Skip to main content

আমার ভ্যাক্সিনটা?

সদানন্দ আর সন্ধ্যা লাইনে দাঁড়িয়ে। সন্ধ্যা সদানন্দের পিছনে দাঁড়িয়ে। ছিয়াত্তর বয়সের মানুষটার শরীর টাল খেয়ে যায় যখন তখন। লাঠিটাও শক্ত করে ধরে রাখতে পারে না। শিরা বেরোনো হাতটা থরথর করে কাঁপে। সন্ধ্যা অতটা অশক্ত নয়। এখনও চারটে বাড়ি কাজ করে সংসার চালায়। তার বয়েস তার মনে হয় আটান্ন হবে। কিন্তু আধার কার্ডে লেখা তেষট্টি। কি করে হয় কে জানে!

তুমি তো

তুমি তো আগন্তুক নও। তবু দেখো, আমি দরজা জানলা এঁটে এমনভাবে রয়েছি যেন তুমি ফিরে যাবে আমায় না পেয়ে খোলা দরজায়। 

তুমি তো অনাহূত নও। তবু দেখো, আমি তোমার থাকার আয়োজন না করে এমন নির্বোধ সেজে আছি, যেন তুমি ফিরে যাবে বিনা আপ্যায়নে। 

এই কি ঈশ্বর

নিজেকে ডিঙিয়ে বাইরে এসে লোকটা ভয় পেল? যে বাইরে এসে দাঁড়ালো আর যে ভিতরে ছিল - এরা কি দুটো আলাদা মানুষ? পাঁচিলটা কই? যেটা ডিঙিয়ে সে বাইরে এলো।

আমাকেও সঙ্গে নিও

তুমি ছাড়া 
সব তছনছ করে যাবে
        আর কে বলো?

এসো 

আমার আবার সব গোছানো হয়ে গেছে, 
        নতুন রকম করে

  এবার আসবে যখন
      পারলে সব
          পুড়িয়ে দিয়ে যেও

কর্তব্য

"কর্তব্যটুকু করে যাই, তারপর যা হবার ঈশ্বরই জানবেন।"


    নার্সকে কথাটা শেষ বলেছিল। এই বাক্যটা বলে আসছে একত্রিশ বছর বয়েস থেকে। আজ এই চুয়াত্তর বছর দশমাস তিনদিনের দিন শেষবার উচ্চারণ করল। কথাটা বলে শুলো। আর জাগল না।

আদিম অনন্ত আকাশ

অতিমারীর প্লাবনে
    সদ্য মা হারা 
       বাচ্চা মেয়েটা
          ঘরের সব আলোগুলো জ্বেলে 
              দাঁড়িয়ে ঝুলবারান্দায় 
                              একা

অনুভব না জন্মালে

মানুষ মানেই ভয়। 'সাহস' ঠিক ভয়ের বিপরীত শব্দ নয়। সাহস হল ভয়কে প্রতিরোধ করার শব্দ। বা আরো সাদা ভাষায় ভয়ের সঙ্গে যোঝার শব্দ। 'অভয়' শব্দটা ভয়হীনতা, সে সবার আসে না। সক্রেটিস, ব্রুনো, চৈতন্য, খ্রীষ্ট, স্পিনোজা, গ্যালিলিও প্রমুখ যেসব বিখ্যাত মানুষদের কথা ইতিহাসে শোনা যায়, যারা নিজেদের জীবন বিপন্ন করে হলেও একটা আদর্শকে প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছিলেন। তাদের নিয়ে কথা নয়। ভয় হয় তো তা

স্বেচ্ছা আত্ম-অবমাননা

মানুষ দুঃখ থেকে ত্রাণ চায়। সে কোন দুঃখ? খিদের দুঃখ, পরাধীনতার দুঃখ, অপমানের দুঃখ।

বাড়াবাড়ি

    মানুষটা চাইত তার ঘরের দেওয়াল জুড়ে থাকবে হালকা সবুজ একটা রঙ। ঘরের চারদিকে দুটো জানলা থাকবে, গুমোট গন্ধ হবে না ঘরে। সকাল-সন্ধ্যে হালকা একটা ধুপের গন্ধ ঈশ্বরের চরণের মত ধীরে ধীরে পা ফেলে তার এ ঘর সে ঘর ঘুরে যাবে। তার বাথরুমে থাকবে হালকা সাবানের গন্ধ, মেঝে থাকবে শুকনো। খাবার আয়োজন হবে না এলাহি। থাকবে স্বাদ, থাকবে মাত্রামত আয়োজন। খেতে খেতে শব্দ করবে না,

