"টুকরো করে কাছি আমি ডুবতে রাজি আছি"...
রবীন্দ্রনাথের সাথে সহমত হতে নারলাম। কিছুতেই মানতে পারলাম না। সর্বাংশে, নিজের সর্বসত্তা দিয়ে প্রতিবাদ জানিয়ে বললুম... না... না.. না.. কভি নেহি... নেহি... নেহি... নেভার.. নেভার...নেভার... চাই না... চাই না... চাই না... দাদা আমি বাঁচতে চাই... চাই... চাই...
যাওয়া - আসার হিসাব
শুধু পুরোনো ক্যালেন্ডারটাই ফেলতে মন কেমন। বাকি আর ছাড়ব কি? যে যাওয়ার সেকি আর অনুমতির অপেক্ষা করে, না তিথি-নক্ষত্রের? আর যে আসে, সেও আসে এমনিই। যাওয়া - আসার হিসাব মেলা দায়। থাক বরং। আমার উঠোনে কত পায়ের ধুলো। ফেলি না। ফেলবও না। কিছু ধুলো চোখে পড়ে জ্বালা ধরিয়েছে। কিছু ধুলো মনে ধরিয়েছে রঙ। মুছেও গেছে কিছু। আবার রয়েও গেছে খানিক। জ্বালাও এসেছে সহ্যের মধ্যে।
যে চলে গেল
যে চলে গেল
সে জানল না
কেউ তাকিয়ে ছিল
কেউ তারই জন্য পথ ছেড়ে
পথের পাশেই বসেছিল
মাটির প্রদীপ
মাটির প্রদীপটাই হারিয়েছি শুধু
সে দীপের আলো-তাপে ঘিরে আছি আজও
ধুপগুড়ি
দায়বদ্ধ
আমি দায়বদ্ধ শুধু সেই সত্যের কাছে
যে সত্য মানবিক
যে সত্য মানুষের হৃদয়ের গভীরতম তল স্পর্শ করে
স্নাত হয়ে উঠে এসেছে
ভোরের আলোয় জাগা লালপেড়ে সাদা শাড়ি
স্নিগ্ধ মায়ের মত
বড়দিন
কি করে জানলে
হিংসাটাই সবচাইতে বড় সত্যি?
জগদ্দল
বুকের ওপর একটা জগদ্দল পাথর বসিয়েছিলাম
অজান্তেই
পাথরটা কবে জানি বিশ্বাসঘাতকতা শুরু করল
রাগ
রাগ হতেই পারে। সে রাগের ন্যায্য কারণ থাকুক চাই না থাকুক। যদিও সব রাগেরই ন্যায্য কারণ নাকি সব সময় থাকে। রাগ মানে কি অসন্তোষ? তা তো নয়। আবার 'তা তো হয়' বললেই বা আপত্তি কি? রাগ মানে কি ক্ষোভ? রাগ মানে কি হতাশা? রাগ মানে কি অভিমান? রাগ মানে তবে ক্রোধ? রাগ মানে তবে অভিযোগ?
হতাশ
জীবন ছিল। মোড়ক ছিল না।
সারপ্রাইজ তো নয়ই।
হতাশ হলে তুমি
হতাশ করলে আমাকেও
পর্যবেক্ষণ
অনেকদিন আগের ঘটনা। স্কুলে পড়ি। দূরদর্শনে কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কন্ঠে রবীন্দ্রসংগীত হচ্ছে। মনোযোগ দিয়ে শুনছি। গান শেষ হল, আমার পাশে বসা একজন কাকু বললেন, বল তো উনি যে শাড়িটা পরেছিলেন তার দাম কত হবে? আর ওনার পায়ের কাছে যে কার্পেটটা রাখা ছিল তার দাম কত আন্দাজ কর তো?
narcissism
একটা প্রশ্ন পাচ্ছে।
ফেসবুক কি কোথাও narcissism এর গোড়ায় জল দিচ্ছে?
অর্থহীন
একটা সুর বেজে চলেছে দূরে কোথাও। কান পেতে শুনলে মনে হচ্ছে, দূরে কই, এই তো কাছে আমারই বুকের মধ্যে বেজে চলেছে সে। সুরটা যেন প্রথম কানে এলো, কিন্তু অচেনা নয়। নিজের ভিতর নিজেকে গুটিয়ে নিয়ে শুনছি, বেজেই চলেছে, বেজেই চলেছে সে সুর। এখনই যেন বর্ষা নামবে, ভিজে চুপচুপ হবে আমার সমস্ত আমি। ভিজতে ভিজতে আমি শুনব, ভাবব - কে বাজালো এই সুর?
