সমস্যাটা চূড়ান্ত আকার নিল পুলকের কাজটা চলে যাওয়ার পর। একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে সেলসের কাজ করত পুলক। আহামরি কিছু মাইনেপত্র না হলেও চলে যাচ্ছিল একরকম। তিস্তার ক্ষোভ ছিল না, তা নয়, তবে আশু কোনো উপায় না দেখে ক্ষোভের দিকটা চেপে রাখারই চেষ্টা করত। পারত না যদিও সব সময়। তবু এখনকার মত এত ঝাঁঝালো হয়ে ওঠেনি।
তিস্তার বড় হওয়া বোনের সঙ্গে, যেমন আর চার-পাঁচটা বাঙালি মধ্যবিত্ত পরিবারে হয়, বাবা-মায়ের সঙ্গে। বাবা হাইকোর্টে অতি সাধারণ একটা কাজ করতেন। মা একটা প্রাইভেট নার্সিংহোমে কাজ করত। তিস্তার স্বপ্নগুলো মায়ের থেকেই জন্মেছিল। মা বারবার দুই বোনকে বলত, বড় কিছু একটা জীবনে করতে না পারলে জীবনটাই নষ্ট। আসল কথাটা হল টাকা। সেটা না থাকলে বাঁচাটা বাঁচার মত হয় না।
এর মধ্যে তিস্তার বাবা সেরিব্রাল অ্যাটাকে বিছানায় পড়ল। সংসারে খরচ বাড়ল অনেক। তিস্তা কোনোরকমে উচ্চমাধ্যমিকে ফার্স্ট ডিভিশান পেল। শিখা, মানে তিস্তার মা ঘোষণা করল, এরপর পড়াশোনা করতে হলে নিজের খরচ নিজে চালাতে হবে। তিস্তা টিউশান পড়াতে শুরু করল।
তিস্তার বোন, তৃষাকে নিয়ে শিখা কথা বলত না। শিখা জানত তৃষা যে ধাতুতে গড়া সেটাকে নিজের মত করে গড়া যায় না। সে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নিজের মতই হয়ে উঠবে। শিখার কোনো প্রভাব ছাড়াই। হলও তাই। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে তৃষার খেলার দিকে ঝোঁক বাড়ল। থিয়েটারের দিকে ঝোঁক বাড়ল। পড়াশোনা বলতে কোনোমতে পাস করতে পারলেই সে ধন্য।
তিস্তা নরম। তিস্তাকে নিজের মত বাঁকিয়ে চুরিয়ে নেওয়া যায়। স্বপন, মানে তিস্তার বাবাও নরম, কিন্তু তাকে গড়ার মত কোনো উপাদান কিছু পায়নি শিখা। ধুলোর মত, জল ঢাললে কাদা হবে। আগুনে দিলে নিজেরই চোখে-নাকে এসে ঢুকবে। অপদার্থ মানুষ একটা।
কিন্তু তিস্তার মধ্যে সে সম্ভাবনা কই? বড় সাধারণ মাথা নিয়ে জন্মেছে। নইলে ফার্স্ট ইয়ারেই এরকম ল্যাজেগোবরে হয় কেউ? ইকনমিক্স এমন কি কঠিন সাবজেক্ট? ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি পড়ার যোগ্যতা যে নেই সে উচ্চমাধ্যমিকে সায়েন্স পড়িয়েই বুঝেছিল শিখা। নইলে এই রেজাল্ট হয়? কম টিউটার তো দেয়নি! আসলে বংশের রক্ত… এই দাস পরিবারে কে কবে বড় স্বপ্ন দেখল… শ্বশুরের তো ছিল সব্জীর দোকান বাজারে….
