ্কেত জানায় যে চোখে
ভালোবাসা একদেশি না
তোমায় ছাড়া বাঁচব না
বলেছিলেন তো
একচোখ জলে
বুকের মধ্যে হাপর সামলে
তবু চলে গেছে
জল শুকিয়েছে
হাপর থেমেছে
'হম তেরে বিন অব রহে নহি সকতে'
গানটা শুনলেও
চায়ে চিনি দিতে ভোলেন না
হিসাবের ফর্দে কাটাকুটি হয় না
রাতে ঘুমে বিচ্ছেদ ঘটে না
সুখ
পারিজাতের রেণু লাগা সুখ
চাইনি তো
তুলোয় ভাসা বাসন্তী সুখ
তাও চাইনি
মোমের মত নরম সুখের আস্তরণ
চাইনি চাইনি চাইনি
চাঁদ
সতীমা'র মেলা
মহাপ্রভু
মগ
অনেক সময় পরিত্যক্ত মগটা আমার দিকে তাকিয়ে থাকে। জল ভরার ক্ষমতা না থাকার খবরটা ওর কানে কেউ তুললেও বিশ্বাস করে না। আমি যতবার ওকে ভাগাড়ে রেখে আসি, ততবার ও হ্যাঁচড়াতে হ্যাঁচড়াতে আমার বাড়ির উঠোনে এসে বসে থাকে। তাকিয়ে থাকে। মুখে এখনো সেই আত্মবিশ্বাস - আমি পারব, তুমি জল ভরেই দেখো না।
confusions
Confusions are not alone
they need someone to feel them
I don't know is he confused himself
or he is just experiencing confusions
some says confusions are just like clouds
covering the sky of mind
is it so?
then will it rain or thunder?
হ্যাঁ শুধু আমারই জন্য
আমি সব কাজগুলো সেরে আসব
তোমার ঘুম পেলে ঘুমিয়ে পোড়ো
তোমার ঘুমন্ত চোখের পাতার
প্রতিটা রশ্মি জেগে থাকে আমার জন্য
হ্যাঁ শুধু আমারই জন্য
চন্দ্রিমা রাত্রি
স্টেশনের একাকীত্বকে জানান দিয়ে
চলে গেল শেষ ট্রেন।
নীরস উপন্যাসটা বন্ধ করে
ঝরে পড়া পাতার মতো
বেঞ্চের কোণে বসে,
ভোরের ট্রেনের অপেক্ষায়।
দুটো ধর্ম আছে
দুটো ধর্ম আছে
ক্ষমতার ধর্ম আর ভালোবাসার ধর্ম
মাঝে মাঝে অদল বদল হয়ে যায়
মুখ পোশাক চিহ্ন
গুলিয়ে ফেলা কোনো ধর্ম না
গুলিয়ে ফেলাই অধর্ম
The Moonlit night
A lonely station
last train just passed
I just finished last chapter
of a boring novel
now like a withered leaf
I am on a corner bench
alone
waiting for my morning train
above my head
a revolving stage of stars and planets
all the distant stars, planets are useless to me
someone is singing
I looked here and there
যা থাকবে
ওদের বুদ্ধি জিতবে
থাকবে, যতটা তার আয়ুষ্কাল
ওদের মতলবও সার্থক হবে
টিকে থাকবে সেও
যতটা তার আয়ুষ্কাল
সন্ধ্যের জলসা
প্রতিদিন
প্রতিদিন সকালের গালে
একটা সুরের টিপ এঁকো
কাজলের মত
যেন সারাটা দিন
কোনো ভ্রুকুটির নজর না লাগে
তোমার চোখের দিব্যি
দেখেছি চামচের জল অল্পেতেই কাঁপে, পড়ো পড়ো হয়।
ঘড়ার জল কাঁপাতে আরেকটু জোর লাগে,
ছলকে ওঠাতে তারও চেয়ে বেশি জোর লাগে।
দীঘির জল?