তোমার জন্য
কেউ জানে না
চৌমাথা পেরিয়ে ভাবলে, এবার বুঝি একটা হিল্লে হল। যে রাস্তাটায় চলেছো সেটা যাবে সিধা। হয় না। তোমার সোজা রাস্তাটা পাঁচমাথার মোড়ে এনে দাঁড় করায় তোমায়।
তুমি মনে মনে বলো, বিশ্বাসঘাতক।
অভিমান হয় তোমার।
আবার একটা সোজা রাস্তা। তুমি হয়ত আবার নিশ্চিন্ত। সামনে এসে দাঁড়ালো দশমাথার মোড়।
তুমি দীর্ঘশ্বাস ফেললে।
অভিমান কুঁড়ি হয়ে ফুল হতে হতে ঝরে গেল।
রক্তবাহ
রাস্তাটা ক্রমশ ছোটো হতে শুরু করেছে। সামনের দিকে কিছুই দেখা যাচ্ছে না প্রায়। তবু হাতড়াতে হাতড়াতে মানুষটা এগোচ্ছে। আচমকাই রাস্তাটার মাঝখান থেকে দুটো টুকরো হয়ে গিয়ে লোকটা তলিয়ে গেল।
আলোকবর্ষ
হাত পেতেছিলাম
কিছুটা সময় চাইব বলে
পেলাম না
শুধু আঙুলগুলো পিছিয়ে গেলো
কয়েক আলোকবর্ষ
আস্তিক অসম্পূর্ণতা
ভূত বলে কিছু আছে নাকি? আছে তো, খুব আছে। আমি নিজের চোখেই কতবার দেখেছি। প্রত্যেকটা অসময়ের মৃত্যুর একটা অসম্পূর্ণ গল্প রেখে যায়। যায় না? সেই অসম্পূর্ণ গল্পটাই তো ভূত। তাকে দেখা যায়, ছোঁয়া যায়, কোলে তুলে গল্প করা যায়। হয় না?
জুতো
কলিংবেল বাজল। রাত এগারোটা। ছেলেটা দরজা খুলে বাইরে কাউকে দেখতে পেলো না। এদিক ওদিক তাকিয়ে দরজাটা বন্ধ করতে গিয়ে খেয়াল করল, সামনের সিঁড়িতে দু'পাটি জুতো রাখা। ছেলেটা ভ্রু কুঁচকে কিছু মনে করার চেষ্টা করল। পারল না। দরজাটা বন্ধ করে টিভির সামনে এসে বসল। টিভিটা চলছিলই।
ওপার
মেয়েটা বলত, তাকে যে বিয়ে করবে সে কত টাকা যেন মাইনে না পেলে বিয়েই করবে না, বেশ বড় অঙ্কের টাকা থাকবে, চারচাকা থাকবে, বড় বাড়ি থাকবে ইত্যাদি। খবরের কাগজে, ম্যাগাজিনে ক্রিকেটার, অভিনেতাদের ছবি বেরোলে কেটে কেটে বইয়ের ফাঁকে রাখত। তারাই তার জন্য আদর্শ হবু বর।
বাস্তব
বাস্তবে তোমার আমার সাথে কি প্রয়োজন বলো?
তবু কিছুটা সময় বাস্তব না হয় থাকলই আড়ালে
তুমি তোমার সময় হলে ফিরে যেয়ো
আমি ফিরিয়ে নেবো বাস্তবকে আবার আমার মত করে
তুমি ভেবো না
মৃত্যুর ভিডিও
সোশ্যাল মিডিয়া মৃত্যুকে কত সাবলীল করে, ঘরে এনে বালিশ বিছানার উপর রাখছে। কত কত টাটকা মৃত্যুর ভিডিও। কত হত্যার নিপুণ লাইভ রেকর্ডিং। কত আত্মহত্যার স্বচ্ছ, স্পষ্ট, অরিজিনাল ভারসান। কোনো স্টান্ট নয় দেখুন, ভালো করে তাকান। লাইভ ধর্ষণ দেখবেন?
