Skip to main content

পাঁঠাবিলাস

গুটিগুটি পায়ে গিয়ে আবার হাজির ঠাকুরমশায়ের কাছে। তিনি আড়চোখে দেখে কথা বললেন না। জবার মালাগুলো আলাদা করছেন। পুজো শুরু হতে বেশি দেরি নেই। এই হম্বিতম্বি গ্রামে এইটাই সব চাইতে বড় কালীপুজো। লোক হয় মেলা। দু'দিন খাওয়ানো হয়। একদিন খিচুড়ি। পরেরদিন লুচি। কিন্তু নিরামিষ। এই কালীকে অনেকে ওইজন্যে নিরামিষ কালী বলে। বলি বন্ধ প্রায় বছর পঁচিশেক হল। গ্রামের জমিদার হরিকান্ত একবার স্বপ্ন দেখেছিলেন মা চলে যাচ্ছেন হেঁটে হেঁটে, পিছনে সার দিয়ে পাঁঠার দল। হরিকান্ত কেঁদে মায়ের পায়ে পড়ে বলেছিল, মা তুই কই যাস?
          মা বলেছিলেন, কাশী। দেশ কি তুই পাঁঠাহীন করবি হরিকান্ত?
...

ওদের জন্য

অবশেষে নিবারণ যখন স্কুলের মাস্টারির চাকরিটা নিল, তখন পড়িমরি ঠাকুমা আর সহ্য করতে না পেরে শয্যা নিলেন।
    কারণটা ভেঙে বলি। নিবারণ ঘোষেদের ওঝা বংশ। শোনা যায় নিবারণদের কোনো এক পিতৃপুরুষ, চোল বংশের পুরোহিত ছিলেন। তার কানে কিছু সমস্যা ছিল। দীক্ষার সময় ঠিক মন্ত্র শুনতে পাননি। কিন্তু পরম নিষ্ঠা নিয়ে জপের জন্য শিবকে না পেলেও ভূতসিদ্ধ হয়েছিলেন। সেই থেকে নিবারণদের ভাগ্য ফিরে যায়। কি করে তারা ঘোষ হল আর এই বাংলায় এলো সেও এক ভৌতিক কাণ্ড। সে নিয়ে কারোর স্পষ্ট কোনো ব্যাখ্যা নেই, কিন্তু শোনা যায় যে কোনো এক পূর্বনারী (পূর্বপুরুষ যদি হয় পূর্বনারী হতেই বা দোষ কি!) নাকি এক ব্রহ্মদৈত্যের সঙ্গে এ দেশে এসে ঘর বেঁধেছিলেন। সেই থেকেই তারা এই হুড়ুমকুণ্ড গ্রামে এসে আছেন। তারকেশ্বর থেকে বেশি দূরে নয় এ গ্রাম। 
....

ফিরে আসা

গভীর রাতে দরজায় টোকা।

            বাবা, আমি এসেছি, তুমি কি ক্ষমা করবে আমায়?
          বাবা দরজা খুলে দাঁড়ালো।
          ছেলে মাথা নীচু করে পা ছুঁলো বাবার। বাবা বলল, শুধু আমি না, আমার চোদ্দো পুরুষ অপেক্ষা করছে তুই ফিরে আসবি বলে। ঘরে এসে দেখ।
...

চোদ্দোশাক

ঝুলবারান্দায় দাঁড়িয়ে নিজের কথাগুলো সব পর পর বলে যাওয়া স্বভাব। মাথাটা উঁচু করে আকাশের দিকে তাকিয়ে অনর্গল এক দেড় ঘন্টা কথা বলে, নাক চোখ মুছে উনি ঘরে এসে বসেন। এ রোজকার স্বভাব। যত না আত্মীয়স্বজন মাটির উপর দাঁড়িয়ে, তার চাইতে অনেক বেশি আকাশে। একজন দূর সম্পর্কের ভাগ্নী ছাড়া কেউ নেই আজ সত্যি বলতে।
          আজ সকালে ঝুলবারান্দায় দাঁড়িয়ে আকাশে থাকা ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলছেন, আকাশের দিকে তাকিয়ে, হঠাৎ চোখ গেল সামনের ফ্ল্যাটের ঝুলবারান্দায়, এক কিশোর টুনি লাগাচ্ছে। কি নাম? জানেন না। কারোরই নাম জানেন না। ইলেকট্রিসিটি বোর্ড থেকে রিট্যায়ার করার পর থেকে কাউকে চিনতে ইচ্ছা করে না। কারোর নাম জানতে ইচ্ছা করে না।
...

