আজ খবরের কাগজ জুড়ে পড়লুম, B.1.617.2 নাকি বেজায় গায়ে পড়া, ভ্যাক্সিনের কোনো বাধা মানেনিকো, আর রুগীরে একদম তেনার দুয়ার অবধি নাকি নাকানিচোবানি খাওয়াতি পারে। তেদ্রোস এমনিতেই ত্রাসবাহক। তায় আবার বলছে এ নাকি ভীষণ চিন্তার কারণ। বলি হ্যাঁ গা, ভীষ্মের শরশয্যার কথা শাস্ত্রে পড়েছিলুম, টিভিতে দেখেছিলুম। একি আমাদের জগতজোড়া সেই দশায় নিয়ে যেতে চাইছে নাকি গা? মানে আমরা সব এমনিতেই গৃহবন্দী, সেকি খুব সুখের? তা তো নয়। তায় আবার তেদ্রোস দাদা এসব কিসব বলে, ভাল্লাগে না ছাই। তবে এ শরশয্যা ছাড়া আর কি হবে বলেন তো?
বলি জ্ঞান আমাদের মুক্ত করে ত্রাসে রাখে বলুন দিকি? এই ভাইরাস না তো পুরুষ, না তো নারী। না তো জীব, না তো জড়। বলি এত কিসের দেমাক তোদের রে? আমরা কি পাকা ধানে মই দিয়েছি তোদের বলদিকিনি। আমাদের একেবারে পথে বসিয়ে ছেড়ে দিলি রে ভাই আমার! আমারই শরীরে ঢুকে, আমারই শরীরে বাচ্চাকাচ্চা পেড়ে আমাকেই যমের দুয়ারে নিয়ে যাবি, বলি এটা কোনো কথা হল? মা বাপ কি তোদের বিন্দুমাত্র কৃতজ্ঞতাবোধ অবধি শেখায়নি? না হয় চীনে জন্মেছিস, ধম্মের ধার ধারিস না। তা বলে একটু দয়ামায়াটুকু রাখবি না? তবে কিমের পেটে জন্মালে কি করতিস বাপ আমার? পরকালে মুখ দেখাবি কি করে? ও তোরা তো আবার পরকালটাল মানিস না। সে একদিক থেকে ভালোই করিস। কিন্তু আমাদের কথা একটু তো ভাবতে হয় নাকি? এই যে আমরা কুম্ভমেলা করলাম। কত মানুষ সেই পুণ্যের জোরে তেনার দরজায় পৌঁছে গেল, এটা কি ভালো হল? মানে উনি একা মানুষ, এত বড় ব্রহ্মাণ্ড একা সামলাচ্ছেন সেই অনাদিকাল থেকে, সেইখানে এমন একটা এদিক সেদিকের অসাম্য গড়ে তুললে সে বেচারি যায় কোথায়? এদিকে তোরাই না সাম্যের নীতিতে বিশ্বাসী?