কি করা উচিৎ
"তোমার কি করা উচিৎ
জানতে চাও হৃদয়ের কাছে,
মস্তিষ্ক উপায় বার করে নেবে"
- গুলজার
ভজ গেরুয়া
পুরবেলা চাট্টি ডালভাত খেয়ে, চেয়ারে বসে, বিছানায় দুটো ঠ্যাঙ তুলে, এক ব্রহ্মজ্ঞানীর লেখা বইয়ের সদ্য দুটো লাইন পড়েছি,
"আমি কি, কোথা হইতে আসিলাম, কোথায় যাইব? ভব-বন্ধনই বা কি? কি ভাবে মোচন হইবে? আত্মা কি? জীবাত্মা কি? পরমাত্মা কি?"...
ফোন বেজে উঠল-
- হ্যাঁ রে... কাকু বলছি
- বলো
- আধারের সাথে প্যান লিঙ্ক করেছিস?..
মায়ের চোখ এড়ানো কঠিন
আপনাদের বলছি, সেই সব বাবা-মায়েরা, শিক্ষক-শিক্ষিকা-পাড়া প্রতিবেশীরা...
ঈশ্বর
হে সর্বশক্তিমান ঈশ্বর,
মেয়েটার তো বয়েস ছ' বছর ছিল
ওকে যখন তুলে নিয়ে গেল
আপনারই সামনে
দুর্গন্ধময়
কুলকুচো করেছো?
এবার জলটা ফেলো
শাশ্বত সত্য কিছু ধুয়ে যাক
তোমার জিভ থেকে
ওরা বাসি দুর্গন্ধময় হয়েছে
অকাল বর্ষণ
হেরম্ব বিশ্বাস মহাশয় মস্তকে ছাতা, গায়ে হাফ সোয়েটার নিয়ে গ্রীষ্মের ঘামের ন্যায় স্নাত হইতেছিলেন। রাস্তার চৌমাথায় দাঁড়াইয়া ইতিউতি চাহিয়া যাহা খুঁজিতেছিলেন, তাহা হইল একটি বিশুদ্ধ প্রস্রাবাগার। বৃষ্টি পড়িলে তাহার রেচনাবেগ কিঞ্চিৎ বর্ধিত হয়। লোকমুখে শ্রুত হয় তাহার বাল্যকালে বর্ষাকালে আশেপাশের গ্রাম হইতে গোযান করিয়া কাঁথা আসিত।
যবে ঝরা পাতা এলোমেলো ওড়ে
মানুষেই ঘুরে এলাম
এইমাত্র আমি বাজার থেকে এলাম। জীবন্ত মানুষের ভিড়, প্রতিদিন যেমন হয়। তবে আজ বিশেষভাবে দেখলাম। চোখ দিয়ে, মনের সবকটা হাত দিয়ে স্পর্শ করে এলাম। এইমাত্র আমি বাজার ঘুরে এলাম। শ্মশান নয়, কবরস্থানও নয়, বাজার ঘুরে এলাম। মানুষ মানে বাচ্চাও। রঙীন কাপড়ে ঢাকা সুপ্ত শরীরের কুঁড়িতে আলতো পাপড়ি মন। এইমাত্র আমি বাজার ঘুরে এলাম। শ্মশানে না, না তো কবরস্থান দেখে এলাম। রঙীন চকোলেটের খোসা বাজারের রাস্তায় ধুলোর সাথে মি
যা জমিয়েছি
জীবন চুঁইয়ে যা জমিয়েছি
সে বিষও না, অমৃতও না
জমেছে কিছু ভালোবাসা
ভালোবাসা মানে বিষও
তবে অমৃতও কি নয়?
যেন একটা রেসের মাঠ
যেন একটা রেসের মাঠ। সব ধর্মপ্রণেতা পুরুষেরা ঘোড়াগুলোর জায়গায় দাঁড়িয়ে। গ্যালারীতে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের লোক। কত রঙের পোশাক। সাদা, গেরুয়া, কালো, নীল, লাল। সব্বাই চীৎকার করছে - আরো জোরে...আরো জোরে...আমরা এগিয়ে...আসল ঈশ্বর আমাদের...ওদের নকল...জোরে... জোরে...জোরে....
শুধু যেন শেষ অবধি পৌঁছানোর অপেক্ষা...