অসময়


---
উপাধ্যায় মশায়ের সারারাত উত্তেজনায় ঘুম এলো না। কলেজে পড়ায়। পলিটিকাল সায়েন্স পড়ায়। বিজ্ঞানচর্চার পাশাপাশি জ্যোতিষচর্চাতেও নামডাক আছে। রবিবার বিকেলে তো বাড়ি থিকথিক করে মানুষে। কত দূর দূর থেকে লোকজন আসে। উপাধ্যায় মশায়ের বাবা, শিবপ্রসাদ উপাধ্যায়ও ছিল খুব বড় জ্যোতিষী। পসার জমাতে বেশিদিন লাগেনি তাই রামপ্রসাদ উপাধ্যায়ের। রামপ্রসাদের বয়েস এখন বাহান্ন। নাতি-নাতনি নিয়ে ভরা সংসার। বড় ছেলে থাকে মেলবোর্নে। ওখানেই চাকরি। মেজ থাকে লক্ষ্মৌতে, গাড়ীতে এক-দেড় ঘন্টা লাগে। সেজ বারাণসীতে, শিবমন্দিরের পুজারী। ছোটোটা… মনে করতে চায় না, উচ্ছন্নে গেছে। বিয়েও করেছে এক মুসলিমকে। রামপ্রসাদ একরকম ত্যাজ্যপুত্রই করেছে তাকে। শুধু স্ত্রী রম্ভার জন্য মাঝে মাঝে আসতে দিতে হয়। তাও শুধু ছেলেকে, বউ সে বেঁচে থাকতে এ বাড়ির ছায়াও মাড়াবে না, হুকুম!

জয়দেব ও বর্ষা

জয়দেব ভিজছেন। আষাঢ়ের প্রথম বর্ষা। চারদিক ঝাপসা হয়ে আছে। জয়দেব স্থির দাঁড়িয়ে। হাতদুটো বুকের কাছে জড়ো করা। জয়দেব তাকিয়ে শ্রীমন্দিরের দিকে। পতাকাটা আষাঢ়ের সজল বাতাসের দাপটে যেন সব ছিন্ন করে উড়ে যেতে চাইছে। জয়দেবের বুকের মধ্যেও যেন এক অবস্থা। জয়দেবের চোখের জল বর্ষার জলের সঙ্গে মিশে একাকার। যেমন নীলাচলে গলছে আষাঢ়ের আকাশ।

ভ্যাক্সিনরূপেণ সংস্থিতা

প্রায়ই দেখছি নানা হাউজিং কমপ্লেক্সে বিভিন্ন সংস্থা থেকে ভ্যাক্সিনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এই কাজটা আরেকটু বৃহৎ পরিসরে ভাবা যায় না?

ডাক্তার আঙ্কেল

কিছু থাকে আলগা মানুষ। সারাক্ষণ তাদের আলগা কথা, আলগা ভাব, আলগা ভালোবাসা, আলগা হাসি-মজা। 

    আবার কিছু মানুষ থাকে নোঙর ফেলা। তাদের কথা গভীর, ভাব গভীর। কথা শুনলে বুকে ঠং করে লাগে। ভালোবাসা হাঁটুজলেই শেষ হয়ে যায় না। 

প্যাণ্ডেল

পুজোর প্যাণ্ডেলে বাঁধা বাঁশগুলো বিয়েবাড়ি হয়ে যখন গৃহপ্রবেশের অনুষ্ঠানে বাঁধা হচ্ছে, বাচ্চাটা চীৎকার করে বলে উঠল, বাবা এই সেই বাঁশটা দেখে যাও, যেটায় আমি আমার নাম লিখেছিলাম অষ্টমীর দিন, বুম্বা, এক রকম আছে। 

    তার ডাক কেউ শুনল না। ছেলেটা আবার নাম লিখল তিনবার, বুম্বা বুম্বা বুম্বা। কেউ দেখল না।

যারা গেছেন

যারা গেছেন
    তারা নাকি সবাই ঈশ্বরের কাছে আছেন

ঈশ্বরের দমবন্ধ লাগে না
     এত এত 
           অনিচ্ছুকভাবে আসা
                 মানুষের দীর্ঘশ্বাসে?

