সমান্তরাল
কত যুগ হল
পাশাপাশি
সমান্তরালে হাঁটছি
মাঝামাঝি যে প্রাচীর, সেও -
সমান্তরালে হাঁটছে
পাওয়া না-পাওয়া
জীবনে পাওয়া তো যায় অনেক কিছুই,
তবে হিসাবে রেখে যায় শুধু না-পাওয়াগুলোই
~ গুলজার
দাহ
১
---
fact
চশমা ছাড়া ফেসবুকে একটা পোস্টে চোখ পড়ল, একটা শব্দ - sex. প্রোফাইলের ছবিটা খালি চোখে অস্পষ্ট বুঝছিলাম, প্রথমে মনে হল একজন মহিলা, সাথে সাথেই মনের মধ্যে উঠল, বাপ রে! সাহস আছে। তারপর দেখলাম পুরুষ, সাথে সাথেই সে লেখা হয়ে গেল fact আমার কাছে।
নিঃসঙ্গতা
"আসলে আমায় কেউ চায় না
কেউ সত্যিকারের ভালোবাসে না
আমি একা, সম্পূর্ণ একা,
নিঃসঙ্গ, অসহায়...
আহা রে, আমি বেচারা রে!"
ইহা একপ্রকার চোরাবালি বিশেষ!
ইহার খপ্পরে একবার পড়িয়া, তাহা হইতে আপনাকে ত্রাণ করিতে পারিয়াছেন, এমন মানুষের সংখ্যা নিতান্তই কম!
অনুভব
সবই কি ব্রেকিং নিউজ?
অনুভব মানে কি তবে?
নিঃশব্দতার ভাষা
নিঃশব্দতার ভাষা যদি না বোঝো
অভিধানের জঙ্গলে পথ হারাবে
এক গাছ থেকে অন্য গাছে
উড়ে যাওয়া পাখি
আকাশেই অলখ পথ আঁকে
আবর্ত
প্রতিবার আবর্তটার বুক আঁকড়ে
চীৎকার করে প্রশ্ন করি -
"দরজাটা কোথায়? আমি বেরোব তো!"
আবর্তটা ঘুরেই চলে...ঘুরেই চলে...ঘুরেই চলে
শুধু আমার প্রশ্নটা
প্রতিধ্বনিত হয়ে
আমারই কাছে ফিরে আসে -
কবি
কবি বলেছিলেন
বুকের মধ্যে একটা পাথর রাখতে
ধ্বনিতে প্রতিধ্বনি জাগবে
রেখেছি কি?
কবি বলেছিলেন
অসহায় ক্রন্দনরত মানুষের পাশে দাঁড়াতে
দাঁড়ালাম কি?
কবি যেতে চাননি
যে সন্তানের মুখে একটা চুমু খেতে চেয়েছিলেন
সে কোথায়
সে সুরক্ষিত তো আজ?
একা
প্রতিটা মানুষ একা একা স্নান করে
ঢেউয়ে দোলে, নোনাজল খায়, সাঁতার কাটার চেষ্টা করে -
বঙ্গ সংকট
কিছু যন্ত্রণা
কিছু যন্ত্রণা সময়ের উত্তরাধিকারে পেয়েছি
কিছু যন্ত্রণা এই ভূখণ্ডের উত্তরাধিকারে পেয়েছি
কিছু যন্ত্রণা মনুষ্যত্বের উত্তরাধিকারে পেয়েছি
ফুরসত
তোমায় ভাবতে ভাবতে
দেখতে দেখতে
শুনতে শুনতে
যদি ফুরসত মেলে তো ভাবব
কেন তোমায় ভেবেছিলাম
ভাষা আর অনুভব
ভাষা আর অনুভবের মধ্যে
এক খরোস্রোতা নদীর ব্যবধান
পেরোতে পারলে
হাতের উপর একটা হলুদ প্রজাপতি এসে বসে
(ছবি - Susmita Barat)
কুয়ো
বাসের পিছনের জানলার ধারের সিটটা রহিমের ভীষণ প্রিয়। জাগুলী থেকে শিলিগুড়ি তাকে আর না হোক মাসে চারবার যেতে হয়। বাসেই যায়। কদাচিৎ ট্রেনে। ট্র্যাভেলারের সাথে তার ভালোই দোস্তি। এই সিটটা ফোন করলেই ফাঁকা রেখে দেয় শিবু, মানে যাদের ট্র্যাভেলস আর কি।
পদ্মাবতী
তোমায় ভুলে যাওয়া
তোমায় বারবার ভুলে যাওয়া আমার অভ্যাস
তুমি বলো স্বার্থপর, দুনিয়া বলে উদাসীন
মূর্খরা বোঝে না
শ্বাস নেওয়ার আগে শ্বাস ফেলাও তো জরুরী
Isolation
Isolation - বিচ্ছিন্ন রাখা না থাকা?
