Skip to main content

        এক হাতে সাইকেলের হ্যাণ্ডল, আরেক হাতে দুধের ক্যান, ঢাকনা শক্ত করে আঁটা, সন্ধ্যাবেলা রোজ রেললাইনের ধার দিয়ে দিয়ে, এবড়োখেবড়ো রাস্তায়, সাবধানে সাইকেলে প্যাডেল করতে করতে বাড়ির দিকে এগোন, শীতকালে মাফলার-টুপি-সোয়েটার, গরমকালে ফতুয়া, বর্ষাকালে বর্ষাতি গায়ে। 
        পাশ দিয়ে ট্রেন চলে যায়। তাকান না। কুয়াশায় রেলের ফাঁকা স্টেশানে শেডের তলায় একটা কুকুর গুটিয়ে শুয়ে থাকে, দেখেন না, এমনকি কুয়াশায় জড়িয়ে সিগন্যালের সবুজ আলোটা কি অদ্ভুত রোমাঞ্চকর আর লাল আলোটা কি ভয়ংকর দেখায়, জানেন না। বর্ষায় কতরকমের জংলী ফুল ফোটে, বৃষ্টিভেজা গন্ধের কিছুতে গা গুলায়, কিছু গন্ধ মিষ্টি লাগে, জানেন না, আচ্ছা গা তো গুলাতে পারে! নাকি বোঝেন না। সেবার দোলের আগের দিন রেলপুকুরে ডুবে একটা বেপাড়ার ছেলে মারা গেল, বডি তুলে পাড়ে রাখা হল, পুলিশ, এ-ও-সে গিজগিজ করছে চারদিকে, উনি ভ্রুক্ষেপও করলেন না। সাইকেল থেকে নেমে পাশ কাটিয়ে সবাইকে, দুধের ক্যানটা সাবধানে ধরে এগিয়ে গেলেন। 
        একদিন সব গোলমাল হল। একটা নেড়ি কুকুর হঠাৎ করেই সাইকেলের সামনে এসে থেমে গেল। উনি ব্যালেন্স রাখতে না পেরে পড়লেন দড়াম করে। ক্যান পড়ল ছিটকে, সাইকেলের চাকা দুটো শূন্যে খানিক ঘুরে থেমে গেল। পাশ দিয়ে শান্তিপুর লোকাল ছুটছে গাঁ গাঁ করে৷ ট্রেন ভর্তি অফিস ফেরত লোক। তারা কেউ জানল না, এই প্রথম একজন মানুষ দুধ ভর্তি ক্যান নিয়ে রাস্তায় পড়ে গেল - যা বিগত ন বছর সে পড়েনি। 
        লোকে দৌড়ে এলো। তাকে তুলতে হবে। কিন্তু লোকে দৌড়ালো ক্যানের দিকে। দুধ কই? এ তো মদ! কেউ বলল বাংলা, কেউ বলল ফরাসী, কেউ বলল জার্মানি, কেউ বলল রাশিয়ার। কেউ আঙুলে চেটে বলল, ভেজাল, কেউ জিভে চেটে বলল, খাঁটি। লোকটাকে কেউ তুলল না। লোকটা নিজেই উঠে দাঁড়ালো। সাইকেলটা দাঁড় করালো। ক্যানটা তুলে ঢাকাটা চেপে বসালো। ক্যারিয়ারে আটকালো। কাউকে কিচ্ছু না বলে চলে গেল। কেউ বলল, মাতাল শালা। কেউ বলল, ভণ্ড। কেউ বলল, টালখোর। তখন পাশ দিয়ে কল্যাণী লোকাল যাচ্ছে। ট্রেন ভর্তি লোক জানল না এখানে একটা বিচারসভা বসেছে, রাস্তায় মদ গড়াচ্ছে।
        একটা দারুণ মিষ্টি বুনোফুলের গন্ধ তখন মদের গন্ধ ছাপিয়ে বইছে। কেউ খেয়াল করল না।