রাস্তা

যে রাস্তা কোথাও নিয়ে যায়নি
    তার কাছে হতে চাইলাম বাধ্য

যে রাস্তা 
 নিজেকে ফুরিয়ে 
     আমায় পৌঁছে দিল
          তার কাছে হলাম অকৃতজ্ঞ

পরিচর্যা

দিল্লী থেকে ফিরছি, ট্রেনে খুব অসুস্থ হয়ে পড়লাম। বেড়াতে গিয়েছিলাম বন্ধুরা সবাই, সঙ্গে কয়েকজন বন্ধুর পরিবারের লোকেরাও ছিলেন। দুরন্ত এক্সপ্রেস। থামার জায়গা কম। বন্ধুরা বেশ একটু উদ্বিগ্ন, কি হবে আমার এই নিয়ে। যা হোক রাতের দিকে সুস্থ হতে শুরু করলাম।

ভালো

যে ভালো শুধু তোমার ভালো বলেই ভালো,
    সে আদৌ নয় ভালো। 

যে ভালো কেবল তোমার আমার ভালো বলেই ভালো।
    সে হয় তো অল্প অল্প ভালো। 

যে ভালোতে হয় অনেক মানুষের ভালো,
    সে বটে তবে বেশ কিছুটা ভালো। 

তুমি অস্থির হও

তোমার সাবধানতা
    তোমার হৃদয় আগলে দাঁড়িয়ে থাকে অহর্নিশি 

কখনও হৃদয় ঘুমিয়ে পড়ে অসময়ে
 কখনও বা সে ছেলেমানুষী বায়নায়
         উত্যক্ত করে 
           হিসেবী-বুদ্ধি প্রহরীকে

তুমি অস্থির হও

হবেই তো

The cycle

Pain is real
Because attachment is real


Attachment is real
Because life is real 

Life is real
Because pain is real

সাড়ে তিন মিনিট

আমার বগল ঘামছে। এসি অন। হাতের মুঠোটা শক্ত করে আছি। এটা রিফ্লেক্স অ্যাক্সন। টেনশান হলেই আমার হয়। ট্রেনটা মিস হবে। যশোবন্তপুর এক্সপ্রেস। ছাড়তে আর আধঘন্টা বাকি। কিন্তু যা জ্যাম, অসম্ভব। ফোন সুইচ অফ্ করে দিয়েছি। রেড্ডী অনেকক্ষণ ঢুকে গেছে স্টেশানে, আমি তখন বেলঘরিয়া ছাড়ছি। হাওড়া স্টেশানের পাশেই একটা হোটেলে ছিল। মনে হচ্ছে না পাবো। এমন জ্যাম যে আমি দরজাটাও খুলতে পারব না কোনোদ

পেটটা যেন না কামড়ায়

সমস্যা হল মোমবাতিটা কোথায় রাখবে। কারেন্ট চলে গেছে। বাথরুমটা ঘুটঘুটে অন্ধকার। এই সময়টা রোজ গা ধোয়া অভ্যাস। নইলে কে ঢোকে এই সময় এই অন্ধকারে।

পরিণতি

ছেলেটা সাইকেলটা নিয়ে সরু গলির ভিতরে ঢুকেই গেল। এ গলিটায় আসার কথা ছিল না। গলিটার শেষে গঙ্গা, পাশে ইঁটভাটা। কিন্তু বুকের মধ্যে রাক্ষস ঢুকেছে। দু’হাতে বুকের ভিতরটা খামচে ধরে তাকে নাচাচ্ছে। পাগল হয়ে যাবে এক এক সময় মনে হয়। সাইকেলের হাতলদুটো শক্ত করে চেপে ধরে আছে, যেন নিজেকে বিশ্বাস করতে পারছে না। সোজা গঙ্গায় চালিয়েও ঝাঁপ দিয়ে দিতে পারে। এই এত নরকযন্ত্রণার কারণ কে?

