নির্ভরতা
আমি নীলাকাশ ভালোবাসি। সবুজ মাঠ ভালবাসি। দিগন্তে মনকে বিলীন করতে ভালবাসি।
এরকম আরো অনেক কিছু ভালোবাসি। কিন্তু নির্ভর করি কি এগুলোর ওপর? না। নির্ভর করি মাটির উপর, যে নীরবে আজন্ম আমার ভার বহন করে চলেছে। এমনকি তাতে কম্পন ধরলেও হুমড়ি খেয়ে পড়তে হয় তারই বুকের ওপর। আবার ঘরও বাঁধতে হয় তারই বুকে।
ফাঁকি
ফাঁকি দিয়েছি। পড়াশোনা, বাবা-মা, ভাই-বোন, আত্মীয়স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী, বন্ধু-বান্ধব ইত্যাদির লম্বা লাইন। এ সবেতেই ফাঁকি দিয়েছি কম বেশি। সময়, দায়িত্ব, কর্তব্যতেও ফাঁকি আছে।
তাই আমায় কেউ ফাঁকি দিলে রাগ হয় না, হাসি পায়। মনে মনে বলি, এ কৌশল আমিও জানি।
"আপন দুটি চরণ ঢাকো"
প্রত্যক্ষ চাপ তো জীবনে আছেই। আরেকটা আছে পরোক্ষ চাপ। যখনই আমি কারোর নিন্দা করছি, বা সমালোচনা করছি, তখনই আমার মনে একটা ক্ষোভ, বিদ্বেষ, বিরূপতা তৈরী হচ্ছে। সেটা আমার মনের পক্ষে অতিরিক্ত চাপ।
তার চেয়ে থাক। 'আমি কারোর স্বভাব শুধরাতে পারি না' এই সহজ সিদ্ধান্তটা মেনে নিলেই হল।
"সে থাকে না, থাকে বাঁধন"
আমার ধরা ছোঁয়ার জগতে যখন তোমায় চাই, তখন তোমার সাথে সাথে নিজেকেও বেঁধে ফেলি সীমায়। সে সীমা নিরাপদ বটে, তবে সে সীমাতে গর্বেরও কিছু নেই। আমার মাথার ওপর যে নীলাকাশ, সে তো আমার প্রয়োজনের বস্তু না, সে আমার মুক্তি! সারাদিন সংসারে জোয়াল বাধা ঘূর্ণিতে, একটু ফাঁক পেলেই চোখ যায় ঐ দূরের নীলাকাশটায়। তখন সে দূর কই?
"হাতের নাগালে পেয়েছি সবারে নীচুতে"
সেই কবে থেকে কিছু জিনিস জোগাড় করতে শুরু করেছিলাম। কয়েকটা জিনিস বানাতেই হবে এমন সাধ ছিল। একটা অট্টালিকা, একটা ওই উঁচুতে - যেখানে দেবা-দেবীরা থাকেন, সেখানে ওঠার সিঁড়ি, আর বিশাল একটা সেতু।
মার্জনা
সবচাইতে বড় আড়াল নিজের সাথে নিজের আড়াল। যে করেই হোক নিজের মুখোমুখি হতেই হবে। যা কিছু পাপ, তাকে মাথা নীচু করে স্বীকার করে, জোড় হাত করে নিজের অন্তর্যামীর সামনে হাঁটু গেড়ে বসতে হবে, ক্ষমা চাইতে হবে।
সুখ ও আনন্দ
আনন্দ আর সুখের পার্থক্যটা হল খোলা হাওয়া আর পাখার হাওয়ার মত।
পাখার হাওয়া পেতে আমার কিছু শর্ত আছে। একটা ঘর চাই, পাখা চাই, তার চাই, সুইচ চাই, সর্বোপরি বিদ্যুৎ চাই। তবে গিয়ে পাখার হাওয়া।
শুধু তাই না। পাখার নীচে যদি কেউ বসে, তাকে তাড়াবার কৌশলও ভাবতে হয়। সুখ এমন ধারাই। অন্যকে তাড়াতে চায়। না হলে তার নিজের ভাগে কম পড়ে।
মন
সবাই বলল মনটাকে শক্ত করো। উনুনে আঁচ দিয়ে, তাতে ঘুঁটে, কাঠ কয়লা সব ঢাললাম। আঁচ গনগন করে উঠল। মনকে চড়ালাম। শক্ত হল। শক্ত হল, শুধু বাইরেটাই। ভিতরে একটুও আঁচ ঢুকল না।
বাইরেটা এত শক্ত এখন, যে বৃষ্টির ছিটে বাইরে আসে না, কিছু ভেঙে পড়ার আওয়াজ কান পাতলেও বাইরে থেকে শোনা যায় না, ঝড়ের দাপটও শুধু ভিতরেই আছাড় খেয়ে মরে।
ভাল ও খারাপ
এমনটা অনেকবার হয়েছে। কোনো একজনকে খুব খারাপ ভেবে তাকে আমার বাগানে খুব চোখে চোখে রেখেছি। যেই না চোখের আড়াল করেছি, অমনি সে হয়তো গাছের একটা ডাল মট করে ভেঙে দিয়ে পালাল। আমি ভেবেছিলাম সে হয়তো সুযোগ পেলেই সব গাছগুলো উপড়ে ফেলবে বা বাগানে গরু ঢুকিয়ে সব নষ্ট করবে। তা না, শুধু একটা ডাল!