=======
তিস্তার বিয়েটা হল আকস্মিক। নইলে ওই মফস্বলে মেয়ের বিয়ে কে দেয়? তিস্তা বখে যাচ্ছিল। যে ছেলেটার সঙ্গে নষ্টামিটা শুরু করেছিল তিস্তা, সে পরিবারকে ভালো করে চেনে শিখা। মেয়েটাকে বিয়ে করত কিনা তাও সন্দেহ। যেটুকু সম্মান আছে তাও যেত।
এই হল তিস্তার বড় হওয়ার ইতিহাস। অতীত যখন অনেকটা অতীত হয়ে যায়, স্মৃতি ঝাপসা হয়ে আসে, মানুষ তাকে বাস্তবতা ছাড়িয়ে নিজের কল্পনায় ঢেলে নিতে পারে, যেমন সুবিধা তেমন করে। সংসারে ইচ্ছার তাও কোথাও একটা নীতি আছে, স্বাধীনতা আছে, সুবিধার কোনো নীতিবোধ নেই। লোভী মনের সুবিধার দিকে ঝোঁক আপনিই এসে পড়ে। সে সত্য মিথ্যার ধার ধারে না।
তিস্তা বিয়েতে রাজী হয়নি। পুলককে দেখলে তার ঘেন্না লাগত। বাবার মত এমন মিনমিনে পুরুষ দেখলেই তার গা জ্বলে যেত। সেই জুটল তার কপালে! তিস্তা উঠতে বসতে পুলককে মনে করিয়ে দিত, পর পর কিসব দুর্ভাগ্য তিস্তার জীবনে ধারাবাহিকভাবে ঘটেছে, যার একটা হল পুলকের তার জীবনে এইভাবে জড়িয়ে যাওয়া।
পুলকের সব পছন্দই তার কাছে 'চিপ' লাগতে শুরু করেছিল প্রথমদিন থেকেই। ঘরের রঙ, আসবাবপত্র, খাওয়া-দাওয়া ইত্যাদি সব পাল্টাতে চেয়েছিল। কিছু পেরেছে, কিছু পারেনি। পুলকের বাধাও ছিল না, সহযোগিতাও পায়নি সে।
======
পুলক বড় হয়েছে বাবা-মা ছাড়া, মাসির কাছে। যত্ন পায়নি। বেঁচে থাকার জন্য যতটা দরকার, পেয়েছে। নিজেকে বিকশিত করার জন্য যে স্নেহ, ভালোবাসা শৈশব, কৈশোর আশা করে, পাইনি। কোনোভাবে পড়াশোনা শেষ করে সেলসের চাকরিতে ঢুকেছে। পৈতৃক বাড়ি কোনোমতে দাঁড় করিয়ে নিজেকে আলাদা করেছে। মাসিও তাড়াতাড়ি বিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করে বোনপোর উপর দায়িত্বের ইতি টেনেছে। পুলকের রাজি, অরাজি হওয়াটা পুলকের নিজের কাছেই কোনো গুরুত্ব পাইনি কোনোদিন। বরং এই বিয়েটা দিলে মাসি যে এক সুবিশাল কর্তব্য শৃঙ্খল থেকে মুক্তি পাবে, সে-ই মুক্তিটা মাসিকে দিতে পারলেই ধন্য মনে করবে নিজেকে পুলক, এমনটাই ভেবেছিল সে।
নিজের জীবনের উপর যে নিজের কোনো অধিকার আছে সেটা পুলক জন্ম থেকেই জানে না। অনেকবার স্বাধীন, সুখী জীবনের কথা ভেবেছে। কিন্তু মনের কোনো একটা দিক দিয়ে জানত সেটা তার জীবনে হওয়ার নয়। তাই তিস্তা যখন তার জীবনে স্তূপাকার ঘেন্না, অশ্রদ্ধা নিয়ে এলো, সে ঘেন্না, অশ্রদ্ধাকে মেনে নিতে পুলকের খুব একটা বেগ পেতে হল না। তার জীবনে এটাই স্বাভাবিক যেন।
তিস্তা একটা ক্ষীণ আশার আলো দেখল যখন তমাল জন্মালো। মায়ের যাতায়াত একেবারে কমে গিয়েছিল, তমালের জন্মাবার পর মায়ের যাতায়াত বাড়ল। শিখার মনে হল, তিস্তা এই একটা জায়গায় অন্তত তাকে ছাপিয়ে গেল, ছেলে জন্ম দিল। শিখা তিস্তাকে বলল, ছোটো থেকেই এমন করে মানুষ কর যেন ওর বাবার ছায়াটুকু ওর উপর না পড়ে। আমার জীবনটা তো দেখছিস, পুলকও এই একই গোয়ালের গরু। ছেলে যেন তোকে ছাড়া কিছু না জানে। এখন থেকে টাকা জমা, ছেলেকে সায়েন্স পড়া, ভালো কোচিং-এ দে, যেন ডাক্তার হয় দেখ। জীবনটা নষ্ট হতে হতে বাঁচার আশা দেখিয়েছেন ঠাকুর আমাদের। হাতছাড়া করিস না।
তিস্তা এই প্রথম মায়ের মুখে নিজের প্রশংসা শুনল। মায়ের উপর তার নিজের প্রচুর ক্ষোভ ছিল তিস্তা জানত, কিন্তু এতটা ভালোবাসার প্রত্যাশা ছিল জানত না তো!
