প্রণাম
অনেকদিন প্রণাম করিনি
না নীচু হয়ে হয়ে কোমরটা এমন শক্ত হয়েছে -
কার সাধ্যি তাকে নীচু করে!
মাথাটা ঘাড়ের উপর সোজা রাখতে রাখতে
ভুলেই গেছি
কিছু জায়গায় মাথা না নীচু করলে
মাথাটা ভারী হয় বড্ড
জগদ্দল পাথরের মত,
ঘাড়ে ব্যাথা করে
অহংকারের গাঁটগুলো টাটায়।
তাগিদ
সারাটা দিন ধরে
বেঁচে থাকার তাগিদ বানাচ্ছিলাম
খুঁজছিলাম না, অত রসদ নেই।
বানাতে বানাতে
কিছু পুরোনো আলপিনে পড়েছে
অন্যমনস্ক হাতের আঙুল।
পিনগুলো সরাতে সরাতে
আরো কিছু আঙুল হল ক্ষত-বিক্ষত।
ওদের সরাবো আজ সারাদিন,
আঙুল না সারলেও।
এটাই হোক, আমার আজকের বাঁচার তাগিদ।
কাঁটা
বুকের ভিতর কাঁটা বিঁধে আছে
তুলতেই পারি জোর করে
রাখব কোথায়? ফেলব কোথায়?
ফের যদি বেঁধে কারো বুক চিরে?
অবিশ্বাসী
খানিক তাকাও অবিশ্বাসী।
সন্ধ্যের পর রাস্তার ধূলো পথে
কে যায়?
গভীর রাতে
ঝিঁঝিঁর ডাকে
পাতার অঙ্গুলিহেলনে
জোনাকির আলোয়
নদীর বাঁধানো ঘাটে জল আছড়ানো শব্দে
কোনো বাচ্চার আর্তনাদে
চমকে উঠেছো কখনো?
পাঠ
নিস্পাপ দুটো চোখ
পূর্ণ বিশ্বাসে যখন আমার মুখের দিকে তাকায়,
কুন্ঠিত হই মনে মনে।
এ বিশ্বাসের যোগ্য কি আমি?
তার সরল শৈশব, কৈশোরের কাছে
অসহায় আমার জটিল মনের ভাঁজ।
যে শুদ্ধতা ধর্মগ্রন্থের পাতা পারে নি শেখাতে,
সে শুদ্ধতার পাঠ, ওই দুটো চোখে
ওই সরল, নিস্পাপ, বিশ্বস্ত দুটো চোখে।
আরো জোরে
বেঁচে থাকাটা
যার নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে
প্রতিদিন একটু একটু করে
দোহাই একটু জোরে পা চালাও
ওর পাশে পৌঁছাতে হবে আজই
আর বেশি দেরি না করে।
যার দীর্ঘশ্বাসে বালিশ বিছানা পুড়ছে
এমনি কি ঘরের ছাদেও যার পোড়ার দাগ
দোহাই ভাই, আরেকটু জোরে ছোটো
ওর শেষ নিশ্বাস বেরোবার আগেই
ওর বুকে রাখতে হবে হাত।
স্বর্গ-মর্ত্য
তোমার হাতে শালগ্রামশিলা?
আমার হাতে ঘাস
তোমার হাতে কোরাণ না গীতা?
আমার হাতে বাতাস
তোমার হাতে জপের মালা?
আমার হাতে জল
তোমার চোখে স্বর্গের ছবি?
আমার চোখে মাটি
তোমার পা শুদ্ধ শুকনো
আমার পা কাদায় ভিজে
তুমি চলেছ অমৃতের পথে
আমি চলেছি ক্ষেতে
তোমার অপেক্ষায় ভগবান
আমার অপেক্ষায় মানুষ
তখন
তোমার আসার আগে বুঝতে পারি,
তুমি আসছো
তুমি যাওয়ার আগে বুঝতে পারি,
এবার বলবে, আসি
শুধু বুঝি না মাঝের সময়টা-
তখন আমি কোথায় থাকি?
তেষ্টা
জল ঝরছে বিন্দু বিন্দু
সারা আকাশটার প্রতিবিম্ব তার গায়ে
মাটির বুকে মিলিয়ে যাচ্ছে
এক মহাকাশ তেষ্টা মেটানোর দায়ে।
যদি না
তুমি আমার গায়ের রঙ, চুলের রঙ
জানতে পারো
আমার উচ্চতা, বুকের গঠন