May 2015

আমি

-------

কে যেন বলে গেল-
ভাঙা-তালি জোড়া দিতে দিতে
কত বেলা হল খেয়াল আছে?

মুখ তুলে চাইলাম

কেউ কোত্থাও নেই

আবার শুনলাম-
বাইরে যা পাবে,
তা খণ্ডিত, ক্ষুদ্র, অসম্পূর্ণ।
খোঁজ ভিতরে,
পাবে তাঁকে
যিনি অখণ্ড, মহৎ, পূর্ণ।

অবশ হল শরীর মন
ভাঙা টুকরোগুলো পাড়ে রেখে
নদীতে ডুব দিলাম।

অকারণে সে লজ্জা পাচ্ছে আজ থেকে থেকেই
ফর্সা কানদুটো লাল টকটকে হয়ে উঠছে গরম হয়ে
রান্না করতে করতে ঠান্ডা জল কানে ঠেকাচ্ছে, 
                                ঠোঁটের কোণে হাসি

চারিদিকে এতই যদি-
    নজরদারি
          খবরদারি
                হুঁশিয়ারি

একতারাটার কি যে করি!
    কি যে করি!

জল ভরেছ চোখে?
বেশ হয়েছে।
কাঁদিয়েছিলে আমায় এমন
মুখ বুজে সব সয়ে ছিলুম
রক্ত রাঙা চোখে।

ব্যাথা ভরেছ মনে?
বেশ হয়েছে।
দাপিয়ে ছিলে বুকের ভিতর
ছটফটিয়ে মরে ছিলাম
মনকে নিয়ে মনে।

বলবে বুঝি কিছু?
শুনব না যাও
(যদিও জানি শুনতে হবেই)।
সেদিন, বলব বলে
সুর সেধেছি
গান বেঁধেছি
কই শুনেছ?
পড়ছে মনে কিছু?

অনেক রাত।
সারা চুল আলুলায়িত করে আমার সামনে এসে দাঁড়াল, নিশীথিনী।

কিছু সরল চোখ মিথ্যা বলতে পারে
কিছু সরল হাসি ছুরি লুকাতে পারে

কিছু মিথ্যা সত্য বলতে পারে
কিছু হাসি কান্না আনতে পারে

কিছু যন্ত্রণার বীজ অঙ্কুরিত হয়েছে
কিছু বীজ সুপ্ত এখনো
                সময় হয় নি যে।
কিছু গাছে কুঁড়ি ধরেছে
ফুলও ফুটেছে কটায়।
সুখ?
ওই যে
এক যন্ত্রণা ভুলে আরেক যন্ত্রণার পথে -
মধ্যখানের ব্যবধান।
এতেই নিজেকে ভুলিয়ে নাও তো ভালো

যে ভালোবাসায় শাসন নেই, শুধুই প্রশ্রয় আছে, সে ভালোবাসা খাঁটি না। সুদিনে তাতে লাগাম ছাড়া আমোদ চলতে পারে কিন্তু দুর্দিনে তাতে নির্ভর করা যায় না।
 
তাই প্রার্থনা করলেই যে মিলবে তা না। তাঁর প্রেম ভেজাল না। তাতে স্নেহের সাথে শাসনও আছে। প্রথমটি দু'হাত পেতে নেওয়ার আগে, দ্বিতীয়টির কাছে মাথা নীচু করতে শিখতে হয়। তখনই সে স্নেহ ধারণের অধিকার জন্মায়।

সন্ধ্যাকাশের দিকে তাকালাম
সব তারা যে যার জায়গায় ফুটে

মাটিতে চোখ নামালাম,
গাছগুলো যে যার জায়গায় দাঁড়িয়ে
পাতাগুলো সাজানো ডালে ডালে

পাখিগুলো নীড়ে ঘুমন্ত,
পোকারা গর্তে।

যে যার স্থানে
      নিজের মত, নিশ্চিত।

আমার স্থান কোথায়?
কোন ঘরে, কার কাছে?

