খেলা
খেলতে খেলতে বুঝিনি
কখন খেলার সাথীর বেলা এসেছিল ফুরিয়ে
তাকে বললাম খেলা শেষে কি খেলা ভাঙতেই হয়?
সে বলল, হ্যাঁ
বললাম, বেশ ভাঙলাম না হয় খেলা,
যদি সত্যি সত্যিই চাই?
সে বলল, এ আবার কি নতুন খেলা করলে শুরু!
সঙ্কল্প
চিন্তার আগাছা কিছু ছাঁটতে হবে
অনেকদিন ধরেই ভাবছি
কয়েকটা মুখভার করা শব্দ অভিধানে রাখব না আর
কয়েকটা মই নামিয়ে রাখব এবার
উঠব উঠব করে বসে আছি আকাশের দিকে চেয়ে
পায়ে ঝিঁঝিঁ ধরে গেছে, হাঁটব এবার, ওঠার কথা ভুলে।
কিছু নদীর মুখ ঘুরিয়ে ক্ষেতের দিকে আনতে হবে
আগুন ফাঁদে মারতে হবে কিছু পোকা
চর্বিত চর্বনের পিক ফেলে ফেলে দেওয়ালটা নোংরা করেছে যারা
ফিরব
কি ভাবে কখন বেলা হল বুঝলাম না,
হঠাৎ দেখলাম সূর্যাস্তের রঙ
আমগাছটার মাথায়
পাখিগুলো ফিরছে দল বেঁধে, ঘরে।
আমিও ফিরব, আজ না হয় কাল
এরকম করেই হঠাৎ কোনো একদিন
যখন সূর্যাস্তের আলো সবুজ ক্ষেতকে
দেবে শেষ চুম্বন, পরম আদরে।
টিফিন বক্স
যখন স্কুলে পড়তাম, টিফিন বক্সের একটা রহস্য ছিল। মা কি টিফিন দিয়েছেন আজ? ম্যাগী না পরোটা? চাউ না রুটি? না সুজি? না অন্য কিছু!
আজও টিফিন বক্সের ঢাকনা খুলছি প্রতিদিনের মোড়কে। রোজই ভাবি, আজ কি এনেছে আমার জন্য? ঠোঁটের কোণে হাসি, না চোখ জ্বালা ধরা ব্যাথা? নাকি পাঁচ মিশালি তরকারী?
যাই আনুক, নিতে হবে হাসি মুখেই, পরের দিনের দিকে তাকিয়ে।
এমনটাও ঘটে
সংসারে প্রকৃত সুখী সেই, যে সুখে থাকার চেষ্টাই করে না। ভাবেই না কতটা জমল, কতটা গেল।
যেদিন আমি ক্ষেপব
যেদিন আমি ক্ষেপব-
সেদিন টগরকে বলব, লাল গোলাপ
তোমায় তাই মানতে হবে
মানতেই হবে
বাড়ির উঠানের জবা গাছকে বলব-
"হে পারিজাত বৃক্ষ, দাও একটি পারিজাত পুষ্প
আমার হস্তে, গাঁথিব তাহার খোঁপাতে!"
তুমি জবা গাঁথবে খোঁপাতে
তুমি ভিতরে এসো
বাইরে দাঁড়িয়ে কেন?
ভিতরে এসো
পায়ে ধুলো?
তার চেয়ে অনেক বেশি ধুলো
আমার ঘরে বন্ধু
ময়লা জামা?
সে ময়লা সহ্য হবে
জামার নীচে যে হৃৎযন্ত্রটা?
আমার সে যন্ত্রটা বিকল হয়েছে অনেকদিন,
তোমায় বাইরে রেখে।
আমিও
দিদার মুখে ছোটবেলায় অনেক গল্প শুনতাম। তার মধ্যে একটা গল্প আজও সময়ে অসময়ে খুব মনে পড়ে। গল্পটা বলছি। দিদা কোথায় পড়েছিলেন জানি না। হয়তো অনেকের জানা। তবু যাঁদের অজানা তাঁদের জন্যই বলছিঃ
দূরে
তোমার দিকে কম তাকাই
কারণ, তোমার হৃদয় ফোঁড়া চোখ।
তোমার সাথে কম কথা বলি
কারণ, তোমার কথা বলার ফাঁকে
শুদ্ধ নীরবতা।
তোমার কাছে যাই না
কারণ আমার নিঃসঙ্গ হৃদয়।
তবু
ভয়ের জিনিসকে যত সহজে বিশ্বাস হয়, অভয়কে তত সহজে বিশ্বাস হয় কই? তুলসীদাসজী বলছেন, অমৃত সারা জীবন কানেই শুনে এলাম, চোখে পড়ল শুধু বিষ।
এ অভিজ্ঞতা কার জীবনে না নেই। তবু নিজের সামনে যখন দাঁড়াই, প্রশ্ন করি তোমার এ সংসারে চলার পুঁজি কি? মন বলে, কিছু ভাল কাজ করার ইচ্ছা। হ্যাঁ, এইটাই আজ থেকে কাল, কাল থেকে পরশু হাত ধরে নিয়ে চলেছে।