Skip to main content

যে ভয়গুলোকে প্রাণপণে এড়িয়ে চলার চেষ্টা করেছি, মনে হয়েছে বারবার যে এই কাল্পনিক ভয়ংকর ঘটনাগুলোর একাংশও যদি বাস্তব জীবনে ঘটে তবে মরে যাব!

    তবু সে ঘটনাগুলো ঘটেছে। একাংশে না, শতাংশ ছাপিয়ে ঘটেছে। মনে হয়েছে, সব শেষ হবে আর খানিক পরেই, এই যে মাথা ঘুরে রাস্তায় মুখ থুবড়ে পড়ব, আর কোনোদিন উঠে দাঁড়াবার শক্তি পাব না।
    তবু রাস্তাটা ফুরিয়েছে। রাস্তা কিছু বিশ্বাস কেড়েছে, রক্তাক্ত পায়ের কিছু ছাপ নিয়েছে, চোখ গলা জল নিয়েছে, খানিক দীর্ঘশ্বাস নিয়েছে। আমায় নেয়নি। নিতে পারেনি। নিতে পারেও না।
    কে নেবে? ছেলে, মেয়েকে অকালে, অসুরের হাতে হারিয়েও বহু বাবা-মা আজও বেঁচে আছেন। বহু মানুষ যাদের বেঁচে থাকার আপাতদৃষ্টিতে সব হারিয়েছেন, তারা তবুও আছেন। সংসারটা তাদের মুখের দিকে তাকিয়েই সকালকে ঘরে ডাকে বলে আমার অন্তত বিশ্বাস। কত কঠিন লড়াই মানুষকে লড়তে দেখেছি, কি ভীষণরকম হেরে যেতে দেখেছি মানুষকে ভাগ্যের কাছে, মিথ্যার কাছে, অশুভ শক্তির কাছে। তবু কি অদম্য আত্মবিশ্বাসে উঠে দাঁড়াতে দেখেছি। কোনো বিরাট দর্শনের জোরে না। শুধু বেঁচে থাকার মধ্যে যে গর্ববোধ আছে সেটাকে মরতে দিতে চায় না বলে। শুধু বাঁচবে বলে। বেঁচে থাকার কোনো উদ্দেশ্য হয় কিনা জানি না, তবে অর্থ হয়। সেটা বেঁচে থাকাই। তবু প্রতিদিন সকালে মনে করা আমি আছি, তবু আছি।
    আপনার সামনে আশাপ্রদ কিছু নেই। নাই থাক। হতাশাও নেই। ওটা আপনার মনের সৃষ্টি। আমার সামনে সিঁড়ি না থাকলেই খাদ আছে, এ আমি বিশ্বাস করি না। মানুষ সত্যিকারের খাদের সামনে এসে দাঁড়ালে তবু কিছু না কিছু একটা খোঁজে উঠে দাঁড়াবার তাগিদে, কিন্তু আশঙ্কার খাদের থেকে ওঠার কোনো উপায় সে খুঁজে পায় না। পাবে কি করে? যে মন দিয়ে সে উপায় খুঁজবে, সেই মনই তো খাদের দুঃস্বপ্ন বুনতে ব্যস্ত। মনের মত এমন শক্তিশালী অস্ত্র সারা বিশ্বে নেই। মুশকিল হল সে গড়তেও যেমন পারে, ভাঙতেও তার জুড়ি নেই। তার মতন উপদেষ্টাও নেই, আবার তার মতন কুমন্ত্রকও নেই।
    তাই বাইরের সব ভাঙনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান যায়, সাথে যদি নিজের মনকে পাওয়া যায়। সে যেন খুঁতখুঁত না করে, ধৈর্য না হারায়। আমার ইচ্ছা আবেগ বুদ্ধি যদি এক সারিতে এসে দাঁড়ায় তবে যত ভাঙা কপাল হোক না কেন, রাজপথ না পেলেও সুড়ঙ্গ একটা পাওয়া যাবেই যাবে। যদি বিষাদ, হতাশা এসে সে সুড়ঙ্গের মুখ আটকে বসে? তবে রক্ষা করা বিধাতারও অসাধ্যি। সাপের মত বিষাদ বিষ ঢালে, চুঁইয়ে চুঁইয়ে তা হৃদয়ের সব শক্তি শুষে নির্জীব, অদৃষ্টবাদী করে মৃত্যুর অপেক্ষায় রেখে যায়।
    মনকে সব অবস্থায় এই রাজী করানোর সাধনাই চলবার সাধনা। নতুবা বাস্তবিক দুঃখ, আর কাল্পনিক দুঃখ মিলিয়ে যে অঙ্কটা দাঁড়ায় তা একটা জীবনে ধারণা করা সাধ্যাতীত। কারণ ওই দুঃখটাই সব চাইতে বড় সত্য। আর সুখ বলে যেটা পাওয়া যায়, সেটা নিতান্তই দুঃখটাকে সাময়িক ঠেকিয়ে রাখার কৌশল। তবে কি হতাশবাদীর পোঁ ধরলুম? না, তা না। মনকে রাজী করাবার কথা বলছি; সুখে, দুঃখে, সম্পদে, বিপদে তুমি পাশে থেকো মন। যে মন শুধু আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে থাকে সে মন না, যে মন আয়নার আশেপাশেও ঘোরাফেরা করে সেই মন এ ডাকে সাড়া দেবে। তাকে দিতেই হবে, সেখানেই তার গর্ব, সে শুধু হাঁটে না, চলেও। চলার পথে যা কিছুবাধা সৃষ্টি করে তাকে সে নির্মমভাবে ত্যাগ করে, শুধু চলাটা ত্যাগ করতে পারে না। এইখানেই সেই বড় মনটার শক্তি। চরৈবেতি চরৈবেতি ।