মনের ধর্ম কি? বিচ্ছিন্ন থাকতে চাওয়া? কিছু কারণে কখনও কখনও হয়ত চাইলেও মূলত তা মনের ধর্ম কি? আসলে কথাটা 'isolation' বললে মনের যে বোধের সাথে যায়, 'বিচ্ছিন্ন' বললে তা যায় না। ছিন্নমন বা ছিন্নসত্তা বলি যদি? হ্যাঁ কতকটা আমার মনের ভাবের রস পেল। তবে এই কথাটাই থাক – ছিন্নমন বা ছিন্নসত্তা।
সকাল দরজায় দাঁড়িয়ে
মন্থনময়ী মধ্যনিশা
বিষ শুষে নিল চোখের পাতা,
অমৃতলোভী সকাল রইল দরজায় দাঁড়িয়ে
শুধু আমি শুধু তুমি
শুধু আমিই নই
তুমিও তো অসহায়ের মত দাঁড়িয়েছো
আমার সামনে কতবার
আসতে দাও
ওরা আসুক
বারণ কোরো না
জানলার পর্দা সরিয়ে দাও
হাওয়া আসুক, রোদ আসুক
ফিরিয়ে দিও না
দরজাটা পুরো খুলে রাখো
কাদের যেন আসার কথা আজ!
তেমন কিছু না
তেমন কিছু না
তেমন কিছু না
মানে তেমন বড় কিছু না তো
মনের মধ্যে ঢুকলে বালাই
মনকে বেঁধে, চরকি কাটিয়ে
সন্ন্যাসী দেখো কি আনন্দে
সারাদিন তার পালাই পালাই
তাই বলছি, তেমন কিছু না
তেমন কিছু না তো
তেমন বড় কথা হলে-
বলা-কওয়া তবু যেত
প্রগতি
হিন্দু মহাসভা নাথুরাম গড্সের মন্দির প্রতিষ্ঠা করল। নাথুরাম গড্সে তাদের আদর্শ, পুজ্য। তার কারণ তিনি হিন্দুধর্মের মহত্ব প্রচার করেছিলেন বলে নয়, গান্ধীকে হত্যা করেছিলেন বলে। গান্ধীকে ও তার আদর্শকে কারোর অপছন্দ হতেই পারে, সভ্যতার ইতিহাসে গড্সে ও মহাত্মার অবদানের ফারাক বোঝার মত মানসিকতা বা ইচ্ছা অনেকের না-ই থাকতে পারে। কিন্তু পৌরাণিক পুরুষ রাম তথা কৃষ্ণ পূজ্য কি শুধু রাবণ তথা কংস নিধনের জন্য, না
ধাপ্পা
ইকিড়মিকিড়
কারোর আঙুলে ডাক নেই তোর?
আগডুম বাগডুম
খেলায় ডাকে না কেউ?
"উবু উবু আব্বুলিশ"
তুই একা একা ছাদে ঘুরিস?
কিত কিত কিত
তুই উঠান পাবি কই?
রক্তের শুধু না
রক্তের শুধু না,
দিন গড়াচ্ছে স্নায়বিক সম্পর্কে
ভীষণ ব্যক্তিগত
কিছু কবিতা ভীষণ ব্যক্তিগত
ক্ষতর উপর শিশিরপাতের মত
ওরা
একদিন আমারও একজন 'মা' ছিল
একদিন আমারও একজন 'মা' ছিল
আজ নেই
একদিন আমিও শান্ত সুখী ছিলাম
আজ নই
একদিন আমারও একজন 'মা' ছিল
আজ নেই
একদিন আমারও খেলে পেট ভরত
একদিন আমারও শুলে ঘুম আসত
একদিন আমারও জামা নতুন হত
আজ কই?
একদিন আমারও একজন 'মা' ছিল
আজ নেই
একদিন আমারও চোখ শুকনো থাকত
আজ কই?
মানুষ
সদ্যোজাত মানুষের পাশে
মানুষকেই দেখেছি প্রসন্ন মুখে
কোনো দেবতাকে নয়
মৃত মানুষকে কাঁধে নিয়ে
মানুষকেই দেখেছি সাশ্রুনয়নে
কোনো দেবতাকে নয়
অরণ্য দাবী করো
একটা গাছ কোনোদিন লাগালে না,
আজ গোটা অরণ্য দাবী করো
কি স্পর্ধা তোমার!
আম্বেদকরজী
ডিসেম্বরের 9 তারিখ, 1946, বি আর আম্বেদকরজী একটা বক্তব্য রাখেন আসন্ন গণতন্ত্রের আনুষ্ঠানিক সূচনার উপর। তা পড়তে পড়তে বেশ কিছু জায়গায় চমকে উঠতে হল। মনে হল প্রতিটা কথা কি সাংঘাতিক রকম প্রাসঙ্গিক আজও। অতবড় ভাষণটা তো আর দেওয়া যায় না, তার কিছু কিছু অংশ, যা আমাকে ভাবালো, তা তুলে দিলাম আম্বেদকরজীর ভাষাতেই।
যোঝাযুঝি
হাত ডুবিয়ে স্রোত ছুঁয়ে থাকি
মুঠো তো করি না,
তল পাওয়ার লোভে
যোঝাযুঝিও না
কেমন আছি
কে বলল আমি মিথ্যা বলতে পারি না
কেমন আছি, একবার জানতে চেয়ে তো দেখো!
