আন্তর্জাতিকবোধসম্পন্ন জাত
বাঙালী বরাবরই আন্তর্জাতিকবোধসম্পন্ন জাত। এ জানতে ওসব পুরোনো সেকেলে আঁতেল মার্কা নোবেল, অস্কার খুঁজতে হয় না। মোড়ে মোড়ে ইঞ্জিরি গানের জগঝম্প নেত্য আর গান বুঝিয়ে দিচ্ছে হাড়ে হাড়ে। খালি ভাবনা হচ্চে যখন ভোর হবে ক'জন সেই নতুন বছরের ভোর দেখার অবস্থায় সুস্থ থাকবেন, কিম্বা ক'জনকে থাকতে দেবেন...
কবি নও
যদি তুমি একটি ঘুমন্ত শহরের মধ্যরাতে
গভীর জঙ্গলে মধ্যরাতের পায়চারি শুনতে না পাও
তবে তুমি যেই হও
কবি নও
তবুও আমি আস্তিক
তবুও আমি আস্তিক
যদিও আত্মার অমরত্বে বিশ্বাস রাখি না
বিশ্বাস রাখি ভালোবাসায়
তবুও আমি আস্তিক
যদিও কোনো মানুষের অবতারত্বে বিশ্বাস রাখি না
বিশ্বাস রাখি মহত্বে
তবুও আমি আস্তিক
যদিও মুক্তি কিম্বা নির্বাণ - অর্থহীন আমার বোধে
বিশ্বাস রাখি সাতরঙে, সাতসুরে
তবুও আমি আস্তিক
ইচ্ছা
অনুভূতির ইচ্ছা জন্মায়। ভালোবাসার অনুভূতির এক ইচ্ছা, ঈর্ষার অনুভূতির আরেক ইচ্ছা। যখন "হাল ছেড়ে আজ বসে আছি আমি, ছুটি নে কাহারো পিছুতে... মন নাহি মোর কিছুতেই, নাই কিছুতে" - সে আরেক ইচ্ছা।
শঙ্কা
থর থর শিখা
ওত পেতে বসা
সর্বগ্রাসী অন্ধকার
বাতাসের
ফিসফিসানি
মেঘালয়
মেঘালয়, তোমার গুহাবাসী শ্রমিকেরা জানল না, এবারে ঠাণ্ডা অনেক বেশি পড়েছে
ওদের শরীরের থেকেও বেশি ঠাণ্ডা নয় যদিও
তবু মনে হয়,
একজনও যদি বেরিয়ে আসে প্রাণের উষ্ণতায়
লজ্জা পাবে কে, মেঘালয়?
রম্যা
ছাগলের দাম পাঁচ হাজার। বিক্রি হবে। হাটবার আজকে নয়। আগামীকাল। রম্যা কোনোবার ছাগল বিক্রীর আগেরদিন ঘুমায় না। অম্বল হয়। চোঁয়া ঢেকুর ওঠে। জোয়ান রাখা থাকে একটা পানের মশলার গোল, রঙচটা কৌটোয়। কৌটোটায় রম্যার শাশুড়ি সুপুরি রাখত। রম্যা ঢাকনা খুলে দেখল জোয়ান শেষ।
শুনেছি নাকি
শান্তই থাকো। ঝড়ে ঝোড়ো কাক হয়ে লাভ নেই বুঝলে। শুনেছি নাকি বালিঝড় থেকে বাঁচার জন্যেই উটের অমন লম্বা লম্বা পলক।
নীল সাদা
বকগুলো আকাশে উড়ছিল। আকাশের মা বারবার বারণ করছিল, উড়িস না, উড়িস না এখন, আমি এইমাত্র আকাশটায় নীলরঙ লেপেছি। তা কে কার কথা শোনে। সব বকগুলো ঝাঁক বেঁধে উড়তে শুরু করল। আকাশের কাঁচা নীলরঙ লাগল তাদের সারা গায়ে। তাদের ডানার দোলায় বিন্দু বিন্দু নীলরঙ এসে পড়তে শুরু করল মা
অরিগামি
...