আসলে ব্যাপারটা কি জানেন দাদা, আজকাল কাউকে বিশ্বাস নেই। এই আজকেই পড়লাম, ফাইজারের ভ্যাক্সিন নিয়ে নাকি কয়েকজন জেরুজালেমীর হার্টের ব্যামো হয়েছে। এখন একে কোভিডের বেলেল্লাপনায় হার্টের অবস্থা এমনিতেই খারাপ, এরপর যদি ভ্যাক্সিন ঢুকে তার উপর কাঠি করে তবে ওই জালেমীগুলান যায় কোথায়? এমনিতেই ওরা প্যালেস্টাইনের গুষ্ঠিনাশ করতে কোভিডের বাপ হয়েছে, তার উপরে তাদের বুকের যদি এই অবস্থা করে, সামলায় কি করে বলেন দিকিনি? বলি সাহস বলো, ক্ষমতা বলো, নিষ্ঠুরতা বলো - এসব মাঝে মাঝে এক লাইনে কেমন দাঁড়িয়ে পড়ে না? তারপর সবাই মিলে কেমন সব্বাইকে উল্লু বানায়? একে মারে, তাকে ধরে। এ বলে সব্বাইকে ইসলামের রাষ্ট্র আইনে বাঁধব, সে বলে সব ইহুদীগুলোরে যমের দুয়ারে পাঠবে। এক্কেবারে কেলেঙ্কারিকর অবস্থা।
বাচ্চাগুলো অনাথ হচ্ছে, মানুষ বেরোজগার হচ্ছে, এদেশ ওদেশ ভ্যাক্সিন নিয়ে কোন্দল করছে, কারা আবার মাঝখান থেকে ডাক্তার পিটিয়ে দিচ্ছে, আবার কেউ কেউ এর মধ্যেই ধর্ষণও করে ফেলছে। বলি মানুষ যায় কোথায় বলেন। তার মধ্যে আবার কয়েকটা হাড় কাঁপানো, চাড় ওড়ানো, ভিটে ভাসানো ঝড়বৃষ্টি হয়ে যাচ্ছে। বলি জ্যোতিষীগুলানের লাইসেন্স কেড়ে নিয়ে জেলে ভরে দিলে হয় না? আরে বাপ তোরা থাকতে আমাদের টিকার উপর ভরসা ক্যান করতে হবে ক? ক্যান? একটা তাবিজ, কি মূল, কি পাথরের কথা বলা যেত না? না হয় আমরা গলায় ঝুলিয়েই হাঁটতাম। সে গুড়েবালি। ব্যাটাগুলো সব পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছে। এখন ভয় হয় যে ওদের ডেকে ডেকে কেন্দ্র না বলে, যাও কে কত নাম্বার পরীক্ষা দিলে পেত, হিসাব করে আনো গে। ব্যস, আর কি, সেই অতিজাগতিক গণনায় সবার ভবিষ্যৎ ঠিক হয়ে যেত। যত্তসব!
অগত্যা আমাদের উপায় কি? হাত ধুয়ে ধুয়ে হাতে ছ্যাদলা পড়ে গেল। মানুষের কাছ থেকে দূরে থেকে থেকে নিজেকে চিড়িয়াখানার জন্তু মনে হচ্ছে। মাস্ক পরে পরে মানুষের মুখের আদলটা কেমন তায় গুলিয়ে যাচ্ছে, মাস্কছাড়া মানুষ দেখলে চোখে এমন জ্বালা হচ্ছে যেন ন্যাংটো মানুষ দেখে ফেললাম। বলি আমাদের আর কি কি করতে হবে কেউ কি বলতে পারে? “জুড়াইতে চাই কোথায় জুড়াই, কোথা থেকে আসি, কোথা ভেসে যাই”... আর ভাসাভাসি। সেও কি আর দেখতে বাকি রইল গা? জলেই নাকি ভাসিয়ে দিল মানুষকে।
তবে এখন আমরা কি করব? শুনেছি নাকি থার্ড ওয়েভও আসবে। তার তো বোধন আগেভাগেই সবাই করে রাখছে দেখছি। সে ভালো। যুদ্ধে যখন যেতেই হবে তখন আগাম অস্ত্রশস্ত্র শাণিয়ে রাখা ভালো। কিন্তু এ যুদ্ধু কবে শেষ হবে গা? নতুন ভ্যারাইটিটারে মারার কোনো একটা উপায় বার হলেই নিশ্চয় তেদ্রোস দাদা জানাবেন। উনি বলেছেন উনি খেয়াল রাখছেন সে বেয়াদব কখন কোথায় যায়। সেই খেয়ালই উনি রাখুন না হয়। আর আমরা বারবার স্কুলের বাচ্চাদের মত জিজ্ঞাসা করে যাই, হ্যাঁরে আজ কি লাস্ট পিরিয়ডটা হবে? নাকি আমরা আর একটা ক্লাস করলেই ছুটি দেবে? লাস্ট পিরিয়ডটা কবে আসবে দাদা?