নীলেশ কয়েকবার কৃষ্ণনাম গেয়ে দাঁড়িয়ে থাকল এক-দু'মিনিট। কেউ বাইরে এলো না। নীলেশ উঠোনের গেটটা আটকে আরেকবার রাস্তা থেকেই বাড়ির ভিতরের অন্ধকারটায় দৃষ্টি হাতড়ে হাঁটতে শুরু করল। সব বাড়ি যায় না। দরজায় দাঁড়িয়েই বাড়ির ভিতরের অবস্থা বুঝতে পারে নীলেশ। অভ্যাস হয়ে গেছে। ফুটো ছাতাটা মাথার উপর ধরে হাঁটতে হাঁটত

এখনই না
এখনও অনেকে বসে আছে
অনেকে দাঁত দিয়ে নখ কাটতে কাটতে ভাবছে এখনও
এখনও অনেকে বাথরুমের আলো নিভিয়ে
   বাথরুমকে অস্তিত্বহীন করে
      শোয়ার ঘরে শুয়ে টিভিতে রান্না শিখছে
এখনও অনেকের চোখে-মুখে জরায়ুস্থ শিশুর সরলতার ভান

তিনশো বছরের পুরোনো কৃষ্ণমন্দির
রথের উৎসব, 
মঞ্চে বাউলের উদাত্ত কণ্ঠে আল্লাহ্ নাম
আকাশ বাতাস কাঁপিয়ে
      লালনের পদ

খুব কমই এমন হয়
কখনও কখনই হয়
যখন একজন মানুষ
আরেক মানুষে 
   মিশে যেতেই চায়

কামের জন্য না
সুখের জন্য না
শান্তির জন্য না
আশ্রয়ের জন্য না

পূর্ণতার জন্য

কোন রক্তের ঘনত্ব বেশী
কোন প্রাণেতে আনুগত্য
কোন কোন দেহ প্রাণহীন হলে 
তোমরা তাকে শহীদ বলো 
    তোমরা জানো

কখন মাইকে গলা চড়ে
ভোকালকর্ড শীতঘুমে যায়
কখন কাকে তুচ্ছ করে
হঠাৎ ভীষণ উৎসব পায়
    তোমরা জানো

ওদের বোকা বোকা জেদ 
হারতে লজ্জা লাগছে, ইগোতে লাগছে
   জানি তো!
সুক্ষ্ম কঠোর অতিমানবিক নজর তোমার
দেখে নিতে চাইছ, মতলবটা কি?

তবু একটা কথা থেকেই যাবে জানো

সন্ধ্যায় পশ্চিমাকাশে রক্তিম মেঘের বুক চিরে 
    ঘরে ফিরছিল একঝাঁক পাখি

মেঘের সাথে কতটা দূরত্ব ওদের?

অন্ধচোখ বৃদ্ধার পাশে বসে
হত দরিদ্র সম্বলহীন স্বামী
ঢাকের তালে তালে দিচ্ছে তালি

সুখের থেকে কতটা দূরত্ব ওদের?