হাতের থেকে পিছলে পিছলে যাচ্ছে সময়
খাদের গা ঘেঁষে ঘেঁষে হেঁচড়ে হেঁচড়ে উঠছি-
উঠছি কি?
জানি না তো।
এগোচ্ছি কোনো দিক না জেনেই,
কম্পাস জবাব দিয়েছে,
বাঁ-ডান গেছে গুলিয়ে।
চিন্তার ভাগাড়ে জমে আছে ফেলে আসা সময়ের জীবাশ্ম
মাঝে মাঝে খুঁড়ে খুঁড়ে তুলছি তাদের
কঙ্কালময় শরীরে কোথায় প্রাণের স্পন্দন?
অন্ধকার! অন্ধকার!
বন্ধু শত্রু মুখোশে একাকার!

আমি জেগে আছি
তুমি জেগে?
যদি জেগে থাকো তবে
কিছুটা অন্ধকার ঠেলে সরিয়ে
                     পাশে এসো।
অনেক যুগ ধরে কিছু কথা বলা হয় নি।
বাকলের মত মনের গায়ে লেগে আছে
কিছু কথার আবরণ।
ওগুলো মিথ্যা কথা।
তুমি সত্যি কথাটা খুঁজে বার করো

ভীষণ ধূলো ঝড় উঠেছে
কানে নাকে চোখে মুখে ঢুকছে ধূলো
দেখতে দেখতে দুটো হাতের মুঠো 
                     ভরে উঠলো ধূলোয়
বারে বারে ফেললেও
আবার ধূলো উঠছে মুঠো ভরে
তবু হাত পাতছি অভ্যাসের বশে।
আমি ধূলো চাই না
কিছু পেতে চাই

আমি বুঝি।
তবু ভুলি।

আমার বোঝা আর ভোলার মাঝে
তুমি নীরব,
জানা-অজানার পারে
তোমার স্থির দৃষ্টিপাত।

এ আমার একান্ত বিশ্বাস
আমার অন্তিম সম্বল।

তুমি
আমার উৎস
আমার অববাহিকা
আমার মোহনা।

নুনের কৌটোয় জল
চিনির কৌটোয় পিঁপড়ে
চালের কৌটোয় পোকা

পাশাপাশি বসে গল্পাচ্ছে।

নুন বলল, কি জল!
চিনি বলল, কি পিঁপড়ে!
চাল বলল, কি পোকা!

নুন চিনিকে বলল, চালের পোকায় কি গন্ধ!
চাল নুনকে বলল, চিনির পিঁপড়েরা কি চেঁচায়!
চিনি চালকে বলল, নুনের জল কি নোনতা!

নুন বলল, তোর পোকা!
চিনি বলল, তোর জল!
চাল বলল, তোর পিঁপড়ে!

আমি নীলাকাশ ভালোবাসি। সবুজ মাঠ ভালবাসি। দিগন্তে মনকে বিলীন করতে ভালবাসি।

এরকম আরো অনেক কিছু ভালোবাসি। কিন্তু নির্ভর করি কি এগুলোর ওপর? না। নির্ভর করি মাটির উপর, যে নীরবে আজন্ম আমার ভার বহন করে চলেছে। এমনকি তাতে কম্পন ধরলেও হুমড়ি খেয়ে পড়তে হয় তারই বুকের ওপর। আবার ঘরও বাঁধতে হয় তারই বুকে।

আমার জন্য কি আনবে?
পারো যদি এনো-
এক মুঠো সময়।

সে হোক না গোধূলির মত রাঙা
কিম্বা নদীর কলকল শব্দের মত বিহ্বল
ভোরের মত স্নিগ্ধ
নতুবা তোমার চোখের মত চঞ্চল।

কি হলে যে ভালো হত, বুঝতে পারি না-

দমকা বাতাসে প্রদীপটা নিভল
আলোর বাধা সরিয়ে, সামনে কে?
তুমি?