মায়ের মনের এইটুকু আনুকূল্য পেয়েই নিজেকে ধন্য মনে করল তিস্তা, নিজেকে সম্পূর্ণ মায়ের কাছে সঁপে দিল। পুলককে ততটাই দূরে সরিয়ে দিল নিজের অজান্তে। পুলক অভিযোগ জানালো না। অশ্রদ্ধার সংসারে অভিযোগ প্রহসন বই আর কিছু নয় যে!
======
পুলকের চাকরি গেল যখন তমাল টেনে উঠল। ইতিমধ্যে হাওয়া অন্যদিকে ঘুরে গেছে। তিস্তার অনেক আগে শিখা বুঝেছে নাতিও সেই মাথা নিয়ে জন্মায়নি যে মাথা খাটিয়ে সংসারে উপরে ওঠা যায়। তিস্তা বুঝল পরোক্ষভাবে। মায়ের নাতির উপর উদাসীনতায়। ইতিমধ্যে তৃষার খেলায় নামডাক হয়েছে। খবরের কাগজে নাম বেরিয়েছে। রেলে চাকরি নিয়েও কথা চলছে স্পোর্টস কোটায়। হয়ে যাবে, অনেকেই বলছে।
তিস্তা দেখল তমাল আর সে একদিকে, গোটা সংসার আরেকদিকে। পুলক কোমর ভেঙে শয্যা নিল। ডাক্তার বলল, সময় লাগবে। স্বাভাবিক হতে বছর গড়াতে পারে। কোম্পানি থেকে চার মাস মাইনে পাঠিয়ে ইতি টানল। তিস্তার ঘাড়ে এসে পড়ল সংসার।
তিস্তা এতদিন নিজেকে বুঝিয়েছে তার সব সম্ভাবনা শুধু দুর্ভাগ্যের চাপে হারিয়েছে। কিন্তু আজ এই বাস্তবের সামনে এসে দাঁড়িয়ে যখন সে বুঝল সে অতি সাধারণ, আর কোনো বিশেষ ক্ষমতাই তার নেই, তখন সব ক্ষোভ, রাগ, প্রতিহিংসা গিয়ে পড়ল পুলকের উপর। যে পুলক তার এই অক্ষমতার ঢাল হয়েছিল এতদিন, পুলকের নিজের অজান্তেই। মানুষ নিজের মনের তিতা নিজের কাছেও আনে না প্রকাশ্যে। সব তিতা হয়ে যায়। কিন্তু পুলক সে অবস্থাও রাখল না তিস্তার। তিতার পুঁটুলি খুলে ছড়িয়ে গেল চতুর্দিক। সবটা যেন ষড়যন্ত্র মনে হতে শুরু করল তিস্তার। পুলকের, ভাগ্যের, ঈশ্বরের ষড়যন্ত্রের শিকার সে। ক্রমশ শালীনতার সব সীমা ছাড়িয়ে গেল তিস্তা। অভিধানের বাইরে থাকা এমন সব শব্দ অনায়াসে তার জিভে চলে আসতে শুরু করল পুলককে দেখলেই, যা শুনে আশেপাশের বাড়ির লোক জানলা বন্ধ করা শুরু করল।
তিস্তা রাতদিন শোনাতো তার ছেলেকে যে সে নিজে টিউশান পড়িয়ে নিজেকে দাঁড় করিয়েছে, সাপোর্ট পেলে আরো এগোতো। তিস্তা সেই বিশ্বাসে টিউশান পড়ানোর কথা ভাবল। কিন্তু সব ভুলে গেছে যে! উপায়?