তাতে কাঁপন ধরাতে লাগে মাতাল বাতাস
আর ছলকে ওঠাতে লাগে একটা পুরোদস্তুর ভূমিকম্প।
কাকে বলব?
কোনোদিন কাউকে কখনও
রাস্তার এদিকে হাঁটতে বলিনি, আমার জন্য
না তো রাস্তার ওই দিকে হেঁটেছি,
কারোর জন্য
চোখের হাসি পড়তে পারো?
জানতাম চুরি করবেই তুমি
জানতাম চুরি করবেই তুমি
তবু দরজায় খিল দিইনি
সোজা রাস্তা থেকে বাঁকা রাস্তাই
যে পছন্দ তোমার
সেকি বুঝেও বুঝিনি!
আচ্ছন্ন আকাশ
ভোর নয়, ভোর নয়
সন্ধ্যে
স্থির জলে অস্তরবির সাক্ষর
কিছুটা দ্বিধান্বিত
আকাশ ঢাকছে ধোঁয়ায়
আচ্ছন্ন আকাশ
পাখিগুলো অন্যপথে ফিরে গেছে
সকালের মুখ চেয়ে তবু কোনো প্রাণ
এরই মধ্যে সবুজ স্বপ্ন বুনবে
আকাশে হবে স্বচ্ছ
ভোর হবে, ভোর হবে
সন্ধ্যে প্রসন্ন আকাশে নামবে
পথ না পাল্টে
পাখি এ পথেই নীড়ে ফিরবে
(ছবিঃ দেবাশীষ)
সীমানা ছাড়িয়ে
চাইছিলাম আলো
চাইছিলাম আলো জ্বালব ঘরে, এক কোণে। এদিক ওদিক, এদেশ ওদেশ আগুন খুঁজে বেড়ালাম, চাই যে একটু আলো! কোথায় মিলবে ত্রিভুবনে?
সময়
যা মুঠোর মধ্যে ছিল
আশা ছিল তাতে থাকবে
আমার হাতের ছাপ
নেই
কিছুটা মিলিয়েছে সময়
কিছুটা মিলিয়েছে
নতুন হাতের ছাপ
অনর্থক
অনর্থক মাটি খুঁড়ো না
মাটি খুঁড়লেই জল আসে না
জলের জন্য তৃষ্ণা থাকা চাই
অনর্থক ঘর বেঁধো না
দেওয়াল তুললেই ঘর বাঁধা হয় না
ঘরের জন্য ভিত থাকা চাই
অনর্থক স্বপ্ন দেখো না
ঘুমের রাজ্যে সবকিছুই স্বপ্ন হয় না
স্বপ্নের জন্য ঘুম বাজি রাখা চাই
বসন্ত উৎসব
সবুজের বুকে লালের বর্ণমালা
রঙে ভিজে গেল তৃষ্ণার্তদুটো চোখ
তোমার সাধনা দেখার মধ্যে-
অদেখাকে খুঁজে ফেরা
না হয় ছুঁয়েই তোমায়
আমার চোখের নতুন জন্ম হোক
(ছবিঃ সমীরণ নন্দী)
ভাঙা খেলায়
ছলছল চোখ
কিছুটা আগুনের তাপে
কিছুটা আগুনের ধোঁয়ায়
বুক ভাঙা শোক
কিছুটা অপূর্ণ প্রেমে
কিছুটা ভাঙা পাত্রের মায়ায়
এক মুঠো সান্ত্বনা
কিছুটা সামনের মেঠো পথে
কিছুটা ছুঁয়ে আসা বৃত্তের সীমানায়
আচমকা
হঠাৎ করেই কি ছেদ পড়ল?
হ্যাঁচকা টান লাগল বুকের পাঁজরে?
আলোর পর্দা সরিয়ে
অন্ধকার কড়া নেড়ে গেল দরজায়?
এমনি হয়
যে দিকের আকাশে আশঙ্কা করেছিলে সিঁদুরে মেঘ,
সে মেঘ জমে থাকে অন্য আকাশে অলক্ষ্যে
(ছবিঃ সমীরণ নন্দী)
প্রার্থনা
যতগুলো শ্বাস নিলাম বুক ভরে
ফিরিয়ে দিয়েছি কিছু কি তার?
জমিয়ে রাখিনি কি বুকের খাঁচায়
কিছু তার লুকিয়ে এখানে ওখানে?
যতগুলো মুহুর্ত পেলাম
ফিরিয়ে দিয়েছি কি সব তার?
লুকিয়ে রাখিনি কি কিছু তার
বুকের কোঁচড়ে অলস শ্যাওলা জড়িয়ে?
রাজনন্দিনী
কে ভুল বলল?
আমি?
উঁহু, কক্ষণো না, কদাপি না
তুমি তুমি তুমি
মিথ্যার ঢেঁকি
ফলে কি আর গাছে?
কি প্রমাণ?
আছে আছে আছে
সেদিন তুমি যাচ্ছ পাহাড়পথে
চারদিক নাকি সবুজ সবুজ সবুজ
শীতের ছিল সকাল সেটা
কুয়াশা নাকি অবুঝ অবুঝ অবুঝ
জল বালির বুকে
জল বালির বুকে
কিছু আঁকিবুঁকি কাটল
যে ছবিগুলো জলের বুকে ছিল
বালি তার বুক পেতে দিল
(ছবিঃ সমীরণ নন্দী)
ভুল
তোমায় প্রথমবার কোথায় দেখলাম? বলব না। তোমায় দেখলাম। তুমি দেখলে না। কারণ তখনও তুমি, তোমার তুমি নও। তখনও তুমি নির্ভুল তুমি। আমার তখন ডানে বামে ভুল, উঠতে বসতে ভুল, ঘুমে জেগে থাকায় ভুল। সেই ভুলেই আমি প্রথম তোমায় চিনলাম।
সারাটা রাত
সারাটা রাত
তুমি এলে না, ঘুমও এলো না
মন তোমার ঘরের দাওয়ায়
দাবার গুটি সাজিয়ে বসল
নিজের সাথেই নিজের কতবার
চেকমেট হল
একটা রাতের স্টেশান
গভীর রাত। দূরপাল্লার ট্রেন। স্লিপার কোচের নীচের বার্থে সিট। ঘুম ভেঙে গেল। জানি না কত রাত। ঘড়ি দেখতে ইচ্ছা করল না। থাক। রাত তো রাত। কত রাত জেনে তো দরকার নেই।
লগ্নভ্রষ্টা?
এ মানুষে সেই মানুষ আছে
অস্তমিত সূর্যের দিকে তাকিয়ে অনেকক্ষণ বসে। রাস্তাটা বেঁকে গিয়ে যে গ্রামটাতে গেছে, সে গ্রামের অনেককেই চিনি। তারাও চেনে আমায়। তবু এখন যেন সেই চেনাচিনি থেকে সরে আমি। সামনে অনেক দূর অবধি বিস্তৃত ধানক্ষেত। সবুজে সবুজ চারদিক। গরম তেমন নেই, আবার ঠান্ডার দাপটটাও নেই, বসে থাকতে ভালই লাগছে।
ডাকব না
ডাকব না
সাড়া দেব। অপেক্ষাতে আছি।
ভাঁটা ফিরেছে বহুক্ষণ
নোঙর ফেলেছি জোয়ারের কাছাকাছি।
কান পাতো
তোমার প্রতিটা শ্বাসে আমার চুম্বন
ওরা ফাঁকি দেবে এমন সাধ্য কি?