The Keepers দেখছি
The Keepers দেখছি, নেটফ্লিক্সে। একটা মিশনারী স্কুলের প্রধান পুরুষ, যে একজন প্রিস্ট, বাচ্চা বাচ্চা মেয়েগুলোর উপর যৌন নির্যাতন চালাত। এই তথ্য জানার জন্য দুজনকে খুন হতে হয়, যাদের মধ্যে একজন নান। ১৯৬৯ এর বাল্টিমোরের ঘটনা। এখনও ফেসবুক পেজে সেই দুই নিহত মানুষদের প্রতি ন্যায়বিচারের দাবি জানিয়ে ফেসবুক পেজ চলছে।
শীতে এবার মৃত্যু বড় কাছাকাছি ঘোরাঘুরি করছে
...
খ্রীষ্টের উৎস
খ্রীষ্টের উৎস যতই প্রাচ্য হোক, খ্রীষ্ট আমাদের মানসে পাশ্চাত্যের সাদা চামড়ার ভগবান। ধনীর ভগবান। উন্নতশ্রেণীর মানুষের ভগবান। এক কালের শাসকের ভগবান। তাই খ্রীষ্টের প্রতি আনুগত্য, ঠিক "এক গালে চড় মারলে আরেক গাল বাড়িয়ে দাও" এর প্রতি আনুগত্য নয়। এ আনুগত্য পাশ্চাত্যের প্রথম বিশ্বের প্রতি আনুগত্য। কেক খাওয়া তার একটা প্রধান সাংকেতিক উদযাপন। কাল বেশ গ্রামের ভিতরে
রাখব কোথায়?
পরিযায়ী পাখির কবিতা,
না খাঁচার শিকলের সমঝোতা?
ছেলেটা ধীরে ধীরে বদলে গেল
...
সুখের কীট
...
এ বাস্তব
যে অশান্ত তার সুখ কই?
এ বাণী
কিন্তু যারা সুখে আছে, তারাই বা শান্তিতে থাকতে দিচ্ছে কই?
এ বাস্তব
আবার ঘরদোর সব গুছিয়ে ফেলেছি
...
৭ই পৌষ
আমিও এলাম
বহুদিন পর আজ অপ্রয়োজনীয় হওয়ার সাহস পেলাম
বোঁটা ছিঁড়ে মাটিতে পড়া শুকনো পাতাটা তুলে -
নিঃসঙ্কোচে বললাম,
আমিও এলাম
কাঙালের মত
অগোছালোভাবে ফেলে যাওয়া তোমার গায়ের চাদরটা
উপুড় করে রাখা ইংরাজি উপন্যাসের চিহ্নিত পাতা
খাটের চাদরে এখনও তোমার তাড়াহুড়া করে উঠে যাওয়া
অবিন্যস্ত ভাঁজ
এরাও তুমি
তুমি জানো না
এইটুকুতেই মুঠো ভরে নিই
কাঙালের মত
দোলন
দোলনায় উঠলে কেউ মাটিতে পা পাই না
বারবার পিছনে ফিরে তাকাই,
যদি কেউ দুলিয়ে দিয়ে যায়
একজন দুলিয়ে দিয়ে গেলে
পরের জনের না আসার ভয়
প্রশ্রয়
দুর্বল ভঙ্গুর মন
তায় আলাদিনের দৈত্যের দাপট
ছিন্নভিন্ন মেঘ চিন্তারা
শিশির ভেজা সকালে
সস্তা সাদা কেডস পরে বলে
"চল বেড়িয়ে আসি, বেশিদূর যাব না"
লাশ জমছে স্তূপাকার
ট্রেন ছেড়েছে নাকি সময় মত। স্টেশানে থিক থিক করছে যাত্রী। কিন্তু কোন প্লাটফর্মে আসবে কেউ বলতে পারছে না। কোনো চূড়ান্ত ঘোষণা নেই। গুজব উঠছে। কানাকানি চলছে। কেউ বলছে ১২তে দেবে, কেউ বলছে ৮ এ, কেউ বলছে ৩৩ এ। শোনা যাচ্ছে ট্রেনের গন্তব্য নিয়েও নাকি মত
অনবরত
অনবরত আগুনকে দু'ফালা করে রাস্তা কাটছি
অনবরত সমুদ্রের মাঝখানে দাঁড়িয়ে বলছি, তফাত যাও, আমি হাঁটব
অনবরত এক একটা মৃত্যুকে কোলে নিয়ে নিয়ে
চলার ভারসাম্য রাখার চেষ্টায় আছি
গন্ধ
