চিন্তন

একাকীত্বের সাথে নিঃসঙ্গতা রোজই সকালে বেরোয় বেড়াতে।
একাকীত্ব নিয়ে আসে মুঠো ভরা ফুল, চোখ ভরা বিস্ময় আর বুক ভরা গান।
নিঃসঙ্গতা নিয়ে আসে মুঠো ভরা ধুলো, চোখ ভরা ঈর্ষা আর বুক ভরা দীর্ঘশ্বাস।

আমি বলি কেন এই রকমই হবে?

প্রতিটা মানুষ তার একটা নিজের পৃথিবী নিয়ে ফেরে। তাতে তার নিজস্ব নদী, পাহাড়, বন, সমুদ্র সব আছে। তার হাতে লাগানো বাগান আছে, তার হাতে তৈরী ঘর আছে। সে পৃথিবীতেও তার বাইরের পৃথিবীর মতই ঋতু পরিবর্তন হয়। গ্রীষ্মের তাপ যেমন লাগে, বসন্তে ফুলও তেমন ফোটে। বর্ষা যেমন প্লাবন আনে, শীত তেমন কুয়াশাতেও ঢাকে।

যখন স্কুলে পড়তাম, টিফিন বক্সের একটা রহস্য ছিল। মা কি টিফিন দিয়েছেন আজ? ম্যাগী না পরোটা? চাউ না রুটি? না সুজি? না অন্য কিছু!

আজও টিফিন বক্সের ঢাকনা খুলছি প্রতিদিনের মোড়কে। রোজই ভাবি, আজ কি এনেছে আমার জন্য? ঠোঁটের কোণে হাসি, না চোখ জ্বালা ধরা ব্যাথা? নাকি পাঁচ মিশালি তরকারী? 

যাই আনুক, নিতে হবে হাসি মুখেই, পরের দিনের দিকে তাকিয়ে।

ভয়ের জিনিসকে যত সহজে বিশ্বাস হয়, অভয়কে তত সহজে বিশ্বাস হয় কই? তুলসীদাসজী বলছেন, অমৃত সারা জীবন কানেই শুনে এলাম, চোখে পড়ল শুধু বিষ।
 
এ অভিজ্ঞতা কার জীবনে না নেই। তবু নিজের সামনে যখন দাঁড়াই, প্রশ্ন করি তোমার এ সংসারে চলার পুঁজি কি? মন বলে, কিছু ভাল কাজ করার ইচ্ছা। হ্যাঁ, এইটাই আজ থেকে কাল, কাল থেকে পরশু হাত ধরে নিয়ে চলেছে।
 

সব সম্পদ সিন্দুকে, লকারে, আলমারীতে রাখা যায় না। কিছু সম্পদ বুকের মধ্যেও সযত্নে রাখতে হয়। বন্ধুত্ব, বিশ্বাস, ভালোবাসা - এ সম্পদ চুরি হয় না, যদি না আমি হারিয়ে ফেলি।

সব ফসল ক্ষেতেই জন্মায় না। কিছু জীবনেও জন্মায়। উপলব্ধির ফসল ছাড়া জীবন রিক্ত। সাধক রামপ্রসাদের সেই বিখ্যাত গান আছে না- 'এমন মানব জমিন রইল পতিত আবাদ করলে ফলত সোনা'।

মাঝে মাঝে সব গুলিয়ে যাওয়া ভাল। আবার করে গোছাতে গিয়ে, কিছু জিনিসকে আবার নতুন করে চেনা যায়। যাকে মনের নীচের তাকে রেখেছিলাম তুচ্ছ করে, তাকেই হঠাৎ করে ড্রয়ারে তালা দিয়ে সুরক্ষিত রাখতে ইচ্ছা করে। মনে হয়, এতো মূল্যবান জিনিসটা চোখ এড়িয়ে গিয়েছিল কি করে!
 

বাজারে তো আর জামার অভাব নেই। কত কায়দা, কত রঙ, কত বাহার! তা বলে কি সব জামা আমার মাপের হয়, না সব জামায় আমায় মানায়!?

এটা বুঝে গেলে, বাজার আর আমাকে তাড়িয়ে নিয়ে বেড়ায় না। বাজারের প্রয়োজন নিজের প্রয়োজন ফুরালেই ফুরায়।
 
এটা না বুঝলে বাজার আর কিছুতেই পিছু ছাড়ে না। আত্মার দেহ ছাড়ার সময় হয়ে যায়, কিন্তু দেহের আর বাজার ছাড়ার সময় হয় না। মন সাবধান!

গভীর রাতে আমার বুকের ভিতর থেকে দুজন বেরিয়ে আসল।

  ভারী বাতাস। জলে ভারী। কালো মেঘের বুকে জমে থাকা বিদ্যুতের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে অবাক হয়! এত আলো! এত তেজ! তবু সে মেঘের বুকে মিলিয়ে থাকে কি করে? কেন সে থাকে?

সে বৃষ্টি হয়ে নীচে পড়ে। কত রঙের ফুল পৃথিবীর বুকে ফুটে। তার অবাক লাগে। এত রঙ! এত রূপ! তবু এই একরঙা সবুজ গাছগুলোর মধ্যে লুকিয়ে থাকে কি করে? কেন তারা থাকে?

দুর্বলের হিংসাই একমাত্র সম্বল আর অভিযোগই একমাত্র হাতিয়ার। এটা বেশ বুঝতে পারছি। কবে একটা গল্প পড়েছিলাম। একটা মশা হাতির পিঠে বসেছিল। তা আচমাকাই হাতির লেজের বাড়ি খেয়ে ঘায়েল হয়ে, ঘ্যান ঘ্যান শুরু করে, এটা কি ন্যায্য বিচার হল!

    তারপর অনেক জল এনে হাতিটাকে ডুবিয়ে মারার চেষ্টাও করে মশা। হয় না।