তোমার না বলা কথার গঙ্গোত্রী
এখনো অযুত বরফে ঢাকা
আমার মর্মের মোহনা পথ চেয়ে ওদের
তোমার বুকের ভিতর যে প্রেমের ভুলভুলাইয়া
তার সব কটা চোরাপথ কে চেনাবে আমায়?
জয়ন্তী
সম্পদ তবে শ্রীপদ
সংশয়রাক্ষস নাশমহাস্ত্রম - স্বামীজি বললেন ঠাকুরকে। যিনি সংশয়কে নাশ করার শুধু অস্ত্র না, মহাস্ত্রস্বরূপ।
কিসের সংশয়? ঈশ্বরের অস্তিত্ব নিয়ে? 'হাঁ'ও বটে, 'না'ও বটে। 'হাঁ'- কারণ, ঠাকুরের ঈশ্বরের 'ইতি' করা যায় না।
একটা দিব্যস্বপ্ন
সেদিন ছিল শিবরাত্রি
সেদিন ছিল শিবরাত্রি। মন্দিরে তিল ধারণের জায়গা ছিল না। ঘন্টা,কাঁসর, ভক্তদের কোলাহলে মুখরিত ছিল দেবালয় প্রাঙ্গণ।
আজ মন্দিরে কয়েকটা টিকটিকি আর পোকাদের ভিড় - মন্দিরে দেওয়ালে, বিগ্রহের গায়ে। শূন্য প্রাঙ্গণ। দেবতা একা। তিনি নীরব চোখে আমায় বললেন,
প্রয়োজন ফুরালে সবাই একা হয়। এমনকি দেবতাও।
পঞ্চভূত
কেউ আগুনকে ভালোবাসে
পোড়ায় বলে
কেউ আগুনকে ভালোবাসে
উজ্বল বলে
তুমি কেন ভালোবেসেছো?
আদৌ বেসেছো কি?
ঘ্রাণ
তবু তো বসন্ত এসেছে
তবু তো ভাঙা রাস্তায় পড়েছে
কুর্চি, পলাশ
তবু তো একটা চিঠি জন্মেছে
প্রসব যন্ত্রণা নিয়ে, তীব্র অপেক্ষার গর্ভ থেকে
মাটির অভিশাপ
"মেয়েদের সম্মান করতে শেখো"
কেন বললে এরকম একটা কথা?
কেন বললে? বলো বলো, কেন বললে?
বলোনি তো চোখ দিয়ে দেখতে শেখো
পা দিয়ে হাঁটতে শেখো, জিভ দিয়ে বলতে শেখো
তবে কেন কেন কেন?
কেন এরকম অসভ্য, ইতর একটা কথা
ভদ্রতার মোড়কে সাজিয়ে রেখেছ বসার ঘরে
তবে কি তোমার মনে অসম্মানের বীজ আছে?
টের পেয়েছ?
কেউ তা জানার আগেই ঢেকে ফেলতে চাও স্লোগানে -
লাইনটানা খাতা
ছোটবেলায় লাইনটানা কাগজে লিখতাম। খানিক বড় হতে সাদাখাতা দেওয়া হল। বলা হল, এখন থেকে এই খাতাতেই লিখতে হবে।
কি মুশকিল, লিখতে গিয়ে লাইন হয় একবার ঊর্দ্ধমুখী তো একবার নিম্নমুখী। কি অসহায় অবস্থা, লাইন কই?
ধীরে ধীরে আয়ত্তে এল। বুঝলাম মনে মনে একটা সীমারেখা টেনে নিয়েই লিখতে হবে। তবেই লাইন এদিক ওদিক হবে না।
মহাশিবরাত্রি
অনুরাগের কোনো রঙ হয় না, গ্রীষ্ম বলেছিল। প্রকৃতির বুকে বেজেছিল কথাটা। সে সাধনায় বসল। বর্ষার জল, শরতের উদাস আকাশ, শীতের হিম তার বুকের ওপর দিয়ে ধীরে ধীরে বয়ে গেল। প্রকৃতি বললে, এ নয়, এ নয়।
তুমি এসো
তুমি রোজ একবার করে
আমার দরজায় আসবে?