আলো জ্বালব না আর
এসো অন্ধকারে, সবার আড়ালে।
ভেবেছিলাম, সব ফুরিয়েছে বুঝি
গোপন পথে আসো যদি চিনব কি করে?
জানতাম না-
আমার কান্নাগুলো এখনো আছে
              তোমার গন্ধে মিশে।

ফাঁকি দিয়েছি। পড়াশোনা, বাবা-মা, ভাই-বোন, আত্মীয়স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী, বন্ধু-বান্ধব ইত্যাদির লম্বা লাইন। এ সবেতেই ফাঁকি দিয়েছি কম বেশি। সময়, দায়িত্ব, কর্তব্যতেও ফাঁকি আছে।

তাই আমায় কেউ ফাঁকি দিলে রাগ হয় না, হাসি পায়। মনে মনে বলি, এ কৌশল আমিও জানি।

সারা বিশ্বে একজনই আছে
যার বুকে মাথা রাখলে ঘুম আসে
                  সে তুমি
সারাদিন ঘুরে ঘুরে, ক্লান্ত হয়ে
যার জন্য ফিরে কলিং বেলের সুইচে হাত রাখি
                   সে তুমি

প্রত্যক্ষ চাপ তো জীবনে আছেই। আরেকটা আছে পরোক্ষ চাপ। যখনই আমি কারোর নিন্দা করছি, বা সমালোচনা করছি, তখনই আমার মনে একটা ক্ষোভ, বিদ্বেষ, বিরূপতা তৈরী হচ্ছে। সেটা আমার মনের পক্ষে অতিরিক্ত চাপ।
তার চেয়ে থাক। 'আমি কারোর স্বভাব শুধরাতে পারি না' এই সহজ সিদ্ধান্তটা মেনে নিলেই হল।

আমি ঈশ্বরকে বলব
আমায় স্বর্গে না রাখতে

বলব, তোমার চোখের পাতাগুলোর
একটা পাতায় রাখতে

আমার ধরা ছোঁয়ার জগতে যখন তোমায় চাই, তখন তোমার সাথে সাথে নিজেকেও বেঁধে ফেলি সীমায়। সে সীমা নিরাপদ বটে, তবে সে সীমাতে গর্বেরও কিছু নেই। আমার মাথার ওপর যে নীলাকাশ, সে তো আমার প্রয়োজনের বস্তু না, সে আমার মুক্তি! সারাদিন সংসারে জোয়াল বাধা ঘূর্ণিতে, একটু ফাঁক পেলেই চোখ যায় ঐ দূরের নীলাকাশটায়। তখন সে দূর কই?

পথ হারালাম।
ভাবলাম, চলতে হবে বাকিটা পথ একা।

হারানো পথ
কাঁধে রাখল হাত
বলল-
আমি চলব পাশে পাশে
হবে কি আর একা?

সেই কবে থেকে কিছু জিনিস জোগাড় করতে শুরু করেছিলাম। কয়েকটা জিনিস বানাতেই হবে এমন সাধ ছিল। একটা অট্টালিকা, একটা ওই উঁচুতে - যেখানে দেবা-দেবীরা থাকেন, সেখানে ওঠার সিঁড়ি, আর বিশাল একটা সেতু।

কারোর না আসার অজুহাত
কারোর যে কোনো ভাবে আসার ছুতো
দুইই দেখেছি

কারোর চোখে পাশে বসেও অস্থিরতা গোপনের চেষ্টা
কারোর গলায় দূরে থেকে কাছে না থাকার যন্ত্রণা লুকাবার অভিনয়
দুইই জেনেছি

কারোর মনে পড়েও ভুলে থাকার চেষ্টা
কারোর ভুলে গিয়েও মনে পড়ানোর অভ্যাস
দুইই বুঝেছি

- দাদা, কটা বাজে?
- তিনটে দশ।

অনেকক্ষণ ছোঁয়াছুঁয়ি খেলার পর বুঝলাম
ও আমায় ধরতে চাইছিল না,
আমায় দৌড় করাতে চাইছিল।
না হলে খেলাটা থেমে যেত বহুক্ষণ আগেই।
ও, না ধরা দিল
না ধরে রাখল