এক হাতে সাইকেলের হ্যাণ্ডল, আরেক হাতে দুধের ক্যান, ঢাকনা শক্ত করে আঁটা, সন্ধ্যাবেলা রোজ রেললাইনের ধার দিয়ে দিয়ে, এবড়োখেবড়ো রাস্তায়, সাবধানে সাইকেলে প্যাডেল করতে করতে বাড়ির দিকে এগোন, শীতকালে মাফলার-টুপি-সোয়েটার, গরমকালে ফতুয়া, বর্ষাকালে বর্ষাতি গায়ে।
অপেক্ষা
একজন মানুষ অনেকক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে আছে। যতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলে পা ব্যথা হওয়ার সম্ভাবনা তার থেকেও বেশিক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে আছে। মানুষটার মাথার উপর কৃষ্ণচূড়া ফুলের ঝাঁকি গাছ ভর্তি, কি সুন্দর করে একটা পাখি ডাকছে, মানুষটা ভ্রুক্ষেপ করছে না। হাতের সিগারেটটাকে জোরসে আঁকড়ে নি
মা গুরুপ্রাণদায়িণী
গুরুদেবের সকাল থেকে উপোস। শিষ্যরাও কিছু দাঁতে কাটেনি সকাল থেকে। বেড়ালগুলো, কুকুরগুলো না খেয়ে। মায় কাকগুলো অবধি না খাওয়া।
গ্রামে আর কোনো বিপদ নেই
টুল আনছি, আয়
ঝিরঝিরে বৃষ্টি পড়ছে। শীতটা জাঁকিয়ে। আলোটা অফ করে বাথরুমের লাইটটা অন রেখেই বিছানায় এলাম। নতুন জায়গা। একটু অস্বস্তি হচ্ছেই। কৃষ্ণনগরের এই দিকটা প্রত্যন্ত গ্রাম। চারদিক বেশ ফাঁকা ফাঁকা। মাসিদের নতুন বাড়ি এটা। ওরা দুদিন পর আসবে। পুরী গেছে।
আমার সান্টা
ছোটোবেলায় আমি সান্টার গল্প শুনেছি। কিন্তু সে গল্প বলেই শুনেছি। যেমন প্রাণভোমরা রাক্ষসীর বুকে থাকে তেমন। যেমন লালকমল, নীলকমলের জন্য কোনোদিন অপেক্ষায় থাকিনি, তেমনই সান্টার জন্য কোনোদিন অপেক্ষায় থাকিনি। আজ অনেক বাচ্চাকে দেখি তারা রাতের ঘুমে, নির্দিষ্ট দিনে সান্টা
উনি বললেন, এই ঘড়িটা দুবাই থেকে আনানো
...
কে ওটা রে?
বাড়ির সবাই কাজে বেরিয়ে গেলে মেয়েটা বড় এক গ্লাস চা নিয়ে বসে। সম্পূর্ণ একা এই সময়টায়। ঘড়ির আওয়াজ, ফ্যানের আওয়াজ, ফ্রিজের আওয়াজ, আর মাঝে মাঝে তার দীর্ঘশ্বাসের শব্দ, কাশির শব্দ। মেয়েটা অপেক্ষা করে। কেউ আসুক সে চায় না। কিন্তু অপেক্ষা করতে ভালো লাগে। স্পষ্ট কারোর মু
মানের হ্যাপা
একটা সময় মন পাকতে শুরু করে সংসারে। পাকা রঙ যা ধরে সে শুধু যে তার নিজের ব্যক্তিত্ব মিশে, তা ঠিক নয়, চারিপাশের মানুষের অবদানই বেশি।
বাজার
...
সকালের প্রথম রোদ
সকালের প্রথম রোদ এসে
সবুজ পাতাকে জড়িয়ে ধরল
বলল, আমি এলাম
সবুজ পাতা বলল, সারারাত যে অপেক্ষায় ছিলাম
বিকালের যাই যাই করা রোদ, ম্লান মুখে
সবুজ পাতাকে ছুঁয়ে বলল, এলাম
সবুজ পাতা বলল, সারারাত জেনো অপেক্ষায় রইলাম
আব্বাজান
একটা গোলাপী শাড়ি। মাথায় দুটো ক্লিপ। অনেক দিন হেলায় পড়ে থাকা, ঝড়ে ভাঙা গাছের ডালের মত শরীর। জোর বলতে --- গলা আর চোখ। বিরক্তিকর ফ্যাসফ্যাসে গলা, দৃষ্টি তীক্ষ্ণ জ্বালা ধরানো দৃষ্টি।
থামবে কি?