যখন তোমার সময় হবে
আমি কোনোদিন একটা ফুল
কোনোদিন একটা কবিতা
দরজার কাছে রেখে দেব
অথবা যেদিন কিছুই না থাকবে
একটা গোটা সাদা পাতা –
তুমি এসো না গো
প্রতিদিন দরজার কাছে আমার
এসো সময় করে
ড্যানিশ গার্ল
তোমার পাশের বাড়িতে আমি থাকতাম
তুমি চিনতে না আমায়
রোজ যখন তুমি বাইরে বেরোতে
তোমার গায়ের গন্ধ আমার বাড়ির বাগানে আসত
আমি চুলগুলো বিছিয়ে কুড়িয়ে নিয়ে আসতাম
তুমি টের পেতে না
যখন সন্ধ্যেবেলা এক আকাশ তারা
বিকালের গরম হাওয়া, বনফুলের গন্ধ-
সবাই থাকত পড়শীর মত
চাপা গলায় কথা বলত তোমার সিলিং ফ্যান
তুমি জানতে না, আমি শুনতে পাচ্ছি
ফুলপথ
এক চিলতে রোদ্দুর
ওর গায়ে মুখে এক চিলতে রোদ্দুর
আলোর বায়না মিটিয়েছে দুচোখের বিস্ময়
অন্ধকারকে শাসিয়ে বলেছে - 'হুস্'
দরজায় দাঁড়িয়ে থমকে গিয়ে
কি ভেবে পিছন ফিরেছে
ইতস্তত করা বাইরের জগৎটাকে
ডেকেছে তার ছোট্টঘরে,
অভয় দিয়ে বলেছে -
'জায়গা হবে না ভাবলি কি করে? - ধুস্'
(ছবিঃ দেবাশিষ বোস)
নিষ্কম্পমান
একটা অদৃশ্য প্রদীপ জ্বলছে
অদৃশ্য অন্ধকারের বুক চিরে
দমকা এক অদৃশ্য হাওয়া
তাকে নেভাতে এলো
অদৃশ্য আতঙ্কে হৃদয় উঠল কেঁপে
নীরব প্রার্থনা রইল ভোরের কুঁড়ির মত
পূবাকাশে চেয়ে
সারা গায়ে তার শিশির অশ্রুজল
এড়িয়ে যাবে
দহন দানে
অবশেষে কিছু কাদা গা থেকে ঝরে পড়ল
কাদাগুলো গায়ে লেপটে
আমার শরীরের আকার নিয়েছিল
আমার হাঁটতে চলতে পায়ের ছাপে লাগছিল কাদা
ক'দিন তাই পরিস্কার মেঝে এড়িয়ে চলছিলাম
কে বলল কানে কানে –
বাইরে গিয়ে দাঁড়া
সূর্যের তাপ কাদার প্রাণরস নেয় শুষে
নবজাগরণ
সন্ধ্যা আসন্ন। নদীর জলে অস্তমিত সূর্যের শেষ আলোর তরল স্পন্দিত রূপ। মন্দ বাতাস শিরীষ ফুলের গন্ধে প্রমত্ত।
পলাশ
এসেছি কি হেথা যশের কাঙালি
গতকাল থেকে তিনটে ভাষণ নিয়ে মিডিয়া তথা ফেসবুকে বহু উচ্ছ্বাস, স্তবস্তুতি শুনে আসছি। তিনটি ভাষণই বাগ্মীতায় বহু উচ্ছ্বাসপূর্ণ। বহু করতালি, বহু হাসাহাসি, বহু চিমটাচিমটি পরিপূর্ণ। কেউ আবেগের কথা বলেন, কেউ সবাই সমান হয়ে যাওয়ার সেই স্বপ্নটার কথা বলেন, কেউ মান-সম্মানের কথা বলেন।
কেউ আগাম ভারতবর্ষ পদ্মময়, কেউ লালময়, কেউ হাতময় দেখছেন।
সংশয়
তুমি আমায় হারিয়েছ প্রতিবার
আমার সংশয়ের উত্তর দিয়ে নয়
আমার সংশয়কেও অনুমতি দিয়ে
তোমার রাজসভায় আসার
সে সংশয় ক্ষীণ দুর্বল চিত্তে তোমায় স্পর্শ করতে চায়,
অবিশ্বাস করতে চায়
তুমি দু'হাত সরে দাঁড়াও প্রতিবার
সংশয় জিতে যায় নাগাল না পেয়ে
তুমি একটু বোসো
তোমার কি এই বসন্তেই আসার কথা ছিল?