এতগুলো বছর শুধু খেলার ঘুঁটি হয়ে কাটলো 

সবচাইতে বড় আড়াল নিজের সাথে নিজের আড়াল। যে করেই হোক নিজের মুখোমুখি হতেই হবে। যা কিছু পাপ, তাকে মাথা নীচু করে স্বীকার করে, জোড় হাত করে নিজের অন্তর্যামীর সামনে হাঁটু গেড়ে বসতে হবে, ক্ষমা চাইতে হবে।
 

কেন বিশ্বাস করব?
তোমার ছায়া আর তুমি ভিন্ন রাস্তায় হাঁটো।
পাতকুয়োতে বালতি ফেলে
বালতি তোলার কাঁটা খোঁজো নিজেই।
তোমার কথাগুলো ঝাঁঝরা ধরা এত-
'মানে' গুলো সব গলে গলে পড়ছে, বোঝো?
তোমার পায়ের শব্দে বেড়াল চমকে ওঠে
তোমার আশ্বাসে আমার নিউরোনগুলো
হাই তোলে আড়ামোড়া ভেঙে

জিভকে একটু বিরাম দাও
হৃদয়েরও কিছু বলার থাকতে পারে।

সব জানাশোনা ছেড়ে এগিয়ে যাও
অজানাতেও কেউ আপন থাকতে পারে।

হঠাৎ হঠাৎ বুক ধড়ফড়?
মাঝে মাঝেই কান্না, অকারণ?
আচমকা উদ্বেগে বিনিদ্র রজনী কাটে, একা, সবার মাঝেও?
হাসির মাঝে চোখের জল,
চলকে এসে গালে পড়ে?
মুছে নাও, সবার অলক্ষ্যে।

ভাবছ-
'আমি খুব দুর্বল বলেই আমার এমন হয়!'
তা না গো মোটেই,
দুর্বল নও-
বরং, তুমি ভয়ঙ্করভাবে বেঁচে আছো
ভীষণভাবে বেঁচে থাকতে চাইছ।

রাতে ভেবে রাখা ছিল,
আগামীকালকে কোন লাইনটা দিয়ে করবে শুরু?
মাথার মধ্যে ছিল,
কিছু না- বলা, খুব যন্ত্রণায় পোড় খাওয়া কিছু মুখ?
অনেক প্রশ্ন ভিড় করেছিল মাথার অলিতে গলিতে?
সমাজের সাথে হাত হাত রাখতে আরেকটা সাদা কাগজ ছিল -
কলমের দিকে চেয়ে?

জানি এর উত্তর পাওয়া সম্ভব নয়,
জানি আমাদের আসা যাওয়ার ধরা বাঁধা ছকে তো আর জীবন বাঁধা নয়!

কিছু মৃত্যু মেনে নিতে বড় কষ্ট হয়
যখন চারিদিকে আজ ভীষণ ভীষণ
দুঃসময়

(লেখিকা সুচিত্রা ভট্টাচার্যের আকস্মিক মৃত্যুতে)

প্রভু,
প্রদীপটা না নিভুক,
আমার হাতের আড়াল পাশে
তোমার হাতের পরশ রাখো।
ভয়ে কেঁপে কেঁপে ওঠা শিখা-
তাকে করূণা পদ্মে ঢাকো।

এমন শকতি নেই প্রভু নেই
যা কিছু সব আনি
অনেক প্রণামে স্বার্থ মিশেছে
প্রণত হওয়াকে দিয়েছে গ্লানি।

আশ্বাস দাও, ফিরাবে না আর
যত দোষ ত্রুটি থাক
করূণাধারার প্লাবনে হে প্রভু
চিত্তশুদ্ধি পাক।

যতবার ভাবি পৌঁছেছি এবার,
নতুন একটা বাঁক কাঁধে হাত রাখে।
সে পুরোনো হতে হতে
আবার মনে হয়
এই এই এই ছিল আমার পথ!
পেয়েছি অবশেষে!
ভাবতে ভাবতে হঠাৎ দেখি সে উধাও।