তিস্তা দুটো বাড়ি রান্নার কাজ নিল। আর দুপুরে সেলাইয়ের। মেশিন কিনে দিয়ে গেল বোন।
সেদিন তৃষা এসেছে সেলাই মেশিন দিতে। তৃষাকে দুপুরে খেয়ে যেতেও বলল না তিস্তা, এতটাই লেগেছিল বুকে। লজ্জা। হীনমন্যতায় বিষ খাবে মনে হয়েছিল। খায়নি শুধু তমালের জন্য। তার থেকেও বেশি তমালকে ঘিরে নিজের স্বপ্নের জন্য। সবার মুখে ঝামা ঘষে দেবে তমাল।
তৃষা যাওয়ার আগে তিস্তাকে বলে গিয়েছিল, মায়ের মত হোস না দি…. জামাইবাবু খুব ভালো মানুষ… একটু মানিয়ে নে…. দেখ সব ঠিক হয়ে যাবে… আমাদের ট্রেনিং-এর সময় বলে, মনটাই আসল… ওটাকে বশে আনতে হয়, তবেই খেলা হয়। নার্ভের উপর বাড়তি চাপ নিস না দি…. আর একটা কথা… বুল্টুকে (তমালকে তার মাসি এই নামেই ডাকে) আমার সঙ্গে দে,... তুই আর মা ওর মাথা খাচ্ছিস... ওর দ্বারা ওসব হবে না…. তুই আমায় দে… ওর খেলায় দারুণ আগ্রহ রে… আমার সঙ্গে মাঠে যাওয়ার জন্য কেমন করত মনে নেই? স্যারেরও তাই মত….
তিস্তা বলেছিল, নিজের ছেলেমেয়ে হলে মাঠে নাচাস…. আমারটা আমি বুঝে নেব…. একটা সেলাই মেশিন কিনে দিয়েছিস বলে আমার মাথা কিনে নিসনি যে সেইজন্যে আমার ছেলেকে তোর কাছে বন্ধক দিতে হবে…. মায়ের মত হতে চেষ্টা করিস না…. সে যোগ্যতা তোরও নেই….. আমারও নেই….
=====
তিস্তার বডিটা যখন ওড়নাটা খুলে পুলিশ নামালো তখনও সেলাই মেশিনের পাশে ডাঁই করা জামাকাপড়ের স্তূপ। শেষের কয়েক মাস অতিরিক্ত অর্ডার নিতে শুরু করেছিল তিস্তা। জয়েন্টের কোচিং-এর কম খরচ নাকি!
ঘটনার মোড় ঘুরেছে আরো চার বছর আগে। পুলক সেরে উঠল, স্বাভাবিক হল না। চাকরি পাবে আশা করেনি। পাড়ারই এক ওষুধের দোকানে কাজ পেল। টুলে বসে বসে হিসাব রাখার কাজ। বেশিক্ষণ দাঁড়াতে পারে না।
পুলকের চেহারা ভাঙল। শরীরের এই অকাল অক্ষমতাটা পুলকের বিক্ষুব্ধ মনটাকে এমন বিষিয়ে তুলল যে, শালীনতার যে আগল সরিয়ে তিস্তা তাকে আক্রমণ করত, তার বাবা-মাকে নিয়ে, তার খাওয়া নিয়ে, তার শরীর নিয়ে... সে নিজেও সে আগল খুলে বেরিয়ে এলো। তমাল সিঁটিয়ে খাটের কোণে বসে দেখত মা-বাবার মল্লযুদ্ধ, শুধু মুখে নয়, হাতাহাতিও।
তিস্তা নিজেকে শেষ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিল, যখন জানল তমাল দ্বিতীয়বারের চেষ্টাতেও ডাক্তারিতে চান্স পায়নি।
পুলক বাথরুমের দরজার সামনে সিঁড়িতে বসে। তমালকে পাওয়া যাচ্ছে না। তৃষা এখানে নেই। আসতেও পারবে না। খেলা আছে বিহারে। শিখা তিস্তার মাথার কাছে বসে। কাঁদছে না। শূন্য চোখে তিস্তার মুখটা দেখছে। যেন কি বলবে ও, ভয় পাচ্ছে, শঙ্কা হচ্ছে। কি যেন বলতে পারে ও…. যেটা শিখা কোনোদিন শুনতে চায় না। কেন পোস্টমর্টেমে নিয়ে যাচ্ছে না…. পুড়ে যাক সব…. সব….