তানপুরাটার শব্দ থেমে গেল
একটা মৌমাছি গুনগুন করতে করতে
তানপুরার খোলের উপর বসল
তখন সব আলো নিভে গেছে
ঝাড়বাতিটা মাকড়সার মত দেওয়ালে ঝুলে
বোবার মত
পেট ঠুসে খাওয়ার পর
পেট ঠুসে খাওয়ার পর শরীরটা আইঢাই করছে। অনেকক্ষণ এ ঘর সে ঘর বারান্দা উঠান পায়চারি করার পরও না উঠছে ঢেকুর আর না তো....পেটটা দম মেরে আছে।
একটা কাজের কথা
একটা কাজের কথা। একবার ভেবে দেখবেন তো, যতগুলো অনুতাপ, অপরাধীভাব কিম্বা দোষীভাব নিজের ভিতরে, নিজের অজান্তে পুষে রেখেছেন, তার কতগুলোর সত্যিই কোনো মানে হয়?
বন্ধুহস্ত
দক্ষিণস্কন্ধ মোর পাইল আঘাত
আপন কক্ষচ্যুত হইয়া
চিকিৎসক রুধিলেন দক্ষিণের কাজ
বেড়িলেন বিচলন রোধক দিয়া
বাজারের থলে
লোকটা মাসকাবারি বাজারের থলেটার নীচের দিকটা দিল কেটে। এদিকে হাত দিলে ওদিক থেকে হাত যাচ্ছে বেরিয়ে।
সবাই হো হো করে হাসল।
এত সাজসজ্জা
এত সাজসজ্জা
এত নির্ভুল উচ্চারণ
এত নিখুঁত পদক্ষেপ
হাসি পায়
কবরের উপর এত নক্সা কেন?
মেঘ ভাঙা বৃষ্টি
সারা গায়ে কাদা ছোপ ছোপ, ভূষণ এসে দাওয়ায় বসল। ভূষণ নাপিতের কাজ করত। এখন চলে না। গ্রামে নতুন সাজসরঞ্জামের সেলুন খুলেছে, আর না হোক চারটে। এখন আর রাস্তার ধারে বসে কে চুল কাটাবে। তার ঠাকুরদার পিঁড়ে, কাঁচি, কলপের বাটি, ব্রাশ --- সব খাটের নীচে ট্রাঙ্কে জমা।
নাম রাখল - পুষ্প
বকেয়া
জীবনের কিছুটা বকেয়া
দুর্যোগের কাছে ছিল
জানতাম না।
জানলাম সেদিন
যেদিন ঝড় বকেয়া হিসাবের খাতা নিয়ে এলো
বলল, সই করো
নকল সই করলাম
ঝড় হেসে বলল,
"আবার আসব"
জেটি
জেটিকে যদি জিজ্ঞেস করি, "জেটি তুমি কার?" জেটি কি উত্তর দেবে, জানি না।
খড়কুটো
নীড়ের খড়কুটো
তা জোগাড় করতে
হিমালয় যেতে হয় না, সত্য
প্রশান্ত মহাসাগর কিম্বা থর মরভূমিতেও না, সত্য।
তবু, এত দরকারি, মূল্যবানের ভিড়ে
কয়েকটা খড়কুটো জোগাড় করাও
খুব সহজ কাজ কি গো?
মানুষ শুধু শরীরে
মানুষ শুধু শরীরে আহত হয় না
দেশ শুধু আহ্নিকগতিতে অন্ধকার হয় না
মৃত মানুষে শুধু কবর শ্মশান হয় না
সময়ের কয়েকটা ছেঁড়া পাতা
অকারণ হারিয়ে যায় না
একটা দেশ আর একটা মশা
যারা শুনতে পায়নি
‘ঈর্ষারা সুরক্ষিত হোক’
মন্দিরের দরজায় দাঁড়িয়ে
এমন একটা প্রার্থনা করার সময়
লোকটা হঠাৎ করে কেঁদে উঠেছিল