নিন্দুক
একজন লোক সে শহরে এক ধনীর বাড়ি কাজ পেয়ে গ্রাম থেকে চলে যায়। কিন্তু মাঝে মাঝে সে গ্রামে ফিরে আসে, আর এসেই বলে, এই তোমাদের রাস্তা? এই তোমাদের হাস্পাতাল? এই তোমাদের স্কুল? এই তোমাদের পঞ্চায়েত? এই তোমাদের শিল্প? এই তোমাদের সততা? ইত্যাদি, ইত্যাদি।
তো গ্রামের বেশিরভাগ লোকেই কিছু বলে না তাকে। আবার কেউ কেউ মৃদু প্রতিবাদ করে। কিন্তু বেশিরভাগ লোকই সে নিন্দুকের শহুরে পোশাক, অনুকরণ করা আচার ব্যবহারে মুগ্ধ হয় না বলে সে নিন্দুক যায় আরো আরো রেগে।
ঝড়ের মধ্যে এসো
ঝড় থামলে যে শান্তি?
সে শান্তি চাই না
ঝড়ের মধ্যে এসো
পাশে দাঁড়াও
তখন ঝড় থামুক
না থামুক
পরোয়া করি না
শামুক
পাঁচু পাগলা জেটিতে এসে বসেছে। গ্রামে সবাই তাকে এই নামেই ডাকে। লঞ্চ আসতে দেরি আছে আরো আধঘন্টা। হঠাৎ খুব জোরে আওয়াজ শুনে ফিরে তাকালো, একটা লরি করে অনেক লোক এসেছে। বড় বড় বক্স বাজছে। হিন্দী গান হচ্ছে। কি ড্রাম পেটানো আওয়াজ। বেশি লোক দেখলে পাঁচু পাগল জড়সড় হয়ে যায়। এখনও হল। তার পিঠের ব্যাগটা পিঠ থেকে খুলে বুকের কাছে নিয়ে নিজেকে শামুকের মত গুটিয়ে বসল।
সে কুড়িয়ে নেবে
প্রতিদিন ফুল চুরি করার সময়
তার একটা কথাই মনে হত
তার নিজের একদিন ফুলের বাগান হবে
নাকি পৌরুষের প্রয়োগশালা?
ওদের রাস্তায় বেরোনো বন্ধ করো
ওদের মুখ দেখানো বন্ধ করো
ওদের উপার্জনের আইন বন্ধ করো
ওদের জনপ্রতিনিধি হওয়া বন্ধ করো
বিস্ময়হীন অলসতা
একজন কেউ অপমান করবে
আর তুমি সেই কাদা
নিজের গায়ে, মাথায়, চোখেমুখে, হাতেপায়ে মেখে বসে থাকবে?
আর একে তাকে ওকে ডেকে
অভিমান করে বলবে,
দেখো কি করেছে,
দাও জল দিয়ে ধুয়ে দিয়ে যাও?
মেঘলা আকাশ
ঝন্টি রাস্তার মাঝখানে বসে একটা বিড়ি ধরালো। কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ে। অনেকদিনের কাজ। রাস্তা চওড়া হচ্ছে। মাঝখানে খুঁড়ে একটা বড় ঢিবি মত করেছে। বাবুদা যা বলছে, তাই করছে। ঝণ্টির লেবারের কাজ। রাণাঘাটে বাড়ি। বাবা নেই। মা নেই। ভাই নেই। বোন নেই। ঠাকুমা ছিল। নেই। সে আকাশ থেকে জন্মেছে। ঠাকুমা ভিক্ষা করত। রাণাঘাট স্টেশানে। মরার সময় ছিল না ঝণ্টি। কেরলে ছিল। বাবাইদা নিয়ে গিয়েছিল কাজে। বিল্ডিং বানানোর ওখানে লেবারের কাজ ছিল। ঠাকুমা মরেছে কেউ জানায়ও নি। কেরলের খাবার সহ্য হচ্ছিল না। খালি খালি বমি পায়খানা। বাবাইদা পাঠিয়ে দিল। রিজার্ভেশন করেনি। জেনারেলে দাঁড়িয়ে বসেই চলে এলো। ভোরে হাওড়ায় যখন ট্রেন ঢুকল শরীর আর দিচ্ছে না। পায়খানা দিয়ে রক্ত পড়ছে। কোনোরকমে বাসে চড়ে শিয়ালদা, তারপর ট্রেন। ট্রেনে তো অজ্ঞানই হয়ে গেল। লোকে বলল গ্যাস। গ্যাস না, খিদে। রাণাঘাটে নামল বেলা ন'টা। দরজায় তালা দেওয়া। কেন? এত সক্কালে মাল বুড়ি ভিক্ষা করতে বেরোল নাকি?
POEMS OF LIFE
এ হওয়ারই ছিল
"না বললেও হত" র সঙ্গে "কেন বললাম" এর মুখোমুখি দেখা হল একদিন। কেউ কারোর কাছে কোনো কৈফিয়ৎ চাইল না। তাকালোও না একের অন্যের দিকে। দুজনে দুজনকে এড়িয়ে, ফিরে যেতে, হাওয়া উদাস হল, বলল,
"এ হওয়ারই ছিল"।
খেলনার দোকানগুলো
বিশ্বকর্মা পুজো মানে দারুণ উত্তেজনা। উঁহু, এই আজকের কথা না, সে বহুযুগ আগেকার কথা, যখন আমার উচ্চতা কম ছিল, দাড়িগোঁফ হয়নি, কেশ কৃষ্ণবর্ণ ছিল, চোখে চালসে পড়েনি, এবং সর্বোপরি সংসারে নানা বস্তুর উপর কুতুহল ছিল বেজায়।