'চতুরঙ্গ' ও কিছু কথা
“বুঝিলাম, শচীশ এমন-একটা জগতে আছে আমি যেখানে একেবারেই নাই। মিলনমাত্র যে আমাকে শচীশ বুকে জড়াইয়া ধরিয়াছিল, সে-আমি শ্রীবিলাস নয়, সে-আমি 'সর্বভূত'; সে-আমি একটা আইডিয়া।
ভালোবেসে কেউ সমুদ্র হয় না
ভালোবেসে কেউ সমুদ্র হয় না
ওসব বাজে কথা
ভালোবেসে মানুষ
গ্রীষ্মের সমুদ্রতট হয়
নিজেরই পা রাখা দায়!
শব্দরূপ আর ধাতুরূপ
একটা সংস্কৃত বই পড়তে গিয়ে একটা ঘটনা মনে পড়ল।
আমাদের ক্লাস সেভেন আর এইটে সংস্কৃত ছিল। শব্দরূপ আর ধাতুরূপের চক্করে আমাদের তো একেবারে নাজেহাল অবস্থা। ক্লাস শুরু হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই প্রায় অনেকেই বেঞ্চে বসে থাকার যোগ্যতা হারাতো। সটান বসার বেঞ্চের উপর দাঁড়িয়ে পড়ে নরো নরৌ নরাঃ আওড়াতে হত।
নিজের হৃৎপিণ্ডটা
এমনই একটা ভোরের অপেক্ষায় বেঁচে আছি
এক হাতে নিজের হৃৎপিণ্ডটা আগলে
আরেক হাতে তোমায়
(ছবিঃ সমীরন নন্দী)
Impulse
নিষ্ঠুর পরিহাস
বারবার খাদের মুখে দাঁড় করিয়ে দাও কেন?
অবশ ভয়ে না,
ভালোবেসে
জেনে বুঝেও
কি নিষ্ঠুর পরিহাস তোমার
এই জন্য
আমি এই জন্য তোমার কাছে আসি না,
যে তুমি ভীষণ ভালো বলে
আমি এই জন্য তোমায় ভালোবাসি না,
যে তুমি আমায় ভীষণ ভালোবাসো বলে
আমি এই জন্যে তোমার কাছে আসি,
কারণ তোমার কাছে এলে,
আমার নিজের ভালো হতে ইচ্ছা করে
শিরদাঁড়া
তবু রাস্তাটা পেরোতেই হবে
অবশেষে মনে পড়বেই
মানুষের একমাত্র রক্ষাকবচ -
বলিষ্ঠ একটা শিরদাঁড়া
আজকের দিনটা নিরাপদ ছিল তো?
এখন রাত গভীর
পাড়ার রাস্তা শুনশান
ঘরে ঘরে জানলা দরজা বন্ধ
স্ট্রীট লাইটের আলো চুপিচুপি কথা বলছে
গলির ছায়াগুলোর সাথে
আকাশ ভরতি তারা,
জানি,
তবু তাকাতে ইচ্ছা নেই
ঘাড়ে অসহ্য ব্যথা,
শক্ত হয়ে হয়ে আছে কাল থেকে ঘাড়ের পেশি
বৈঠকী আড্ডা - শারদ সংখ্যা ২০১৭
যুদ্ধবিরতি
একটু বিশ্রাম চাইছি
মহিলা জননাঙ্গের উপর একটা সাদা পতাকা থাক
একটু যুদ্ধবিরতি চাইছি
মানুষ পশুর পার্থক্য
একজন শিশুর যৌনাঙ্গে আঙুল ঢুকিয়ে মজা নিতেই পারে, মানুষ বলে কি পশুত্ব নেই আমাদের? আছেই তো। শিশুটার চরম পরিণতিও হতে পারে। হয় না? পুরুষ কুকুর বাচ্চা কুকুরগুলোকে মেরে ফেলে..ইত্যাদি ইত্যাদি।
COCO
জাগরণ
অভিমানী মানুষটা গাছটাকে জড়িয়ে ধরে বলল, আমি কই?
গাছ বলল, এই তো তুমি।
মানুষটা বলল, এই আমি না, এত বড় সংসারে এত কিছু ঘটে চলেছে, সেখানেই আমি কই?
গাছ বলল, তুমি কি চাও?
মানুষটা বলল, সবাই আমাকে চিনুক, নইলে আমি গলায় দড়ি দেব তোমার ডালে, নইলে তোমার বিষফল খাব।
একটা সাপ গাছের গুঁড়ি বেয়ে উপরের দিকে উঠছিল, সে থেমে গিয়ে লোকটার মুখের দিকে তাকিয়ে বলল, বিষ চাই? মরবে?