~ গুলজার
কাকচক্ষু
সেদিন আমায় কে একজন জিজ্ঞাসা করল,
"আচ্ছা, এতদিনের সম্পর্কে আপনারা কি পেলেন?"
ভাবলাম কথাটা।
তাই তো, কি পেলাম?
না তো তোমায় নিয়ে বিদেশ গেছি
না তো একখানা কবিতার বইও তোমার নামে উৎসর্গ করেছি
না প্রাসাদ গড়েছি
না তো আমরা হীরে জহরতে ঢেকে গেছি
কখনও কখনও
কখনও কখনও
কাউকে কাউকে
ভালোবাসতে আত্মসম্মানে বাধে
খ্রীষ্টের বেধেছিল কিনা জানা নেই
তবে কিছু ভালোবাসায় সাড়া দিতে
সন্ন্যাসের বর্ম আলবাত লাগে
রামভরণ
১
---
রামভরণ তার পাঁচ বছরের বাচ্চাটাকে কোলে নিয়ে ফুটপাথের ওপর দাঁড়িয়ে আছে। সামনে মথুরা বিল। চাঁদ উঠেছে বেশ কিছুক্ষণ হল। একটা বড় কাঁসার থালার মত চাঁদ জল থেকে কয়েক হাত উঁচুতেই। জল তো নয়, যেন গামলা গামলা দুধ ফেলা। রামভরণের বাড়ী বিহারের কোন এক অখ্যাত গ্রামে। রামভরণ বহু বছর হল বাড়ি যায় না। ভাইয়ে ভাইয়ে জমি নিয়ে অশান্তি তার আর ভাল লাগে না।
চাকা চাই চাকা
এই যে চুপ করে ঘন্টাখানেক ধরে ট্রেনের সিটে চুপ করে বসে আছি, সে ট্রেনটা চলছে বলেই যে না! নইলে কখন অস্থির হয়ে এটা-সেটা করে নিজেকে ব্যতিব্যস্ত করে তুলতাম।
ওই যে, চোখ বন্ধ করে, ১০৮টা রুদ্রাক্ষ গেঁথে গেঁথে মালা বানিয়ে মানুষটা জপ করছে। ও একটা বসার সিট খুঁজছে। মনটাকে মন্ত্রের চাকায় চড়িয়ে দিয়ে, একটু জিরিয়ে নিচ্ছে। নইলে মনটার বায়নায় বায়নায় মানুষটার এক মুহূর্ত বসার জো আছে!
Faith is refrain
Faith is refrain, the supreme certain
Love is the guidance of cynosure -
the only absolute truth
Life is
absolute - to immerse in absolute
Ignorant hallucinates transitory against one
From one to two,
and two to four
hence the numbers emit to infinity
- infinity infuses to one
মর্দানা
রাস মন্থন
রাত কত প্রহর? জানা নেই কারো। গোপীরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে এখানে ওখানে বসে। বিমর্ষ। চিন্তিত। উদ্বিগ্ন। কৃষ্ণ কদমগাছের নীচে একাই বসেছিলেন। উঠে প্রধান গোপীর পাশে গিয়ে বসলেন।
ওগো ভালোবাসা
ওগো ভালোবাসা
কোনো এক মরমী পাখির
ডানা থেকে খসা পালক আমি
আমায় ঝড়েতে ঝড়েতে পাগল কোরো না
আশ্রয় দাও
গভীর রাতের আকাশ যেমন বুকে নেয় নিস্তব্ধতাকে
তোমায় ভালোবাসব বলে
তোমায় ভালোবাসতে হবে বলে
টাইমটেবিল দেখে রুদ্ধশ্বাসে সাইকেল চালিয়ে
ঘেমেনেয়ে স্টেশানে গেলাম
তোমায় ভালোবাসতে হবে বলে
একটা হাতলে জীবন বাজি রেখে
একটা পা ট্রেনের ভিতর
বাকি শরীরটা পোস্ট বাঁচিয়ে ঝুলে এলাম
এর বেশি চাই কি?
সময় তো ফ্রেম নয়
তুমিও ফটোগ্রাফ নও
আমিও দেওয়াল নই
বরং একসাথেই গড়াই
গড়াতে গড়াতে বদলাই
বদলাতে বদলাতে ছোঁয়াছুঁয়ি খেলি
ছোঁয়াছুঁয়ি খেলতে খেলতে লুকোচুরি
বিরক্তি
কিশোরবাবুর বয়েস পঞ্চান্ন। সুচাকুরে। নিজের বাড়ি। বাড়ি মধ্যমগ্রাম। স্ত্রী ঘরোয়া। সুশ্রী। ভক্তিপরায়ণা, স্বামী - ঈশ্বর দু'দিকেই। ছেলে আমেরিকায়, কর্মরত। মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে।