মন প্রসন্ন হল না। জগন্নাথ মন্দির থেকে বেরিয়ে বড়দাণ্ডতে পা দিয়েছেন, এক ভিখারির ভিক্ষাপাত্রে লাগল পা। ছিটকে গেল পাত্র। মাথা হল আগুন। "তোমরা বসার জায়গা পাওনা আর, ছোটোলোকের দল…"।
প্রধান পুরোহিতকে রাস্তা ছেড়ে দিল সবাই।
মেয়েটা দরজা খুলে পা ধোয়ার জল দিতে দিতে বাবার মুখটা আড়চোখে তাকিয়ে দেখল।
বর্ষা নামল অঝোরে। মেয়েটা তার ঘরে একা একা বসে। ঘরের মধ্যে মেঘের অন্ধকার, মাধব বহুত মিনতি করি তোঁহে…
প্রধান পুরোহিত পাশের ঘরে শুয়ে। অন্নস্পর্শ করেননি। দেওয়ালে ঝোলানো স্ত্রী'র ছবির দিকে তাকিয়ে রইলেন। কানে আসছে গানের কথা, সুর। ঘুমে এলো চোখ জুড়িয়ে।
সন্ধ্যা নামল। মেয়ে প্রদীপ জ্বালছে রাধাগোবিন্দ'র বিগ্রহের সামনে।
প্রধান পুরোহিত মেয়েকে কিছু না বলে রাস্তায় এলেন। গলি রাস্তা। এ রাস্তা মহাপ্রভু শ্রীচৈতন্যের গম্ভীরা হয়ে চলে গেছে জগন্নাথ মন্দিরের দিকে। প্রধান পুরোহিত ঢুকলেন গম্ভীরায়। নিস্তব্ধ। প্রদীপ জ্বলছে। কেউ অন্ধকারে বসে নামসঙ্কীর্তন করে যাচ্ছে। ঠুন ঠুন করে বাজছে খঞ্জনি।
প্রধান পুরোহিত অন্ধকারে নিজেকে আড়াল করে বসলেন। একি! শ্যামা ঢুকল। তার মেয়ে তো!
শ্যামা বসল মহাপ্রভুর দরজার সামনে। বলল, আজ দেরি হল গো, কি বৃষ্টি দেখেছ? আমি তুলেছি ওই গানটা, শোনাই….
শ্যামা গাইছে, মাধব বহুত মিনতি করি তোঁহে….
গান থামল। খঞ্জনি বেজে চলেছে এখনো। শ্যামা বলল, আমি আসি।
খঞ্জনির আওয়াজ খুঁজতে পুরোহিত গেলেন গম্ভীরার পিছনের দিকে। পায়ে লেগে ছিটকে গেল কি….
ভিক্ষাপাত্রটা! ছিটকে গিয়ে গোলগোল ঘুরে দাঁড়ালো। খঞ্জনির আওয়াজ কই? ধুপের গন্ধ এসে জড়িয়ে ধরল যেন। বলল, ওরে বাটিটা নিয়ে যা…. আমি অপেক্ষায় আছি…
পুরোহিত আছড়ে পড়ল মাটিতে। বৃষ্টির অঝোর ধারায় স্নান করতে করতে মাটিতে ভিক্ষাপাত্র নিয়ে লুটিয়ে পুরোহিত। চোখের জলে ভেসে গেল গম্ভীরার মাটি। পুরোহিত উঠে বললেন, আমি আসছি প্রভু... আমি আসছি….