চোখের সামনে আবার নতুন বাঁক।

(ছবিঃ সুমন দাস)

অনেকটা পথ যেতে বাকি
তুমিও জানো
তবু কেন প্রতি পায়ের হিসাব রাখো

অনেক আরো সইতে বাকি
তুমিও জানো
তবু কেন সব ক্ষতকে জাগিয়ে রাখো

অনেক কিছু দিতে বাকি
তুমিও জানো
তবুও কেন কুড়িয়ে নুড়ি বেলা কাটো

অনেক কিছু ভাঙার বাকি
তুমিও জানো
তবুও কেন বালির ঘরে আগল ঘেরো

চোখ না তো
ভলক্যানো

না ভলক্যানো না
শানানো ধারালো ছুরি যেন

না ছুরি না না
গিলেটিনের পাত যেন

না, তাও না, তাও না
গোলাপের কাঁটা যেন

কাঁটা বলব না গোলাপ?
তুমি বলবে প্রলাপ!

প্রলাপ না, প্রলাপ না - নেশা
চাবি হারিয়ে, ঘর হারিয়ে
এখন পাগল পাগল দশা

আনন্দ আর সুখের পার্থক্যটা হল খোলা হাওয়া আর পাখার হাওয়ার মত।
 
পাখার হাওয়া পেতে আমার কিছু শর্ত আছে। একটা ঘর চাই, পাখা চাই, তার চাই, সুইচ চাই, সর্বোপরি বিদ্যুৎ চাই। তবে গিয়ে পাখার হাওয়া।
 
শুধু তাই না। পাখার নীচে যদি কেউ বসে, তাকে তাড়াবার কৌশলও ভাবতে হয়। সুখ এমন ধারাই। অন্যকে তাড়াতে চায়। না হলে তার নিজের ভাগে কম পড়ে।
 

তুমি চেয়েছিলে-

তাই অসীম থেকে হলাম সসীম
নিরাকার থেকে হলাম সাকার

তুমি ফিরে গেলে-

সসীম থেকে হলে অসীম
সাকার থেকে হলে নিরাকার

তোমার আর আমার মাঝে এখন
এক সমুদ্র অনন্ত

তুমি আসলে
চোখের শান্তি
আমার কি?

তুমি বললে
কানের শান্তি
আমার কি?

তুমি ছুঁলে
দেহের শান্তি
আমার কি?

তোমার চুমুতে
ঠোঁটের শান্তি
আমার কি?

তুমি চলে গেলে
সব চলে যায়
আমার কি?
না আমারই যায়!

ওগুলো কি ফুল?
প্লাস্টিকের?
ফেলে দাও
বরং আনো কিছু বুনোফুল
তবু তা প্রকৃতির হোক

ওটা কিসের কাগজ?
গানের খাতা?
সরিয়ে দাও
না হয় দু'লাইনই গাও
তবু তা প্রাণের হোক

এ কিসের মিছিল?
প্রভাতফেরী?
বন্ধো করো
না হয় নিভৃতে বসো তাঁর কাছে
একান্তে একটা প্রণামই জানাও
তবু তা আন্তরিক হোক

আজ কিছু কথা মায়ের ব্যাপারে বলতে ইচ্ছা করছে। খুব অদ্ভুত মানুষ। উড়িষ্যার কালাহান্ডির খড়িয়ার নামের এক গ্রামে মায়ের জন্ম। দাদু ছিলেন সরকারী হাসপাতালের ডাক্তার। খুব নামডাক ছিল তাঁর। দাদুরা ছিলেন প্রবাসী বাঙালী। খুব রোগীবৎসল চিকিৎসক। গ্রামের অচ্ছুত, অশিক্ষিত, সব স্তরের মানুষের খুব কাছের লোক ডাক্তার শিবপদ চ্যাটার্জী।

আমার দিকে তাকাও
দেখো আমি কালকের 'আমি' না।
আমিও আজ নতুন সকাল দেখেছি
তোমারই মত।

তোমার কালকের 'তুমি'
আমার কালকের 'আমি'
থাক না কালের গর্তে মিলিয়ে
জন্মের মত।

আমার হাতে হাত রাখো
দেখো আমার শরীরে আজ নতুন উত্তাপ
প্রেমকে কিছু শর্ত থেকে দিয়েছি মুক্তি
চিরকালের মত।