আমার অপেক্ষার পালা এত তাড়াতাড়ি কি করে ফুরালো!
বসার ঘরে কিছু অতিথি আমার এখন
তুমি শোয়ার ঘরে একটু বসবে?
কিছু কাজও আছে আধখানা বাকি
তুমি বসবে ছাদে? ছাদের পাশের পলাশ গাছটায় এসেছে কুঁড়ি।
আমার কিছু লোককে কথা দেওয়া আছে,
তাদের বাড়ি যেতেই হবে, হ্যাঁ গো যেতেই হবে
ওরা
দ্বিধা
মুহুর্তরা সামনে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে
লাভ ক্ষতির হিসাব নিল ঝরাপাতা
দু'হাত ঝেড়ে, সামনে তাকিয়ে আছি
কিছুটা দ্বৈধ। যাওয়ার ছিল?
না ছিল কারোর আসার কথা?
(ছবিঃ জয়দীপ ঘোষ)
নিম খাওয়ালে চিনি বলে
যে ভয়গুলোকে প্রাণপণে এড়িয়ে চলার চেষ্টা করেছি, মনে হয়েছে বারবার যে এই কাল্পনিক ভয়ংকর ঘটনাগুলোর একাংশও যদি বাস্তব জীবনে ঘটে তবে মরে যাব!
জাগা স্বপ্ন
হয় তো ভুল জানতাম
মোড়ের বাঁকে কোনো শিউলি গাছ ছিল না
হয় তো কোনোদিনই ছিল না
তবু আমার জানলা দিয়ে যে গন্ধটা আসত
আমার বিছানা বালিশে ঘুমের সাথে মিশত –
আমার কেন জানি মনে হত
সে গাছটা ওই মোড়ের বাঁকেই আছে
বোঝো
কেউ কথা বলছে?
অনুভব করো কণ্ঠস্বর
কারণ কথার মানে শব্দগুলোয় না,
কণ্ঠস্বরে থাকে
কণ্ঠস্বর নেই?
খোলা চোখের উষ্ণতায় রাখো হাত
বুঝবে কখনো পুড়ছে, কখনো ভিজছে
হয় তো বা কখনো হিম শীতল
বন্ধ চোখ?
মুখের চামড়ার ভাঁজে রাখো চোখ
দেখো গ্রন্থাগারের সামনে দাঁড়িয়ে তুমি
এভাবেই বোঝো
কি বুঝবে?
বলা যায় না
ইঙ্গিত করা যায় হয় তো
বলে যাও
পল্টুনামা
বাঁ দিকে, রাস্তা পেরিয়ে যার চায়ের দোকান
ওর নাম পাঁচু
বয়েস কত? বাহাত্তুরে ধরব ধরব করছে
ওর যে নাতি, বয়েস কত?
তা এই আশ্বিনে তেরোর কোল তো ছুঁচ্ছে
চায়ের দোকান, সেই তো চালায়
বুড়ো তো কেবল তামাকই খায়
হাই তোলে আর হরি হরি বলে
নাতি পল্টু কেটলি চাপায়,
তারই ফাঁকে বইটা খোলে