জাগ্রত

“আমার জীবন থেকে সব ভালোবাসা সরিয়ে নাও।”

    জৈন সাধক ভাস্কর এই কথাটা তিনবার উচ্চারণ করল। অনেক উঁচু পাহাড়ের মাথায় এই মন্দির। চারদিক জঙ্গল। দিনের উজ্জ্বল আলোয় স্নিগ্ধ শান্ত দশদিক।

আস্কারা

চক্কোতি মশায় ভীষণ অভিমানী। খিদে পেলে মুখে বলতে পারেন না। নিজে রিকশা ডাকলে, আরেকজন ডেকে দিলে ছেড়ে দেন। এক হাতা বেশি ভাত লাগলে চাইতে পারেন না। কিন্তু মনে মনে ভাবেন, একবারও বলল না আমার আরেকটু ভাত লাগবে কিনা! 

ভ্রষ্ট তোতা কাহিনী

রাজা পাখিটিকে আনাইলেন। সঙ্গে কোতোয়াল আসিল, পাইক আসিল, ঘোড়সওয়ার আসিল। রাজা পাখিটিকে টিপিলেন, সে বলিল, জয় রাজামহারাজের জয়। তাহার পেটের মধ্যে পুঁথির কাগজগুলি পরমোল্লাসে নাচিয়া নাচিয়া বলিল, আমি সব জানি, সব জানি মহারাজ। আপনার কৃপা রাজা। আপনিই সব।

    রাজা কহিলেন, আর গান গাহিবে?

ভিক্ষাপাত্র

মন প্রসন্ন হল না। জগন্নাথ মন্দির থেকে বেরিয়ে বড়দাণ্ডতে পা দিয়েছেন, এক ভিখারির ভিক্ষাপাত্রে লাগল পা। ছিটকে গেল পাত্র। মাথা হল আগুন। "তোমরা বসার জায়গা পাওনা আর, ছোটোলোকের দল…"।

    প্রধান পুরোহিতকে রাস্তা ছেড়ে দিল সবাই। 

লক্ষ্মী

একটা পাখি ডেকেই যাচ্ছে। এইমাত্র মেঘ কেটে চাঁদ উঠল। আজ সারারাত লক্ষ্মী হেঁটে হেঁটে ঘুরবে। দেখবে কে কে জেগে আছে রাতে।

    ট্রেন থেকে নামতেই পায়ের তলাটা টাটিয়ে উঠল। ধূপকাঠির প্যাকেটগুলো থেকে মিষ্টি গন্ধ বেরোচ্ছে। আজ ট্রেন অনেক লেট করল। নইলে এতক্ষণ লাগে?

নিস্তব্ধ পদচারণায়

শশী বাসনপত্র মেজে বাইরের দরজায় তালা লাগিয়ে বিছানায় গিয়ে শুলো। শুতেই পিঠটা টাটিয়ে উঠল। তবু জোর করে পিঠটা চৌকির কাঠের সঙ্গে চেপে রাখলে ব্যথাটা শান্ত হয়ে যায়। শশী অনেক ব্যথা শান্ত করে ফেলেছে এইভাবে, বুকের পাটাতনে চেপে ধরে থেকে। ছটফট করতে করতে ব্যথাটা কইমাছের মত মরে নেতিয়ে পড়ে। শশী ধীরে ধীরে ঘুমিয়ে পড়ে। ও, কই মাছ বলতে গিয়ে মনে পড়ল। শশীর হাতের কই খেতে এই হোটেলে কত লোকের যে

Subscribe to অনুগল্প