Skip to main content

মাটি আকাশ আর ঘুড়ি

নিজেকে লাটাইয়ের সুতোর মত ছেড়ে দিতে দিতে মানুষটা থমকে দাঁড়ালো। নিজের যেদিকটা অসীমকে ছুঁয়ে আছে, তাকে আর স্পষ্ট নীচ থেকে দেখা যায় না। আর যেদিকটা মাটিতে আটকে আছে সেখানে সুতো নেই পর্যাপ্ত। আর দুইপাক ঘুরলেই সুতো শেষ। শূন্য লাটাই পড়ে থাকবে মাটিতে। এখন কি করবে সে? 
    হঠাৎ ঝড় উঠল। আকাশ ঘিরে এলো দস্যুর মত কালো মেঘ। এক ধাক্কায় আকাশ থেকে ছিঁড়ে পড়ল তার অসীম ছোঁয়া আমি মাটিতে। আকাশে ওড়া সুতোতে লাগল কাদা। তার অসীম ছোঁয়া আমিকে স্নান করিয়ে গেল আকাশ ধোয়া বৃষ্টির জল। এবার? 
....

ভালোবাসি

ভালোবাসি

তোমার ইচ্ছার পাশে
     নিজের ইচ্ছা সাজিয়ে যেতে
...

জাহাজ আর লোকটা 

লোকটা যখন জেগে উঠল, তখন জাহাজটা মাঝ সমুদ্রে। বিশাল বড় জাহাজ। লোকটা হামাগুড়ি দিয়ে জাহাজের পাটাতনে এলো। মাথাটা উঁচু করে তাকালো। চারদিক জল জল আর জল। আকাশের দিকে তাকালো। নীল নীল আর নীল। শূন্য সব। লোকটা বুকের কাছে হাতটা নিয়ে গিয়ে নিজের বুকটা খামচে ধরল। সে জানে সে ডুবে যাবে। এ জাহাজ ডুবে যাবে। সবাই শেষ হয়ে যাবে। না, না, না, এ হতে পারে না। লোকটা নিজেকে গুটিয়ে শামুকের মত কুঁকড়ে শুয়ে থাকল। 
    
    পিঠে কারোর ছোঁয়া লাগল। সে ঘুরে তাকালো। জাহাজের কর্মচারী একজন। সে বলল, কি হয়েছে? বমি পাচ্ছে? 
...

মোহনা

স্মৃতি নয়, জীবন। সময় তো শুধু বাইরেই সামনের দিকে এগোয়। অন্তরে তো নয়। সেখানে সময় উভমুখী। চাইলেই পিছনে যেতে যেতে কোন ভাঙা বাড়ির সামনে এসে দাঁড়ায়। ফেলে আসা একটা শুকনো পাতা তুলে বলে, মনে পড়ে? 
    আমি বলি, কেন অকারণ ব্যথা জাগাও?
...

আনন্দময়ী

তুমি কি আনন্দময়ী? আমার রেজাল্ট বেরিয়েছে। আমি ফেল করেছি। বাবা যখন পুজো দিতে আসবে মন্দিরে, বাবাকে একটু বুঝিয়ে বোলো না, আমায় যেন না মারে!
       সিক্সে পড়ে। নাম বুলবুল। বাবা মন্দিরের প্রধান পুরোহিত। তান্ত্রিক, জ্যোতিষীও বটে। গ্রামে নামডাক বেশ। 
    বুলবুল বাড়ি এসে, নাকেমুখে গুঁজে মাসির বাড়ি চলে গেল। একাই। সাইকেল নিয়ে। বলে গেল দুদিন পর ফিরবে। মা নেই। এক লতায়পাতায় পিসি আছে। সে না থাকলেই খুশি হয় বেশি। 
...

রক্তমণি

মোবাইলটা অফ্ করে চার্জে বসিয়ে, এসিটা অফ্ করে ঝুল বারান্দায় এসে বসল মল্লিকা। আঁচলে মুখটা মুছে বলল, উফ্...। 
    রাত এগারোটা। সারাদিন বৃষ্টি। কেটেছে খানিক আগে। গোটা আকাশ যেন মুছে গেছে কেউ ন্যাতা দিয়ে, যত্ন করে। সবক'টা তারা বসার ঘরের শৌখিন সাজানো জিনিসের মত জ্বলজ্বল করছে। 
    তারা দেখলেই এই তিয়াত্তর বছর বয়সটা একটা বাইরের ঘটনা মনে হয়। সমস্ত ছেলেবেলা যেন বুক আঁকড়ে বসে আছে। লুকিয়ে। তারারা ওদের বাসা জানে। ঠিক বার করে আনে। স্কুলের ব্যাগ, ভাত মেখে খাওয়ানোর সময় মায়ের চুড়ির আওয়াজ, বাড়ির সামনের পুকুর, রাস্তা... সব মনে পড়ে যায়। 
...

বোকা উইয়ের ঢিবি

মানিয়ে তো নিতেই হবে। চ্যালেঞ্জটা হল নিজস্বতাকে হারাতে দেওয়া যাবে না। সেকি সম্ভব? নিজেকে না বদলে বদলকে মেনে নেওয়া যায়?
    দর্জির দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে এই সব ভাবছিল জনাই। তার ছিটটা আস্ত জামা হয়ে গেল। অথচ তার জীবনটা… নাহ্, ভালো দর্জি সে হতে পারল না। এখন আশা ছেলেটাকে নিয়ে। স্বপ্ন। ছেলেটা অঙ্ক করতে এসেছে। ক্লাস নাইনে পড়ে। রাত দশটায় ছাড়বেন স্যার। অর্ধেক মাইনে নেন। 
    নিজের টোটোটার দিকে তাকালো। মানুষ কত কি বানায়! লোহা পিটে, টিন পিটে, কাপড় কেটে। সামনের বড় বড় ফ্ল্যাটগুলোর দিকে তাকালো। সিমেন্ট, ইট দিয়েই তো বানিয়েছে। মানুষের মাথায় কত কি ভাবনা! অথচ জীবনটা যেমন চায় বানাতে পারে না। কেন? 
...

নিষ্ঠুর

মেঘলা আকাশ

তবু
 "নির্ঘাত বৃষ্টি হবে" 
       শতাব্দী প্রাচীন
           বটবৃক্ষ আর বলে না

আশ্রয়

তুমি আমার ভাগ্য
ভবিতব্য তো নও 

চিরকালের আশ্রয় 
    আকাশ না-ই বা হলে
ক্ষণকালের বর্ষার মেঘের 
   ছায়াটুকু তো হও

[ছবিঃ Aniket Ghosh]

Subscribe to