আমি কি খুব জোরের সাথে বলতে পেরেছি
"আমার এসব চাই না"।
পারিনি বোধহয়
তাই শ্যাওলাগুলো এত দুর্বল হলেও
আমায় পেয়ে বসেছে
পায়ের নখগুলো বেড়ে গিয়ে শিকড় হয়ে আটকে
আমি নীলাকাশে তাকিয়ে থাকতে থাকতে ঘুমিয়ে পড়ি-
কিছুটা ক্লান্তিতে, কিছুটা অবিশ্বাসে
কখন শঙখচিল উড়ে গেছে খেয়াল করিনি
আমার মুখের উপর ওর ছায়া আঁকা হয়ে আছে জীবাশ্মের মত।

তোমায় আমি ভালোবাসি?
কক্ষনো না!
অমন খুদে চোখ
অমন বোঁচা নাক
অমন খ্যানা গলা
অমন ছ্যাদা কান
ধুর ধুর ধুর!

তবু কেন রোজই আসি?
না হলে মূর্খ বোঝাব কি করে
তোমায় আমি কতটা বাজেবাসি!

কেন এত রাগ?
তা হবে না!
এমন পোড়া রূপ নিয়ে
এমন ঢঙের সাজ!

সবাই বলল মনটাকে শক্ত করো। উনুনে আঁচ দিয়ে, তাতে ঘুঁটে, কাঠ কয়লা সব ঢাললাম। আঁচ গনগন করে উঠল। মনকে চড়ালাম। শক্ত হল। শক্ত হল, শুধু বাইরেটাই। ভিতরে একটুও আঁচ ঢুকল না। 

বাইরেটা এত শক্ত এখন, যে বৃষ্টির ছিটে বাইরে আসে না, কিছু ভেঙে পড়ার আওয়াজ কান পাতলেও বাইরে থেকে শোনা যায় না, ঝড়ের দাপটও শুধু ভিতরেই আছাড় খেয়ে মরে। 

মন কি খড়ের গাদা!
কেউ জ্বলন্ত কিছু ফেলল অমনি ধরে গেল?

মন কি কাদার তাল!
কেউ একটু জল ছুঁড়ল অমনি গলে গেল?

মন কি ঘরের ডাস্টবিন!
যেই খুলেছ, অমনি গন্ধে টেকা দায় হল?

মন কি জং ছুরি!
যেই না ছোঁয়া লাগল, টিটেনাশ নিতে হল?

আরে তা নয়
আরে তা নয়

মন খেয়ালের হাওয়া
যাই আসুক
তাকেই সে ভাই, ভাসিয়ে নিয়ে চলল।

দীর্ঘশ্বাসগুলো ছাদের কার্নিশে
জানলার পাশে, উঠোনে, আমগাছে বসে।
আমি যতবার ওদের দৌড়ে গিয়ে তাড়াই-
হুশ..যা... যা... হুশ...
ততবার ওরা উড়ে গিয়ে, আবার ফিরে আসে,
আবার বসে আমার ঘরের
আনাচে কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে।
কি চায় ওরা?
ওদের হাতে করে খাইয়েছি কি কবে?
জানি না।
তবে কেন ওরা আমার চোখের দিকে

আমার কিছু একটা আছে তোমার কাছে।
কি বলো তো?
আমার সেই হারিয়ে যাওয়া জামার বোতাম?
নাকি পকেট থেকে পড়ে যাওয়া নীল রুমাল?
না সেই কালো কালির বল পেনটার ঢাকনা?

এগুলো নয়? 

তোকে চোখে দেখার আগে
হতাম যদি অন্ধ
কিম্বা উদাস বৈরাগী?

এমন দশা হত কি ছাই?

এখন চোখ পুড়েছে, বুক পুড়েছে
কোন নদীতে নাও ভাসি?