এখন

এখন এত ভিড়
     এখন এত কথা  
          এখন সব খণ্ডিত 
                এখন শুধু আমি 
           এখন নেই দুই
       এখন নিস্তব্ধতা
   এখন অখণ্ডতা
এখন শুধু তুমি

যত্তসব

যেন কয়েক বস্তা দুঃখ শুধু তোমারই ঘরে জমেছিল

যেন এক সমুদ্র সমস্যায় 
তোমার নৌকাই শুধু হাবুডুবু খেয়েছিল

যেন সব বিশ্বাসঘাতক ষড়যন্ত্র করে
তোমারই ঘরে সিঁধ কেটেছিল

অমন কতশত বস্তা, সমুদ্র, কাটা সিঁধ 
   যে অগুনতি আছে,
      কিচ্ছুটি জানো না তুমি

শূন্য করিয়া রাখ তোর বাঁশি

ভাগবত একটা কথা বলে বসলেন, দেখো, এই যে মাটি, এই যে মাটিকে শুকিয়ে তুমি নানা বাসন বানাও, কাউকে বলো থালা, কাউকে বলো ঘটি, কাউকে গ্লাস, আদতে তো সব মাটি, তাই তো? এখন যদি বলো মাটি সত্য না বাসনগুলো সত্য? আমি বলি কি, তুমি সব কিছুকে মাটি বলে খেলাটাকে মাটি করে দিও না, মাটি যে যে রূপ ধারণ করেছে, সেই সেই রূপে না হয় ডাকলে তাকে। সেই হোক বাস্তব। 

গ্যাসলাইট ভালোবাসা

আমি তোমায় আমার প্রাণঢালা ভালোবাসা দেব। 

তুমি আমায় 
তোমার -
ভালোলাগা-খারাপলাগা, স্বাধীনতাবোধ,
ইচ্ছা-অনিচ্ছা ভাবনা-বিচার-আত্মসম্মান-আত্মবিশ্বাস 

সব দিয়ে দাও।

কারণ?

নইলে


==
আশেপাশে কেউ থাকলে
    তোমায় না ভাবার চেষ্টা করি

নইলে কৈফিয়ত দিতে হয়
     অন্যমনস্কতার 


===
আমায় অনুভব করে বোলো
   অনুভব করলে কাকে,
      আমায়
          না নিজেকে?

লাস্ট পিরিয়ডটা হবে আসবে দাদা?

আজ খবরের কাগজ জুড়ে পড়লুম, B.1.617.2 নাকি বেজায় গায়ে পড়া, ভ্যাক্সিনের কোনো বাধা মানেনিকো, আর রুগীরে একদম তেনার দুয়ার অবধি নাকি নাকানিচোবানি খাওয়াতি পারে। তেদ্রোস এমনিতেই ত্রাসবাহক। তায় আবার বলছে এ নাকি ভীষণ চিন্তার কারণ। বলি হ্যাঁ গা, ভীষ্মের শরশয্যার কথা শাস্ত্রে পড়েছিলুম, টিভিতে দেখেছিলুম। একি আমাদের জগতজোড়া সেই দশায় নিয়ে যেতে চাইছে নাকি গা?

পদ্মপাতা

শঙ্করাচার্য লিখেছিলেন, জীবন পদ্মপাতায় জলের মত চঞ্চল। 

ব্যাসদেব লিখলেন, পদ্মপাতায় জলের মত নিরাসক্তভাবে বাঁচো। 

পদ্মপাতায় বৃষ্টির জল জমেছে। 
চাঁদের প্রতিচ্ছবি টলটল করছে। 
আমি কি মুখ ফিরিয়ে নেব?
   আমি কি অপেক্ষা করব জলটা গড়িয়ে পড়ার? 

"তখন পাতায় পাতায় বিন্দু বিন্দু ঝরে জল
শ্যামল বনান্তভূমি করে ছলোছল"।

বেজায় সত্যি গল্প

কি বলব তোমাদের! আমি সেদিন মাস্কটাস্ক পরে, বাজার করে ফিরছি, হঠাৎ স্কুলের বাইরে দিয়ে যাওয়ার সময় শুনি কি হট্টোগোল! এদিকে আমি তো জানি সব স্কুলটুল বন্ধ। তবে? হঠাৎ করে সব খুলে গেল নাকি? তোমরা বললে বিশ্বাস করবে না, একটু উঁকি দিয়ে তাকিয়ে তো আমার চক্ষুচড়কগাছ!