তিস্তার বাবা বিছানায়। এখন আর কিছু মনে থাকে না। মাঝে মাঝেই শুধু হাসে। আর ছাদে আঙুল দেখিয়ে বলে, আয় মা আয়… মায়ের কথা শুনিসনি… আয় আয়…. এই তো আমি….
শিখা রান্না করতে করতে শুনতে পায়। কথা বাড়ায় না। গরম খুন্তি তো আছেই। বেশি বাড়াবাড়ি করলে ওই ওষুধ। তারপর বার্ণল।
শিখার ক্ষোভ তাকে কেউ বুঝল না। না মেয়েরা, না স্বামী, না জামাইটা। কার ক্ষতি চেয়েছে সে? শুধু চেয়েছে সবাই ভালো থাকার মত ভালো থাক। বিয়ের পরের প্রথম দিকে শুনত বরের কাছে, এত উচ্চাকাঙ্খা ভালো না শিখা…. ভালো না….
গা জ্বলে যেত। উচ্চাকাঙ্খা এগুলো? এটাই তো বাঁচার মত বাঁচা! নিজেকে তৈরি করে নিতে পারলেই সব পারে মানুষ। সব পেতে পারে। সব সুখ। সমাজে প্রতিষ্ঠা। সব সব। অলসতা দু'চক্ষের বিষ।
সেই অলসতাতেই ছেয়ে গেল শিখার জীবন। সারাদিন কোনো কাজ নেই। তমালকে তৃষা নিয়ে গেল। কি অনায়াসে ছেড়ে দিল পুলক! বর বেঁচে আছে কি মরে গেছে বোঝা দায়। সারাটা দিন কাটায় কি করে? তিস্তার মত চলে গেলেই হয়, কিন্তু গলায় দড়ি দেওয়ার মতও বা কারণ কি আছে তার জীবনে? সব বড় শান্ত! কোথাও কোনো ধাক্কা নেই, উত্তেজনা নেই।
পুলক নিয়ম করে ফোন করে তমালকে। তৃষা আসে নিয়ে ওকে মাসে, দু'মাসে একবার। পুলকের মনে হয় জীবনটা এখন অনেকটা তার দিকে। কিন্তু কোনদিকে নিয়ে যাবে জীবনকে সে? তার নিজের ইচ্ছা কি? সেটাই তো জানে না। সেই ইচ্ছাটাকে খুঁজে বার করাই তার এখন একমাত্র কাজ। পুলক ওষুধের দোকানে বসে বসে হিসাব করে। তাকে সাজানো ওষুধের দিকে তাকায়। কি আশ্চর্য না? এগুলো জীবন দিতেও পারে, আবার কেড়ে নিতেও পারে। ঠিক ডোজ, ব্যবহার জানতে হয়। মাঝে মাঝে চোখ ভিজে আসে, তিস্তার জন্য, বড় তাড়াতাড়ি ফুরিয়ে ফেলল নিজেকে! একটু শ্রদ্ধা না থাকলে জীবন চলে! তিস্তা জানল না। না নিজেকে শ্রদ্ধা করল, না আর কাউকে। পুড়ে, পুড়িয়ে ছারখার করল শুধু চারদিক।
পুলক দীর্ঘশ্বাস ফেলে আবার হিসাবের খাতায় চোখ রাখে।