মল্লিকা আর মল্লিকারা
চারটে দেওয়ালের মধ্যে যারা বেঁচে ছিল, তাদের মধ্যে সামাজিক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ দুজন, বিপিন আর মল্লিকা। আর কিছু টিকটিকি, আরশোলা, মাকড়সা, পিঁপড়ে, এরা এসেছে গেছে, নিজের আয়ু সবাই পূর্ণ করে যেতে পেরেছে তা ঠিক নয়, তবে কেউ কেউ পেরেছে। বিপিন ছাদ, বাথরুম, শোয়ার ঘর, বসার ঘর, পুজোর ঘর ছেড়েছে অনেক দিন হল। এখন একটা ফ্রেমে শীতগ্রীষ্মবর্ষা এক মুখভঙ্গি নিয়ে তাকিয়ে থাকে। সে মুখটা দেখে
আমার ভ্যাক্সিনটা?
সদানন্দ আর সন্ধ্যা লাইনে দাঁড়িয়ে। সন্ধ্যা সদানন্দের পিছনে দাঁড়িয়ে। ছিয়াত্তর বয়সের মানুষটার শরীর টাল খেয়ে যায় যখন তখন। লাঠিটাও শক্ত করে ধরে রাখতে পারে না। শিরা বেরোনো হাতটা থরথর করে কাঁপে। সন্ধ্যা অতটা অশক্ত নয়। এখনও চারটে বাড়ি কাজ করে সংসার চালায়। তার বয়েস তার মনে হয় আটান্ন হবে। কিন্তু আধার কার্ডে লেখা তেষট্টি। কি করে হয় কে জানে!
তুমি তো
তুমি তো আগন্তুক নও। তবু দেখো, আমি দরজা জানলা এঁটে এমনভাবে রয়েছি যেন তুমি ফিরে যাবে আমায় না পেয়ে খোলা দরজায়।
তুমি তো অনাহূত নও। তবু দেখো, আমি তোমার থাকার আয়োজন না করে এমন নির্বোধ সেজে আছি, যেন তুমি ফিরে যাবে বিনা আপ্যায়নে।
এই কি ঈশ্বর
নিজেকে ডিঙিয়ে বাইরে এসে লোকটা ভয় পেল? যে বাইরে এসে দাঁড়ালো আর যে ভিতরে ছিল - এরা কি দুটো আলাদা মানুষ? পাঁচিলটা কই? যেটা ডিঙিয়ে সে বাইরে এলো।
আমাকেও সঙ্গে নিও
তুমি ছাড়া
সব তছনছ করে যাবে
আর কে বলো?
এসো
আমার আবার সব গোছানো হয়ে গেছে,
নতুন রকম করে
এবার আসবে যখন
পারলে সব
পুড়িয়ে দিয়ে যেও
কর্তব্য
"কর্তব্যটুকু করে যাই, তারপর যা হবার ঈশ্বরই জানবেন।"
নার্সকে কথাটা শেষ বলেছিল। এই বাক্যটা বলে আসছে একত্রিশ বছর বয়েস থেকে। আজ এই চুয়াত্তর বছর দশমাস তিনদিনের দিন শেষবার উচ্চারণ করল। কথাটা বলে শুলো। আর জাগল না।
আদিম অনন্ত আকাশ
অতিমারীর প্লাবনে
সদ্য মা হারা
বাচ্চা মেয়েটা
ঘরের সব আলোগুলো জ্বেলে
দাঁড়িয়ে ঝুলবারান্দায়
একা
অনুভব না জন্মালে
মানুষ মানেই ভয়। 'সাহস' ঠিক ভয়ের বিপরীত শব্দ নয়। সাহস হল ভয়কে প্রতিরোধ করার শব্দ। বা আরো সাদা ভাষায় ভয়ের সঙ্গে যোঝার শব্দ। 'অভয়' শব্দটা ভয়হীনতা, সে সবার আসে না। সক্রেটিস, ব্রুনো, চৈতন্য, খ্রীষ্ট, স্পিনোজা, গ্যালিলিও প্রমুখ যেসব বিখ্যাত মানুষদের কথা ইতিহাসে শোনা যায়, যারা নিজেদের জীবন বিপন্ন করে হলেও একটা আদর্শকে প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছিলেন। তাদের নিয়ে কথা নয়। ভয় হয় তো তা
স্বেচ্ছা আত্ম-অবমাননা
মানুষ দুঃখ থেকে ত্রাণ চায়। সে কোন দুঃখ? খিদের দুঃখ, পরাধীনতার দুঃখ, অপমানের দুঃখ।
বাড়াবাড়ি
মানুষটা চাইত তার ঘরের দেওয়াল জুড়ে থাকবে হালকা সবুজ একটা রঙ। ঘরের চারদিকে দুটো জানলা থাকবে, গুমোট গন্ধ হবে না ঘরে। সকাল-সন্ধ্যে হালকা একটা ধুপের গন্ধ ঈশ্বরের চরণের মত ধীরে ধীরে পা ফেলে তার এ ঘর সে ঘর ঘুরে যাবে। তার বাথরুমে থাকবে হালকা সাবানের গন্ধ, মেঝে থাকবে শুকনো। খাবার আয়োজন হবে না এলাহি। থাকবে স্বাদ, থাকবে মাত্রামত আয়োজন। খেতে খেতে শব্দ করবে না,