Skip to main content


মেঘলা আকাশ। উদ্বেল দীঘির কালো জল। বৃষ্টি ধোয়া গাছের পাতার থেকে এক বিন্দু জল পড়ল দীঘির বুকে - টুপ্। মিলিয়ে গেল। জলের বুকে মেঘের ছায়া।
পাড়ে বসে যে মেয়েটা, সে এ পাড়ায় সদ্য বিয়ে হয়ে এসেছে। এই দুপুরে সে একা বসে ঘাটের সিঁড়িতে। কেউ নেই চারধারে। ফাঁকা জনপথ। ওর কি মন খারাপ? নাকি নতুন সব কিছুর সাথে মানিয়ে নেওয়া লড়াইয়ের ফাঁকে একটু অবকাশ।
চুলটা খোলা। মেঘলা আকাশের সাথে মানিয়েছে ভাল। বাদল বাতাস একটু দ্বিধা নিয়েই সেই চুলের গুচ্ছ শূন্যে উড়িয়ে নিয়ে যেতে চাইছে। মেয়েটা নিরুত্তাপ। পুকুরের জলের দিকে তাকিয়ে কি একটা ভাবছে। তার শ্যামলা শীর্ণ গায়ে জড়ানো লাল সবুজ লতাপাতা আঁকা শাড়িটায় যেন কিসের যেন এক মায়া। শাড়িটাও শরীরটাকে যেন নতুন করে চিনছে। সারা শরীরে অচেনা গন্ধ। অচেনা আবেশ। মেয়েটার বর জোগাড়ের কাজ করে।
মেয়েটা উঠে দাঁড়াল। একমাথা চুল ছড়িয়ে পড়ল সারাটা পিঠ ব্যেপে। ঝোড়ো বাতাস সে চুলের নদী এলোমেলো করতে এলো দ্বিগুণ বেগে। মেয়েটা আঁচলটা কোমরে জড়িয়ে নামল দীঘির জলে। ছলাৎ করে উঠল দীঘির জল তার পায়ের আঘাতে। মেয়েটা মৃদু হাসল। নিজের ছায়া দেখল জলের মধ্যে। কাঁপা কাঁপা জলে তার অস্থির ছায়া। সে এক আঁজলা জল তুলে মুখ ধুলো। নিজেকে আদর করার মত। সিঁথির সিঁদুরের রঙ লাগল হাতে। দীঘির কালো জলে হাত ডোবাল। ভেজা সিঁদুর মিশল কালো জলে। রেখা করে ভেসে যেতে লাগল, সে অস্ফুটে বলল, শয়তান,পাজি।
ক্রমশ জলের গভীরে নামতে লাগল। জল ছুঁলো তার হাঁটু, উরু, কোমর, নাভি, বুক। সে ডুবতে ডুবতে বলল - অসভ্য। তার বুকের শ্বাস হয়েছে দ্বিগুণ। শ্বাস নিতে যেন কষ্ট হচ্ছে। আরো ডুবল। গলা জলে এসে দাঁড়াল। দু'হাত দুপাশে বিছিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে বলল, নাও। কয়েকটা চুল তার মুখের ওপর হাওয়ার সাথে ছোঁয়াছুঁয়ি খেলে গেল। তার চোখ বন্ধ। ঠোঁট দুটোতে মৃদু কম্পন যেন। এত ঠান্ডা জলেও শরীরে যেন বিষের আগুন-স্রোত। জলের মধ্যে মাথা ডোবাল। মনে মনে বলল - এলাম।
তার স্বামীর রোগটা বলেনি কেউ আগে। সে নপুংসক। সে বাড়ি ছেড়েছে বিয়ের পরদিনই। আজ মাস তিন চার হল। পাড়ার লোক জানে সে মুম্বাই গেছে, ফ্ল্যাটের কাজে লেবার হয়ে।
মেয়েটা মাথা তুলল জল থেকে। সাইকেলের বেলের আওয়াজ। এসে গেছে। তার বিয়ের দিনে গান চালাচ্ছিল। লাল রঙের টিশার্ট আর সবুজ রঙের জিন্স পরা ছিল। সেদিন খেয়াল করেনি। এখন খেয়াল করে। ওর ঘাড়ের কাছে ভোজালির দাগ। কোমরের নীচে উল্কি কাটা নক্সা। ওর পিঠের দিকে তিনটে আঁচিল। ওর গায়ে পুরোনো বটগাছের দুপুরবেলা রোদ পোড়া গন্ধ। ওর ঘামের গন্ধ, বানের জলে ভেসে আসা কচুরিপানার মত।
মেয়েটা জল ছেড়ে পাড়ের দিকে উঠল। মেঘ ঘনিয়ে ঝড় উঠল তুমুল। মেয়েটার চোখে নাকে ঢুকল ধুলো। সে হাত বাড়াল ভয়ে। হাতে ঠেকল শক্ত একটা হাত। সাইকেলটা পড়ল ধড়াস করে মাটিতে। বাজের আওয়াজে সে আওয়াজ গেল মিলিয়ে। মেঘ চারদিক কালো করে এল। অসময়ে সন্ধ্যে নামল আঁধার করে।