নাও ভাসি, নাও ভাসি
তুই যদি যাস-
         যাই বৃন্দাবন
না হলে হই
         কাশীবাসি।

যেখানে খুব দুঃখ
সেখানে তোমায় বললাম, এসো।

যেখানে খুব অন্ধকার
সেখানে তোমায় বললাম, যাবে?

যেখানে খুব কান্না
সেখানে তোমায় বললাম, বোসো।

তুমি একবারও 'না' বললে না।

আমার দুঃখ- অন্ধকার- কান্না
হল উদ্ভাসিত-
যেখানে আলো
যেখানে ক্ষমা
যেখানে মৈত্রী

(ছবিঃ সুমন দাস) 

কে আমার পরম বন্ধু? যিনি আমার সব সমস্যার সমাধান করে দেন? না। তা হলে তিনি আমার পরম বন্ধু নন, তিনি পঙ্গুর লাঠি।
      তবে? তিনিই আমার পরম বন্ধু যিনি সমস্যায়, বিপদে আমার বুদ্ধিটাকে স্থির পথে এনে দেন, চিন্তাটাকে আরো স্বচ্ছ করে দেন। সমস্যার সমাধান না, সমস্যাটাকেই আরো স্পষ্টভাবে বুঝতে সাহায্য করেন। ফলস্বরূপ সমস্যার সমাধানের পথ আমি আপনিই পেয়ে যাই।

সঙ্কটজনক অবস্থা নিয়ে অনেকে অনেক কিছু লিখেছেন। ভবিষ্যতে লিখবেনও। আমি ওসব কিছু বলতে চাই না। আমি প্রতিদিনের তুচ্ছ (?) কিছু সঙ্কটজনক অবস্থা নিয়ে কিছু বলতে চাই।
(তবে খেতে খেতে না পড়াই ভাল। আর যাঁরা একটুতেই, "ইস! ম্যাগো!" করে ওঠেন, তাঁরা তো একদমই পড়বেন না।

১) হৃদয়ের কথা বলিতে ব্যাকুল-

আমার স্বর্গ
আমার নরক

আমার মুক্তি
আমার বাঁধন

আমার বিশ্বাস
আমার সংশয়

আমার প্রেম
আমার অপ্রেম

আমার নীতি
আমার আবেগ

আমার আশা
আমার অবসাদ

আমার সুখ
আমার দুখ

আমার যাওয়া
আমার আসা

সব তোমরা-
আমার চারপাশে যারা।
তোমাদের ছায়ার ছায়া
আমার অস্তিত্ব, আমার কায়া।

উদভ্রান্তের মত অনেকটা রাস্তা ছোটা হয়ে গেছে
ততটা কাছাকাছি পৌঁছানো যায়নি যদিও
চোরাবালিতে বেশ খানিকটা ডুবে আটকে।
আকাশটা পুরোপুরি বিদায় জানাতে না পেরে মাথার উপর থমকে দাঁড়িয়ে আছে।

কেউ কেউ আমায়
ডানদিকের গলিতে আসতে বলে
বাঁ দিকের গলিতে সরে যায়।
আমি দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে
এদিক ওদিক তাকাতে তাকাতে
তাকে বাঁদিকের গলিতে 
পাই, আচমকাই।
লজ্জায় চোখ নামাই,
কি জানি সে ইচ্ছা করে ভুল বলেছিল
নাকি আমি ভুল করে ভুল শুনেছিলাম?

এমনটা অনেকবার হয়েছে। কোনো একজনকে খুব খারাপ ভেবে তাকে আমার বাগানে খুব চোখে চোখে রেখেছি। যেই না চোখের আড়াল করেছি, অমনি সে হয়তো গাছের একটা ডাল মট করে ভেঙে দিয়ে পালাল। আমি ভেবেছিলাম সে হয়তো সুযোগ পেলেই সব গাছগুলো উপড়ে ফেলবে বা বাগানে গরু ঢুকিয়ে সব নষ্ট করবে। তা না, শুধু একটা ডাল!